চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি
রাভিন্দ্রা ও উইলিয়ামসনের শতকের জবাবে বিধ্বংসী সেঞ্চুরি করলেন ডেভিড মিলার, তারপরও বড় জয়ে দেড় দশক পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠল কিউইরা।
Published : 05 Mar 2025, 10:56 PM
কাইল জেমিসনকে পরপর চার ও ছক্কা মেরে ৯৮ রানে পৌঁছে গেলেন ডেভিড মিলার। সেঞ্চুরির জন্য ম্যাচের শেষ বলে দরকার দুই রান। লং-অফে খেলে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যান স্পর্শ করলেন কাঙ্ক্ষিত মাইলফলক। যদিও ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় শেষ হয়ে যায় অনেক আগে। রাচিন রাভিন্দ্রা ও কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি আর রেকর্ড জুটি, পরে দুটি ঝড়ো ইনিংসে যে উচ্চতায় ওঠে নিউ জিল্যান্ডের স্কোর, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ৫০ রানের জয়ে দেড় দশক পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে উঠল নিউ জিল্যান্ড।
লাহোরে বুধবার ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে ৫০ ওভারে নিউ জিল্যান্ড করে টুর্নামেন্টটির রেকর্ড ৩৬২ রান।
জবাবে ২৬ ওভার শেষে দক্ষিণ আফ্রিকার রান ছিল ২ উইকেটে ১৫৭। সেখান থেকে পথ হারিয়ে স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ২১৮। মিলারের ৬৭ বলে অপরাজিত ১০০ রানের ইনিংসে ৩১২ পর্যন্ত যেতে পারে প্রোটিয়ারা।
আগামী রোববার দুবাইয়ে শিরোপা লড়াইয়ে ভারতের মুখোমুখি হবে কিউইরা।
নিউ জিল্যান্ডের নায়ক রাভিন্দ্রা। ১৩ চার ও এক ছক্কায় ১০১ বলে ১০৮ রানের ইনিংস খেলেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। পরে হাত ঘুরিয়ে এইডেন মার্করামের গুরুত্বপূর্ণ উইকেট নেন তিনি। ম্যাচ-সেরার পুরস্কার ওঠে তার হাতেই।
৩২ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে পাঁচ সেঞ্চুরির সবকটি আইসিসি টুর্নামেন্টে করলেন ২৫ বছর বয়সী রাভিন্দ্রা। ২০২৩ বিশ্বকাপে তিন সেঞ্চুরির পর এবারের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে করলেন দুটি। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম পাঁচ সেঞ্চুরির সবগুলো আইসিসি টুর্নামেন্টে করা একমাত্র ক্রিকেটার তিনিই।
তার এই পাঁচ সেঞ্চুরি এলো স্রেফ ১৩ ইনিংসে, যা দ্রুততম।
১০ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ১০২ রান করেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসন। এই সংস্করণে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তার টানা তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি।
এই দুজনের দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে আসে ১৬৪ রান, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে যেকোনো উইকেটে নিউ জিল্যান্ডের যা সর্বোচ্চ।
পরে ব্যাটিং স্বর্গে চমৎকার বোলিংয়ে ১০ ওভারে ৪৩ রানে ৩ উইকেট শিকার করেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক মিচেল স্যান্টনার।
নিউ জিল্যান্ডের রানের পাহাড় টপকে জিততে হলে আইসিসির ওয়ানডে টুর্নামেন্টের সেমি-ফাইনালে সর্বোচ্চ রান তাড়ার রেকর্ড গড়তে হতো দক্ষিণ আফ্রিকাকে। সেই লক্ষ্যে শুরুতেই রায়ান রিকেলটনকে হারায় দক্ষিণ আফ্রিকা। পঞ্চম ওভারে তাকে ফিরিয়ে নিউ জিল্যান্ডকে প্রথম সাফল্য এনে দেন ম্যাট হেনরি।
শুরুর ধাক্কা সামলে দলকে এগিয়ে নেন টেম্বা বাভুমা ও রাসি ফন ডার ডাসেন। বাভুমা ফিফটি করেন ৬৪ বলে, পঞ্চাশ ছুঁতে ফন ডার ডাসেনের লাগে ৫১ বল। দুজনের জুটি ছুঁয়ে ফেলে শতরান।
১০৫ রানের এই জুটি ভাঙতেই দক্ষিণ আফ্রিকার পথ হারানোর শুরু। স্যান্টনারের বলে ৫০ রানে বাভুমার ক্যাচ ফেলেন উইলিয়ামসন। বাঁহাতি স্পিনারের পরের ওভারে উইলিয়ামসনের হাতে ক্যাচ দিয়েই ফেরেন প্রোটিয়া অধিনায়ক (৭১ বলে ৫৬)।
