হ্যারি ব্রুকের আগ্রাসী শতরানের সঙ্গে দুর্দান্ত ইনিংস খেললেন উইল জ্যাকস, চ্যালেঞ্জিং রান তাড়া যেন তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিল ইংল্যান্ড।
Published : 25 Sep 2024, 10:27 AM
“একটা পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ২৫০ রান করতে পারলেই ভালো কিছু হবে। সেখান থেকে ৩০০ রান করাটা তো দারুণ ব্যাপার। কিন্তু…”, অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মিচেল মার্শ যা বলছিলেন, এর পরের অংশটুকু তাদের জন্য হতাশার। চ্যালেঞ্জিং কন্ডিশনে তিনশর বেশি রান করেও তারা পাত্তা পাননি ইংল্যান্ডের কাছে। হ্যারি ব্রুক যে স্বরূপে আবির্ভূত হওয়ার প্রতিজ্ঞা করেছিলেন!
আগ্রাসন ও নিয়ন্ত্রণের অপূর্ব মিশেলে ব্রুকের সেঞ্চুরি আর উইল জ্যাকসের দুর্দান্ত ইনিংসে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে সিরিজে টিকে থাকল ইংল্যান্ড। পাঁচ ম্যাচ সিরিজের প্রথম দুটিতে হেরে যাওয়া ইংলিশরা মঙ্গলবার ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে জয় পায় ৪৬ রানে।
টানা ১৪ ম্যাচ জয়ের পর বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের জয়রথ থামল এই পরাজয়ে।
স্টিভেন স্মিথের ফিফটির পর মাঝপথে খেই হারানো অস্ট্রেলিয়া ৩০৪ রান করতে পারে অ্যালেক্স কেয়ারির সৌজন্যে। আগের ম্যাচে দারুণ ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা হওয়া কিপার-ব্যাটসম্যান এ দিন করেন ৬৫ বলে অপরাজিত ৭৭।
রান তাড়ায় ইংল্যান্ড ৩৭.৪ ওভারে ৪ উইকেটে ২৫৪ রান তোলার পর বৃষ্টিতে আর খেলা হয়নি। ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে তখন অনেক এগিয়ে ইংলিশরা।
১৩ চার ও ২ ছক্কায় ৯৪ বলে ১১০ রানে অপরাজিত থাকেন ব্রুক। প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটি তার নাম তুলে দিয়েছে রেকর্ড বইয়ে। জস বাটলারের চোটে দলকে নেতৃত্ব দেওয়া ব্যাটসম্যান এখন ইংল্যান্ডের ওয়ানডে ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান অধিনায়ক।
২৫ বছর ২১৫ দিন বয়সে সেঞ্চুরিটি করলেন অষ্টাদশ ওয়ানডে খেলতে নামা ব্রুক। ২৬ বছর ১৯০ দিন বয়সে সেঞ্চুরি করে আগের রেকর্ড গড়েছিলেন অ্যালেস্টার কুক।
চেস্টার-লি-স্ট্রিটের রিভারসাইড গ্রাউন্ডে টস জিতে এ দিন বোলিং নেয় ইংল্যান্ড। কন্ডিশনই ছিল অমন। মেঘলা আকাশের নিচে পেসাররা সহায়তা পেয়েছে বেশ।
দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ট্রাভিস হেড এ দিন ছিলেন বিশ্রামে। ওপেন করতে নেমে ম্যাথু শর্ট একটি করে চার ও ছক্কা মেরে ১২ রানেই আউট হয়ে যান। আরেক ওপেনার অধিনায়ক মার্শ ফেরেন ২৪ রানে।
স্টিভেন স্মিথ ও ক্যামেরন গ্রিন জুটি বেঁধে দলকে টেনে নেন অনেকটা। তৃতীয় উইকেটে ৮৪ রান যোগ করেন দুজন।
এই জুটি ভাঙার পর অস্ট্রেলিয়ান ইনিংসের ভিত নড়বড়ে হয়ে পড়ে। ৪২ রান করা গ্রিনকে ফেরান জেকব বেথেল। পরের ওভারেই মানার্স লাবুশেন ফেরেন কোনো রান না করে।
৮২ বলে ৬০ রান করে স্মিথ যখন আউট হন, ৩৫তম ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেটে ১৭২।
সেখান থেকে তারা ঘুরে দাঁড়ায় পরের সময়টায়। কেয়ারি এক প্রান্তে দারুণ খেলতে থাকেন। গ্লেন ম্যাক্সওয়েল স্বভাবজাত ব্যাটিংয়ে ২৫ বলে করেন ৩০। শেষ সময়ে অ্যারন হার্ডি করেন ২৬ বলে ৪৪।
