টানা নবম পরাজয়ে প্রথম দল হিসেবে প্লে-অফের দৌড় থেকে ছিটকে গেল দুর্দান্ত ঢাকা।
Published : 14 Feb 2024, 04:24 PM
ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ছক্কা মারলেন মোহাম্মদ নাঈম শেখ। পরের বলে বাউন্ডারি। দুর্দান্ত ঢাকার জয়ের সম্ভাবনা দেখা গেল ওই পর্যন্তই। রান তাড়ায় এরপর শুধুই পিছিয়ে পড়ে তারা। অ্যালেক্স রস লড়াই করলেও তামিম ইকবালের ফিফটির পর দারুণ বোলিংয়ে সহজ জয় পেল ফরচুন বরিশাল।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে ঢাকাকে ২৭ রানে হারাল বরিশাল। ১৮ রান তাড়ায় ৮ উইকেট হারিয়ে ১৫৯ রান করে ঢাকা। জয় দিয়ে আসর শুরু করা দলটি এ নিয়ে হারল টানা নয় ম্যাচ।
আগের ম্যাচে টানা পরাজয়ের বিব্রতকর রেকর্ড গড়া দলটি এবার প্রথম দল হিসেবে ছিটকে গেল প্লে-অফের দৌড় থেকে। নয় ম্যাচে পঞ্চম জয়ে এক ধাপ এগিয়ে তিনে উঠল বরিশাল।
আগের ম্যাচগুলোতে ভালো শুরুর পরও পঞ্চাশ করতে ব্যর্থ হওয়া তামিম আক্ষেপ মেটান নিজ শহরে খেলা প্রথম ম্যাচে। ক্যারিয়ারের ৪৭তম ফিফটি করে তিনি খেলেন ৭১ রানের ইনিংস। ৪৫ বলে ৭ চারের সঙ্গে ৪টি ছক্কা মারেন বরিশাল অধিনায়ক।
এই ইনিংসে মারা প্রথম ছক্কায় বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে বিপিএলে একশ ছক্কা পূর্ণ করেন তামিম। সব মিলিয়ে তার আগে এই কীর্তি আছে শুধু ক্রিস গেইলের, ১৩৭ ছক্কা। মাইলফলক ছোঁয়ার দিন ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জেতেন তামিম।
চোট কাটিয়ে একাদশে ফিরলেও মোসাদ্দেক হোসেনকে অধিনায়কত্ব দেয়নি ঢাকা। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক তাসকিন আহমেদই নেতৃত্ব দেন দলকে।
টস জিতে ব্যাট করতে নেমে সাবধানী শুরু করেন তামিম ও আহমেদ শেহজাদ। প্রথম তিন ওভারে স্কোরবোর্ড জমা হয় ১৩ রান। চতুর্থ ওভারে শরিফুল ইসলামের বলে দুটি চার মারেন শেহজাদ।
পরের ওভারে আরাফাত সানির ওপর ঝড় বইয়ে দেন তামিম। দুই বাউন্ডারি মেরে বাঁহাতি স্পিনারের ওভার শুরুর পর দুটি ছক্কা ওড়ান অভিজ্ঞ ওপেনার। পরে তাসকিনকে জোড়া বাউন্ডারি মারেন শেহজাদ। পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ পেরিয়ে যায় বরিশাল।
আরেক বাঁহাতি স্পিনার শন উইলিয়ামসন আক্রমণে এলে তাকেও ছক্কা-চার মারেন তামিম।
নবম ওভারে ৭৬ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন আলাউদ্দিন বাবু। বড় শটের চেষ্টায় ডিপ মিড উইকেট সীমানার অনেক ভেতরে ধরা পড়েন ২২ বলে ২৪ রান করা শেহজাদ।
আলাউদ্দিনের পরের ওভারে চলতি আসরে নিজের প্রথম ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। একই ওভারে দারুণ পুল শটে ডিপ স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন সৌম্য সরকার। পরের বলে বাউন্ডারি মারেন তিন নম্বরে নামা বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
