নাঈমের সেঞ্চুরি, সাব্বিরের ফিফটির পর মুকিদুলের দারুণ বোলিং

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলকে হারিয়ে আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 August 2022, 03:52 AM
Updated : 19 August 2022, 03:52 AM

সেই একই মাঠে খেলা, তবে উইকেটের আচরণে পার্থক্য অনেকটাই। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের পারফরম্যান্সও তাই বদলে গেল। ওপেনিংয়ে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। মিডল অর্ডারে সময়ের দাবি মেটানো ফিফটি করলেন সাব্বির রহমান। পরে মুকিদুল ইসলাম জ্বলে উঠলেন পুরনো বলে, অন্য বোলাররাও রাখলেন অবদান। আগের ম্যাচে ৮০ রানে গুটিয়ে যাওয়া দল সিরিজে ফিরল দারুণ এক জয়ে।

সেন্ট লুসিয়ায় আনঅফিসিয়াল ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দলকে ৪৪ রানে হারিয়ে সমতায় ফিরল বাংলাদেশ ‘এ’ দল।

ড্যারেন স্যামি স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭৭ রান তোলে বাংলাদেশ। রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা দারুণ হলেও মাঝে পথ হারিয়ে শেষ পর্যন্ত তারা যেতে পারে ৯ উইকেটে ২৩৩ পর্যন্ত।

‘এ’ দলের ম্যাচে অবশ্য দলের জয়-পরাজয়ের চেয়ে ব্যক্তিগত পারফরম্যান্সই মূল ব্যাপার। জাতীয় দল থেকে বাদ পড়া কেউ কিংবা উঠতি কারও বা ঘরোয়া ক্রিকেটে পারফর্ম করা কোনো ক্রিকেটারের নিজেকে মেলে ধরা ও দাবি জানানোর মঞ্চ এটি। সেদিক থেকে এই ম্যাচকে কাজে লাগাতে পেরেছেন নাঈম, সাব্বির ও মুকিদুল।

ছন্দে থাকলে নাঈম যেমন খেলেন, এই ম্যাচে ছিলেন সেটির চূড়ায়। দারুণ সব স্ট্রোকের ছটায় বাঁহাতি ওপেনার করেন ১৪ চার ও ১ ছক্কায় ১১৬ বলে ১০৩। সাব্বিরের কাছে সাধারণত যে দাবি থাকে, সেটা তিনি মেটান ৫৮ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলে। এশিয়া কাপের বাংলাদেশ স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া ব্যাটসম্যান এ দিন বেশ পরিণত ব্যাটিং করেন।

বল হাতে নতুন বলে উইকেট না পেলেও তরুণ পেসার মুকিদুল পরে পুষিয়ে দেন মাঝের সময়টায় ক্যারিবিয়ানদের ভুগিয়ে। আগের ম্যাচে দুই উইকেটের পর এই ম্যাচে তার শিকার তিন উইকেট।

আগের ম্যাচের মতোই টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামে বাংলাদেশ ‘এ।’ উইকেটে এ দিন আগের দিনের মতো গতি ও বাউন্স ছিল না। এবার তাই ক্যারিবিয়ান পেসারদের শর্ট বলে ভুগতে হয়নি বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের। বরং ধারহীন শর্ট বলগুলি কাজে লাগিয়ে রান তোলেন নাঈম।

দলের শুরুটা যদিও খুব ভালো হয়নি। সৌম্য সরকার বিদায় নেন ৬ রানেই। শটটি ছিল ভীষণ বাজে। শার্মন লুইসের বেশ বাইরের ডেলিভারিতে জায়গায় দাঁড়িয়ে আলসে শটে বল টেনে আনেন তিনি স্টাম্পে। তার পা নড়েনি একটুও।

সেই ধাক্কা সামাল দিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৭ রানের জুটি গড়েন নাঈম ও সাইফ হাসান। তৃতীয় উইকেটে মিঠুনের সঙ্গে নাঈমের জুটি ৯৩ রানের। দুই জুটিতেই মূল ভুমিকায় ছিলেন নাঈম, তার সঙ্গীরা কেবল সঙ্গ দিয়ে যান।

সাইফ ও মিঠুন আউট হন থিতু হওয়ার পর, দুজনই অনেকটা নিজেদের ভুলে। অফ স্পিনার ব্রায়ান চার্লসের ফ্লাইটেড বল অন সাইডে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করে বোল্ড হন সাইফ (২৩ বলে ১৯)। চার্লসের বলেই সুইপ খেলতে গিয়ে এলবিডব্লিউ মিঠুন (৪৮ বলে ২৮)।

নাঈমও অবশ্য একবার বেঁচে যান ক্যাচ দিয়ে। ৪২ রানে পয়েন্টে তার ক্যাচ ছাড়েন জাস্টিন গ্রিভস। সেটির ফায়দা তুলে নিয়ে তিনি ফিফটি করেন ৫৩ বলে। একটি পরই চার্লসের বলে স্লগ সুইপে ছক্কায় বল আছড়ে ফেলেন স্টেডিয়ামের বাইরে।