৪৮ বলে ফিফটি করা কেয়ারিও শেষ সময়ে দ্রুত রান তোলেন আরও। শেষ ১০ ওভারে ১০৪ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া।
আগের ম্যাচে দলকে বিপদ থেকে উদ্ধার করে ৬৭ বলে ৭৪ রান করা কেয়ারি এবার করেন ৬৫ বলে ৭৭। অথচ জশ ইংলিশ ফিট থাকলে তিনি খেলারই সুযোগ পেতেন না।
সেই পুঁজি নিয়েও অবশ্য লড়াই করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। অসুস্থতার কারণে তারা এই ম্যাচে পায়নি দলের সেরা বোলার অ্যাডাম জ্যাম্পাকে। বোলিং আক্রমণ সাজায় তারা স্রেফ তিনজন বিশেষজ্ঞ বোলার নিয়ে-মিচেল স্টার্ক, জশ হেইজেলউড ও শন অ্যাবট। সঙ্গে ছিলেন হার্ডি, গ্রিন, ম্যাক্সওয়েলের মতো অলরাউন্ডাররা।
ম্যাচের দ্বিতীয়ভাগে উইকেটও সহজ হয়ে আসে অনেক। আর ব্রুক ও জ্যাকসের দুর্দান্ত ব্যাটিং তো ছিলই। সব মিলিয়ে সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া।
শুরুটা যদিও দুর্দান্ত করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। ইনিংসের তৃতীয় ওভারেই তিনি ফিরিয়ে দেন দুই ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্ট ও বেন ডাকেটকে।
জ্যাকস ও ব্রুক ক্রিজে গিয়ে শুরুতে সময় নেন কিছুটা। এরপর শট খেলতে শুরু করেন দুজন। ঝুঁকির পথ বেছে নেননি কেউই, ক্রিকেটীয় শটেই তারা নাস্তানাবুদ করেন অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের।
তাদের জুটিই ম্যাচের ভাগ্য একরকম গড়ে দেয়। ১৪৮ বলে ১৫৬ রান যোগ করেন দুজন।
পরে অবশ্য শর্ট বলের কৌশলে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করে অস্ট্রেলিয়া। গ্রিনের শর্ট বলে জ্যাকস বিদায় নেন ৮২ বলে ৮৪ করে। গ্রিনের আরেকটি শর্ট বল দ্রুত ফেরায় জেমি স্মিথকে।
কিন্তু ব্রুক ও লিয়াম লিভিংস্টোনের সামনে কাজে লাগেনি সেই কৌশল। পুল, কাট ও আপার কাট খেলে পাল্টা জবাব দেন দুজন। পরে মিচেল স্টার্ক আক্রমণে ফিরেও কিছু করতে পারেননি।
৫৪ বলে ফিফটি করা ব্রুক পরের পঞ্চাশে ছুটে যান স্রেফ ৩৩ বল খেলেই। তাকে থামাতেই পারেনি অস্ট্রেলিয়া। লিভিংস্টোন তিন ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ২০ বলে ৩৩ করে।
সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ লর্ডসে শুক্রবার, শেষটি ব্রিস্টলে রোববার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
অস্ট্রেলিয়া: ৫০ ওভারে ৩০৪/৭ (শর্ট ১৪, মার্শ ২৪, স্মিথ ৬০, গ্রিন ৪২, লাবুশেন ০, কেয়ারি ৭৭*, ম্যাক্সওয়েল ৩০, হার্ডি ৪৪, অ্যাবট ২*; পটস ৯-০-৪৮-০, আর্চার ১০-০-৬৭-২, টপলি ১-০-১৫-০, কার্স ১০-০-৫৫-১, রাশিদ ১০-০-৫৬-০, বেথেল ৫-১-৩৩-১, জ্যাকস ৩-০-২০-১, লিভিংস্টোন ৩-০-২৪-১)।
ইংল্যান্ড: ৩৭.৪ ওভারে ২৫৪/৪ (সল্ট ০, পাকেট ৮, জ্যাকস ৮২, ব্রুক ১১০*, স্মিথ ৭, লিভিংস্টোন ৩৩*; স্টার্ক ৮-১-৬৩-২, হেইজেলউড ৮-০-৪৩-০, অ্যাবট ৭.৪-০-৫৩-০, হার্ডি ৫-০-২৬-০, ম্যাক্সওয়েল ২-০-১১-০, গ্রিন ৬-০-৪৫-২, শর্ট ১-০-১২-০)।
ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস-স্টার্ন পদ্ধতিতে ইংল্যান্ড ৪৬ রানে জয়ী।
সিরিজ: তিন ম্যাচ সিরিজে অস্ট্রেলিয়া ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে।
ম্যান অব দা ম্যাচ: হ্যারি ব্রুক।