পঞ্চাশ ছুঁয়ে একই ছন্দে এগোতে থাকেন তামিম। এসএম মেহেরব হোসেনের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে লং অফ দিয়ে মারেন বিশাল ছক্কা। পরের বলে বোলারের পাশ দিয়ে মারেন বাউন্ডারি।
তামিমকেও থামান আলাউদ্দিন। স্লোয়ার ডেলিভারি জায়গায় দাঁড়িয়ে তুলে মারেন বাঁহাতি ওপেনার। কিন্তু দূরত্ব পাননি। ধরা পড়ে যান লং অফ সীমানায় থাকা সাইফ হাসানের হাতে।
টিকতে পারেননি সৌম্য, মাহমুদউল্লাহ, মুশফিকুর রহিমরা। আলাউদ্দিনের তৃতীয় শিকার হয়ে ফেরেন মাহমুদউল্লাহ। সৌম্যকে থামান শরিফুল। পরে একই ওভারে মুশফিক ও মেহেদী হাসান মিরাজের উইকেট নেন তাসকিন।
শেষ ওভারে শরিফুলের ওপর ঝড় বইয়ে দেন মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দুটি করে চার-ছক্কায় ওভার থেকে আসে ২৩ রান। বরিশালের স্কোর ছাড়িয়ে যায় ১৮০ রানের ঘর।
রান তাড়ায় ছক্কা-চারে শুরুর পর আরেকটি বড় শটের চেষ্টায় ক্যাচ আউট হন নাঈম। কেশাভ মহারাজের হালকা ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ডিপ মিড উইকেটে ধরা পড়েন বাঁহাতি ওপেনার।
পাওয়ার প্লেতে আরও তিন উইকেট হারায় ঢাকা। দ্বিতীয় ওভারে অ্যাডাম রসিংটন ও সাইফ হাসানকে ফিরিয়ে ঢাকার টপ-অর্ডার গুঁড়িয়ে দেন সাইফ উদ্দিন। ষষ্ঠ ওভারে আক্রমণে এসে উইলিয়ামসকে ফেরান সৈয়দ খালেদ আহমেদ।
খালেদের পরের ওভারে ড্রেসিং রুমের পথ ধরেন এসএম মেহেরব হাসান। ৫০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকেই যায় ঢাকা। পরে মোসাদ্দেক হোসেন, আলাউদ্দিন বাবুরাও পারেননি টিকতে।
একপ্রান্ত আগলে রেখে ৩৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন রস। ঢাকার টানা ব্যর্থতার মাঝে চলতি তার তৃতীয় ফিফটি এটি। তাসকিনকে নিয়ে অষ্টম উইকেটে ইনিংসের সর্বোচ্চ ৪৬ রান যোগ করেন রস।
সৌম্যর করা ম্যাচের শেষ ওভারে তিনটি ছক্কা মারেন রস। শেষ পর্যন্ত ৮৯ রানে অপরাজিত থাকেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান। ৪৯ বলের ইনিংসটি তিনি সাজান ৫ চার ও ৭ ছক্কায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ফরচুন বরিশাল: ২০ ওভারে ১৮৬/৬ (শেহজাদ ২৪, তামিম ৭১, সৌম্য ২৮, মাহমুদউল্লাহ ১৩, মালিক ১০*, মুশফিক ১, মিরাজ ০, সাইফউদ্দিন ২৩*; মোসাদ্দেক ৪-০-২৬-০, শরিফুল ৪-০-৪০-১, তাসকিন ৪-০-৩০-২, আরাফাত ১-০-২১-০, উইলিয়ামস ২-০-২১-০, আলাউদ্দিন ৪-০-৩০-৩, মেহেরব ১-০-১৫-০)
দুর্দান্ত ঢাকা: ২০ ওভারে ১৫৯/৮ (নাঈম ১০, রসিংটন ৪, সাইফ ৩, রস ৮৯*, উইলিয়ামস ১২, মেহেরব ৬, মোসাদ্দেক ৮, আলাউদ্দিন ৩, তাসকিন ১০, আরাফাত ৮*; মহারাজ ৪-০-১৯-১, সাইফউদ্দিন ৪-০-৩১-৩, ম্যাকয় ৪-০-১৭-১, খালেদ ৪-০-২৬-৩, সৌম্য ৩-০-৫৪-০, মিরাজ ১-০-৯-০)
ফল: ফরচুন বরিশাল ২৭ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: তামিম ইকবাল