ভালো ব্যাটিং উইকেটেও অবশ্য এক-দুই রান নেওয়ায় একটু ঘাটতি তার ছিল। তবে বাউন্ডারি মেরে তা পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে নিজের ষষ্ঠ সেঞ্চুরিতে পা রাখেন ১১২ বলে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি এটি।

সেঞ্চুরি ছুঁয়ে তিনি উদযাপন করেন মাথার ওপর ব্যাট ঘুরিয়ে। একটু পরই অবশ্য আউট হয়ে যান তিনি অ্যান্ডারন ফিলিপের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে সহজ ক্যাচ দিয়ে।

পঞ্চম উইকেটে সাব্বির ও শাহাদাত হোসেন দিপু যোগ করেন ৬৯ রান। মাহমুদুল হাসান জয়ের বদলে এই ম্যাচে সুযোগ পাওয়া শাহাদাত ৩৩ বলে ২৪ করে বোল্ড হন রান বাড়ানোর তাড়ায়। তবে সাব্বির দ্রুত রান তোলার কাজটি করতে পারেন সফলভাবে।

শুরুতে এ দিন খুব একটা ঝুঁকি নেননি সাব্বির। এক-দুই করে রান বাড়ানোর চেষ্টা করেন। আলগা বল পেলে কাজে লাগান বাউন্ডারি মেরে। পরে থিতু হয়ে বাড়ান রানের গতি। ৬ চার ও ১ ছক্কায় তার ৬২ রানের ইনিংস শেষ হয় শেষ ওভারে। দল ততক্ষণে পেয়ে যায় ভালো পুঁজি।

রান তাড়ায় ক্যারিবিয়ানদের শুরুটা হয় দুর্দান্ত। জশুয়া দা সিলভা ও তেজনারাইন চন্দরপল সাবলিল ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন ২০ ওভার পর্যন্ত। ৯৪ রানের জুটির পর দুজনকই বিদায় করেন পেসার রেজাউর রহমান রাজা।

৬০ বলে ৩৮ রান করে আউট হন চন্দরপল, বাঁহাতি ব্যাটসম্যান একটি শর্ট বল পুল করতে গিয়ে টেনে আনেন স্টাম্পে।

জশুয়া খেলছিলেন দারুণ। তবে রাজার একটি স্লোয়ার তিনি খেলতে পারেননি ঠিকমতো, উইকেটের পেছনে ভালো ক্যাচ নেন কিপার জাকের আলি অনিক। ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক অবশ্য আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না, ইশারায় দেখাচ্ছিলেন যে বল ব্যাটে লাগেনি।

এরপর তিনে নামা টেডি বিশপ কিছুক্ষণ টেনে নেন দলকে। তবে আরেকপাশে সঙ্গী পাননি। বিশপ নিজেও বড় ইনিংস খেলতে পারেননি। মুকিদুলের গতিময় বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে তিনি ৩১ রানে আউট হন সহজ ক্যাচ দিয়ে।

এরপর নাঈমের সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন গ্রিভস। মুকিদুলের গতিতে বোল্ড হন টেভিন ইমলাক। সৈয়দ খালেহ আহমেদের স্কিড করা বল উড়িয়ে দেয় শামার স্প্রিঙ্গারের বেলস। আলিক আথানেজ আউট হন বাঁহাতি স্পিনার রকিবুল হাসানকে সুইপ খেলার চেষ্টায়।

২০ রানের মধ্যে ৫ উইকেট হারিয়ে লড়াই থেকে ছিটকে পড়ে ক্যারিবিয়ানরা। পরে ব্রায়ান চার্লসের অপরাজিত ৩২ ও লোয়ার অর্ডারদের লড়াইয়ে কিছুটা কমে ব্যবধান।

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচটি শনিবার, একই মাঠে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ‘এ’ দল : ৫০ ওভারে ২৭৭/৬ (নাঈম শেখ ১০৩, সৌম্য ৬, সাইফ ১৯, মিঠুন ২৮, শাহাদাত ২৪, সাব্বির ৬২, জাকের ১৮*; রাজা ০*; ফিলিপ ১০-১-৪৫-২, লুইস ৮-০-৫০-০, গ্রিভস ৬-০-৩৪-৪, ম্যাকসুইন ৭-০-৪৬-০, চার্লস ১০-১-৪৫-২, স্প্রিঙ্গার ৯-০-৫৪-০)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ ‘এ’ দল: ৫০ ওভারে ২৩৩/৯ (চন্দরপল ৩৮, জশুয়া ৬৮, বিশপ ৩১, গ্রিভস ১৩, ইমলাক ২, আথানেজ ৭, স্প্রিঙ্গার ০, চার্লস ৩২*, ফিলিপ ১৫, ম্যাকসুইন ১০, লুইস ৫*; মুকিদুল ৯-০-৩২-৩, খালেদ ৮-০-৫১-১, সাইফ ৮-০-২৯-০, রকিবুল ১০-০-৪৪-১, রাজা ১০-০-৪৪-২, সৌম্য ৫-০-৩০-০)।

ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ ৪৪ রানে জয়ী।

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা।