‘মুস্তাফিজের কথাই শুনতে হয়েছে’

দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনের নির্ধারিত সময় তখন পেরিয়ে গেছে। কিন্তু একজনকে নিয়ে বুঝি তখনও টানাপোড়েন। বুধবার দুপুরে শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে অনুশীলন করছিল দল। পাশেই ড্রেসিং রুমের সামনে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলছিলেন প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন ও আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার। তিনজনের আলোচনার বিষয়বস্তু অনুমান করে নিতে সমস্যা হয় না। একটু পর জানা গেল সিদ্ধান্ত। ভারত সফরে নেই মুস্তাফিজ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Feb 2017, 12:57 PM
Updated : 1 Feb 2017, 03:26 PM

খুব বড় বিস্ময় হয়ে অবশ্য আসেনি ঘোষণাটা। বরং এ রকমই ছিল অনুমিত। বলা যায় নিউ জিল্যান্ড সফরেরই ধারাবাহিকতা। পরীক্ষায় কোনো সমস্যা ধরা পড়ছে না। ফিজিও-ট্রেনার বলছেন কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু মুস্তাফিজের নিজের মনে অস্বস্তি। শরীরেও নাকি ব্যথা।

নিউ জিল্যান্ডে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর আর মাঠে নামেননি বাঁহাতি পেসার। টেস্ট সিরিজের আগে চলেও আসতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তার ব্যথা ও মানসিক অস্বস্তি দূর করতেই রেখে দেওয়া হয়েছিল দলের সঙ্গে। লাভ তাতে খুব একটা হয়নি। মুস্তাফিজ আছেন আগের অবস্থানেই।

অন্য কোনো ক্রিকেটার হলে বাস্তবতা অন্যরকম হতো, ধরেই নেওয়া যায়। নিজের মত প্রবলভাবে প্রকাশ করা কিংবা সেই মতকে গুরুত্ব দিয়ে নেওয়া, বাংলাদেশের খুব বেশি ক্রিকেটারের কপালে সেটি জুটবে না। মুস্তাফিজের ব্যাপারটি পুরোপুরি আলাদা।

স্পর্শকাতর প্রসঙ্গ বলে প্রধান নির্বাচকের ব্যাখ্যা অনুমিতভাবেই হলো খুব সাবধানী, “ফিজিও বলেছেন ফিজিক্যালি ফিট। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেটে লম্বা সময় ধরে বোলিং করা…ওই জিনিসটা এখনও ওর আসেনি। স্কিল ফিটনেসে সমস্যা আছে। টেস্টে ম্যাচে অনেক বেশি বল করতে হয়। ওই ধরনের ফিটনেস এখনও ও রিকভারি করেনি। আরও সময় লাগবে।”

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান নির্বাচকের পাশেই ছিলেন চন্দিকা হাথুরুসিংহে। বাংলাদেশ কোচও অন্যতম নির্বাচক। মুস্তাফিজকে নিয়ে অসহায় শোনাল তার কণ্ঠও।

“কিছু করার নেই। কারণ ওর বড় একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। ফিরতে সময় লাগেই। চোটের পর ফেরার প্রক্রিয়াতেই আছে সে। নিউ জিল্যান্ডে সে ১২৭-১২৮ কিমি গতিতে বল করেছে। আগে ১৪০ করত। পুরোপুরি ফিট হতে সময় লাগবে। আমাদের পরিকল্পনায় আছে শ্রীলঙ্কায় পুরো ফিট হিসেবে ওকে পাওয়া।”

কিন্তু মুস্তাফিজকে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত কি সবাই মিলেই নেওয়া নাকি তিনি নিজে চাইছেন না বলেই? সরাসরি না বললেও কোচের কথায় অনেকটাই উঠে এলো বাস্তবতা। দল নির্বাচনে প্রাধান্য পেয়েছে মুস্তাফিজের নিজের চাওয়াই।

“এটা খুব স্বতস্ফূর্ত ছিল না। মেডিকেল দিক থেকে আমরা সব ছাড়পত্রই পেয়েছি ওকে নিয়ে। তবে মাঠে চাপের মধ্যে খেলা এবং নিজের স্কিল দেখানো পুরো অন্য ব্যাপার। ক্রিকেটার নিজে কেমন অনুভব করছে, সেটাকেই বেশি গুরুত্ব দিতে হয়েছে আমাদের। কারণ মেডিক্যালি আমরা কিছু পাইনি। ওর কথাই তাই শুনতে হয়েছে।”

“যে কোনো খেলোয়াড়েরই বড় একটা ইনজুরির পর একটু অনীহা থাকে, সেটা যে ধরণের ইনজুরিই হোক না কেন… যদি কেউ পা ভেঙে ফেলে, তার পরও মনে হয় সুস্থ হয়ে হাঁটতে যে আরেকটু বেশি সময় নেই। বোলিং অন্য একটি স্কিলের ব্যাপার। ওকে আরও বেশি সময় দিতে হবে আমাদের।”

চোট কাটিয়ে নিউ জিল্যান্ড সফরে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটি খেলেছিলেন মুস্তাফিজ। সেটিও দেড় মাস আগে। এখনও তাহলে কেন পুরো ফিট নন? সেটির উত্তর নেই। ‘আরও সময় দিতে হবে’, সবার কণ্ঠে এই কথাই। তবে তার মনোভাব নিয়ে সবার দুশ্চিন্তাও স্পষ্ট। তাকে ফেরানোর পথরেখাও খানিকটা জানালেন প্রধান নির্বাচক।

“মুস্তাফিজ কিন্তু অনুশীলনের মধ্যে বোলিং করছে। চার ওভার, পাঁচ ওভার …. গড়ে কত স্পিডে বোলিং করছে সেগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে আমরা কাজ করছি।”

“ওকে নিয়ে আমরা যে পরিকল্পনা করছি, সামনের বিসিএলে ওকে যে কোনো এক রাউন্ডে খেলাব। অনেক দিন ধরে খেলার বাইরে। সে যদি বড় দৈর্ঘ্যের ম্যাচে না খেলে, তাহলে টেস্ট ক্রিকেটে গিয়েই পরীক্ষা করা যায় না। ও তো আমাদের সম্পদ। ওকে আমাদের আস্তে আস্তে সুস্থ করতে হবে। সামনে অনেকগুলো ম্যাচও আছে। আমার বিশ্বাস খুব তাড়াতাড়ি সে সেরে উঠবে।”