বাংলাদেশ দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট শ্রীধরন শ্রীরামের মতে, বাংলাশের বিশ্বকাপ অভিযান এবার সফল।
Published : 05 Nov 2022, 11:11 AM
বিশ্বকাপে এবার বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বলা যায় অস্ট্রেলিয়ার আবহাওয়ার মতোই। কখনও ঝলমলে রোদ, পর মুহূর্তেই মেঘে ঢাকা আকাশ। ঝুপ করেই নামে বৃষ্টি। কখনও আরামদায়ক উত্তাপ, কখনও তীব্র শীতলতার কাঁটা। তবে দলের পারফরম্যান্সে ওঠা-নামা থাকলেও শ্রীধরন শ্রীরামের ভাবনায় কোনো দ্বিধার ছোঁয়া নেই। নিজেদের সেরা বিশ্বকাপ কাটানোর সাফল্যকেই বড় করে দেখছেন টি-টোয়েন্টি দলের টেকনিক্যাল কনসালটেন্ট।
কাগজে-কলমে বাংলাদেশ এবার সেরা সাফল্য পেয়ে গেছে তিন ম্যাচ শেষেই। ১৫ বছর পর মূল পর্বে প্রথম জয় ধরা দিয়েছে। প্রথমবারের মতো একাধিক জয়ের স্বাদও মিলেছে। সাফল্য তো বটেই। এমনকি গ্রুপ পর্বের নিজেদের শেষ ম্যাচের আগে সেমি-ফাইনাল সম্ভাবনা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হয়ে যায়নি, এটাও তো বিশ্বকাপ শুরুর আগে অভাবনীয় ছিল!
যদিও সেই সম্ভাবনায় বাস্তবতার ছোঁয়া কম, গাণিতিক ছাপ বেশি। যে দুটি জয় এসেছে, সেই দুটিও মোটামুটি প্রত্যাশিতই ছিল। কোনো জয়ই খুব দাপুটে ছিল না। কাগজ-কলমের হিসাবের স্বস্তির আড়াল থেকে তাই অস্বস্তি আর সংশয় উঁকি দেওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। তবে শ্রীরাম সেই গভীরে যেতেই চাইলেন না।
সুপার টুয়েলভ পর্বে বাংলাদেশের ৮০ শতাংশ ম্যাচ শেষ। প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, সাফল্য-ব্যর্থতার খতিয়ান হিসাব-নিকাশ তাই করাই যায় এখন। সেই প্রশ্নেই শেষ ম্যাচের আগের দিন সংবাদ সম্মেলনে শ্রীরামের ঝটপট আর জোরাল জবাবে মিশে থাকল তার সন্তুষ্টি।
“টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের সেরা আসর এটি। বাংলাদেশের ইতিহাসে আগে কখনও মূল পর্বে দুটি খেলায় জেতেনি দল। আমরা সেটা করেছি। ছেলেরা নিজেদের নিয়ে গর্ব করতে পারে।”
শ্রীরামের এই ‘গর্ব’ করার দাবির সঙ্গে কজন একমত হবে, এটা নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন হতেই পারে। এবারের বিশ্বকাপ সেরা হয়ে গেছে অতীতের অভাবনীয় আর সীমাহীন ব্যর্থতার কারণে। নইলে খোলা চোখে তো এবারও প্রত্যাশাকে এখনও পর্যন্ত খুব একটা ছাড়িয়ে যেতে পারেনি দল। চমকপ্রদ কিছুও উপহার দিতে পারেনি।
গর্বের ব্যাপারটি নিয়ে নিশ্চিতভাবেই সংশয় থাকত না, যদি আগের ম্যাচে অ্যাডিলেইডে ভারতকে হারিয়ে দেওয়া যেত। লিটন কুমার দাসের দুর্দান্ত ইনিংসে মোক্ষম সুযোগ পেয়েও শেষ পর্যন্ত যা পারেননি সাকিব আল হাসানরা। বরং দল থেকে যখন উন্নতির গান গাওয়া হচ্ছে, সাকিব ও শ্রীরাম বারবার বলছেন দল সঠিক পথেই আছে, তখন প্রক্রিয়াটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে পুরনো ভূতের চেপে বসা।