খানিক পর টানা দুই ওভারে বিপজ্জনক হয়ে ওঠা ফন ডার ডাসেন (৬৬ বলে ৬৯) ও দারুণ ফর্মে থাকা হাইনরিখ ক্লসেনকেও ফিরিয়ে দেন স্যান্টনার। টানা পাঁচ ইনিংসে ফিফটি করার পর এবার ক্লসেন করতে পারেন ৩ রান।
বল হাতে নিয়ে নিজের দ্বিতীয় ওভারে মার্করামকে ফিরতি ক্যাচে আউট করেন রাভিন্দ্রা। এরপর দ্রুত বিদায় নেন ভিয়ান মুল্ডার, মার্কো ইয়ানসেন ও কেশাভ মহারাজ।
একটা পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৬১ থেকে ৪০তম ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর হয়ে যায় ৮ উইকেটে ২১৮! আড়াইশর নিচে গুটিয়ে অনেক বড় ব্যবধানে হারের শঙ্কায় তখন তারা।
সেখান থেকেই পাল্টা আক্রমণ শুরু করেন মিলার। প্রথমে তাকে সঙ্গ দেন রাবাদা। ১৬ রান করে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে রাবাদা বিদায় নেন যখন, মিলারের রান তখন কেবল ৪৬।
৪৬ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে এগিয়ে যান তিনি। শেষ ওভার শুরু করেন ৮২ রান নিয়ে। জেমিসনের ওই ওভারে ১৮ রান নিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৬৭ বলে।
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ইতিহাসে দ্রুততম সেঞ্চুরি এটি। ২০০২ আসরে কলম্বোয় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭৭ বলে সেঞ্চুরি করেছিলেন ভারতের ভিরেন্দার শেবাগ। চলতি আসরে লাহোরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সমান বলে তিন অঙ্ক স্পর্শ করেন অস্ট্রেলিয়ার জশ ইংলিস।
লুঙ্গি এনগিডির সঙ্গে ২৭ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫৬ রানের শেষ উইকেট জুটিতে মিলার একাই ২৫ বলে করেন ৫৪।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং নেয় নিউ জিল্যান্ড। ভালো শুরু করলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি উইল ইয়াং (২৩ বলে ২১)। রাভিন্দ্রা যথারীতি এগিয়ে যান দারুণ সব শটের পসরা মেলে। তার সঙ্গে জমে ওঠে উইলিয়ামসনের জুটি।
৪৭ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর রাভিন্দ্রা শতকে পা রাখেন ৯৩ বলে। নিউ জিল্যান্ডের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির এক আসরে একাধিক সেঞ্চুরি করলেন তিনি। এরপর আর বেশিদূর তিনি যেতে পারেননি। রাবাদার স্লোয়ারে ক্যাচ দিয়ে থামে তার দুর্দান্ত ইনিংস।
উইলিয়ামসন ১৫তম ওয়ানডে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯০ বলে। পঞ্চাশ থেকে শতকে যেতে তার লাগে কেবল ২৯ বল। ওই ওভারেই ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
টিকতে পারেননি টম ল্যাথাম। সেখান থেকে দলের স্কোর সাড়ে তিনশ ছাড়ানোর কৃতিত্ব ড্যারিল মিচেল ও গ্লেন ফিলিপসের।
৪টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৭ বলে ৪৯ রান করেন মিচেল। ৬ চার ও এক ছক্কায় ফিলিপস অপরাজিত রয়ে যান ২৭ বলে ৪৯ রানে।
শেষ ১০ ওভারে ১১০ ও শেষ ৬ ওভারে ৮৩ রান তোলে নিউ জিল্যান্ড। সেটিই গড়ে দিল বড় পার্থক্য।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
নিউ জিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩৬২/৬ (ইয়াং ২১, রাভিন্দ্রা ১০৮, উইলিয়ামসন ১০২, মিচেল ৪৯, ল্যাথাম ৪, ফিলিপস ৪৯*, ব্রেসওয়েল ১৬, স্যান্টনার ২*; ইয়ানসেন ১০-০-৭৯-০, এনগিডি ১০-০-৭২-৩, রাবাদা ১০-০-৭০-২, মুল্ডার ৬-০-৪৮-১, মহারাজ ১০-০-৬৫-০, মার্করাম ৪-০-২৩-০)
দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩১২/৯ (রিকেলটন ১৭, বাভুমা ৫৬, ফন ডার ডাসেন ৬৯, মার্করাম ৩১, ক্লসেন ৩, মিলার ১০০*, মুল্ডার ৮, ইয়ানসেন ৩, মহারাজ ১, রাবাদা ১৬, এনগিডি ১*; হেনরি ৭-০-৪৩-১, জেমিসন ৭-১-৫৭-০, ও’রোক ৮-০-৬৯-০, স্যান্টনার ১০-০-৪৩-৩, রাভিন্দ্রা ৫-০-২০-১, ফিলিপস ৩-০-২৭-২)
ফল: নিউ জিল্যান্ড ৫০ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রাচিন রাভিন্দ্রা