ারতের বিপক্ষে ২০১৬ এশিয়া কাপ, ২০১৮ নিদাহাস ট্রফিতে খুব কাছে গিয়ে হেরেছে বাংলাদেশ। অন্য প্রতিপক্ষের সঙ্গেও চাপের মুহূর্তে ভেঙে পড়া কিংবা খেই হারানোর নজির আছে অনেক। শ্রীরাম জমানায়ও থাবা বসিয়েছে সেই একই আতঙ্ক। বৃষ্টি বিরতির পর যখন ৯ ওভারে প্রয়োজন ৮৫ রান, তখনও অক্ষত সবকটি উইকেট, তার পরও অস্থির ব্যাটিংয়ে নিজেদের পতন ডেকে এনেছেন ব্যাটসম্যানরা।
ম্যাচ শেষে সাকিব নিজেও স্বীকার করেন, হয়তো আতঙ্কিত হয়েই ব্যাটসম্যানদের অমন আত্মহত্যা। শ্রীরামকে তো বেশ ক্ষীপ্ত দেখা গেছে ম্যাচ চলার সময়ই। মোসাদ্দেক হোসেন আউট হওয়ার পর তার সঙ্গে বেশ উত্তেজিত শরীরী ভাষায় কথা বলতে দেখা যায় টেকনিক্যাল কানসালটেন্টকে।
উইকেটে যাওয়ার পর প্রথম বলেই দারুণ এক ছক্কা মারেন মোসাদ্দেক। কিন্তু এক বল পরই আবার বানিয়ে বড় শট খেলতে গিয়ে নিজের উইকেট বিলিয়ে আসেন। বলার অপেক্ষা রাখে না, চাপের মধ্যে নিজেকে ধরে রাখতে না পেরেই অঙ্ক কষার হিসেবে ভুল করেন তিনি এবং তারা, আরও একবার!
ওই সময়টায় পরপর দুই ওভারে চার উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে অনেক দূরে ছিটকে যায় বাংলাদেশ। শ্রীরাম নিজেও পাকিস্তান ম্যাচের আগের দিন বললেন, পরিস্থিতির চাপই ব্যাটসম্যানদের টেনে নিয়েছে অমন তাড়াহুড়োর পথে।
“ওই ১৫-২০ মিনিট খুবই পাগলাটে ছিল, যা বোধগম্যই। ওভারপ্রতি ৯ রান বা ৯.৭৫ রান দরকার ছিল, আমার মনে হয়, নিশ্চিতভাবেই চাপে কিছুটা খেই হারিয়েছে ওরা। হ্যাঁ, বেশ উন্মত্ত ১৫-২০ মিনিট ছিল, এটা বলতে পারি।”
তবে এই সমস্যা কিংবা প্রবণতাকে পূর্বের জের মানতে তিনি নারাজ। সেই আলোচনাতেই তার আগ্রহ নেই। তিনি থাকতে চান তার জমানায়। চাপ জয়ের ক্ষেত্রও উদাহরণ মেলে ধরলেন তিনি এই বিশ্বকাপ থেকেই।
“এটা নতুন শুরু। আগে কী হয়েছে, তা আমার জানা নেই। আমি সেখানে একদমই ছিলাম না। নেদারল্যান্ডস ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে খুব ক্লোজ দুটি ম্যাচ আমরা জিতেছি। আরেকটি ক্লোজ ম্যাচে আমরা ভারতের কাছে হেরে গেছি। তবে সেটা হতেই পারে। আমি এটাকে একদম নতুন শুরু হিসেবেই দেখছি। আমি অতীতে খুব বেশি ডুব দেইনি, সেসময় ছিলাম না। তাই মন্তব্য করতে পারব না।”
এই বিশ্বকাপকে বিবেচনা করলেও আসলে সম্ভাবনা এখনও শেষ হয়ে যায়নি। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানকে যদি হারিয়ে দেওয়া যায়, সেমি-ফাইনালের দুয়ার তাতে না খুলুক, গর্বের সংশয়হীন উপলক্ষ আসবে নিশ্চিতভাবেই।