জাকের আলির জাতীয় দলে ডাক না পাওয়া প্রসঙ্গে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন, প্রশ্ন তুললেন তিনি দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে।
Published : 15 Feb 2024, 10:06 AM
জাতীয় নির্বাচক কমিটি ও জাতীয় দলের টিম ম্যানেজমেন্টের দল বাছাই প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করলেন মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। বিপিএলে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের কোচ প্রশ্ন তুললেন দল নির্বাচনের প্রক্রিয়া নিয়ে। তার মতে, স্রেফ রান বা পরিসংখ্যান দেখেই জাতীয় দল গড়া হয়। গায়ের রঙের কারণে কুমিল্লার ব্যাটসম্যান জাকের আলিকে বোর্ডের চোখে পড়ে না বলেও শ্লেষ ফুটে উঠল ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচের কণ্ঠে।
বিপিএলে বুধবার খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে কুমিল্লার ৭ উইকেটে জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে প্রথম প্রশ্ন ছিল জয়ের নায়ক তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে। এবারের বিপিএলে অসাধারণ ফর্মে থাকা ব্যাটসম্যানকে নিয়ে বলতে গিয়েই কুমিল্লা কোচ নিজে থেকে তুললেন তার দলের কিপার-ব্যাটসম্যান জাকের আলির প্রসঙ্গ।
“শুধু হৃদয়ের কথা তো বলব না… জাকেরের কথা আপনারা সবসময় হয়তো ভুলে যান। আপনারা কেউ কখনও জিজ্ঞেস করেন না। ছেলেটার হয়তো চেহারা একটু কালো, এই কারণে আমার মনে হয় বোর্ডও (বিসিবি) তাকে দেখে না ঠিকমতো।”
“আপনারা ৬-৭ নম্বর (পজিশনের) খেলোয়াড় খোঁজেন। এই ছেলেটা গত দুটি বছর ধরে খুবই ভালো খেলছে, তার স্ট্রাইক রেট যদি দেখেন। প্রতিটি দিনই সে আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে রান করে দিয়ে আসে এবং সে অনেক সেন্সিবল। আমার মনে হয়, এই ছেলেটাকে সুযোগ দেওয়া উচিত।”
খুলনার বিপক্ষে ৪৭ বলে ৯১ রানের ইনিংস খেলে কুমিল্লার জয়ের নায়ক হৃদয় হলেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল জাকেরের। ৩ ছক্কায় ৩৩ বলে অপরাজিত ৪০ রান করেন তিনি। দুজন মিলে গড়েন ৫৪ বলে ৮৪ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি।
গত বিপিএলের পর আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের বাংলাদেশ দলে জাকেরকে নেওয়া হয়েছিল। তবে কোনো ম্যাচ না খেলেই বাদ পড়ে যান তিনি। দেশের হয়ে তিনটি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি অবশ্য খেলেছেন ২৫ বছর বয়সী কিপার-ব্যাটসম্যান। তবে সেগুলি ছিল গত এশিয়ান গেমসে, যেখানে আসলে মূল দল খেলেনি।
আগামী মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের জন্য যে স্কোয়াড ঘোষণা করা হয়েছে, সেই দলের সমন্বয় নিয়ে বেশ ভালোভাবেই খোঁচা দিলেন সালাহউদ্দিন। তার মতে, ওপেনারে ঠাসা দল না গড়ে অনায়াসেই এখানে জাকেরকে জায়গা দেওয়া যেত।
“গতকাল বাংলাদেশ দল দেখলাম। আপনি দলে ৫টা ওপেনার রেখেছেন, মিডল অর্ডার হয়তো ২টা ব্যাটসম্যান মাত্র। এরা সবাই (ওপেনাররা) হয়তো মিডল অর্ডারে খেলবে। একটা সুবিধা আছে, হয়তো বাংলাদেশ সবসময় ওপেনই করবে। ১৬-১৭ ওভারেও ওপেনই করবে। এটা হয়তো সুবিধা হতে পারে।”
“সঠিক জায়গায় সঠিক খেলোয়াড় বেছে নেওয়াটা জরুরি। এই ছেলেটা (জাকের) গত মৌসুমেই যদি দেখেন, জায়গামতো কিন্তু রানটা করে আসে… দলের যখন প্রয়োজন, যেভাবে খেলতে বলা হয়, সেভাবেই খেলতে পারে, সেন্সিবল। আজকেও যদি দেখেন, আমাদের খারাপ অবস্থার সময় একটা ভালো জুটি দিয়েছে সে। তার পরও স্ট্রাইক রেট ১৩০।”
গত বিপিএলে ১১ ইনিংসে ১ ফিফটিতে ১৭৫ রান করেছিলেন জাকের ২৫ গড় ও ১২০.৬৮ স্ট্রাইক রেটে। এই পরিসংখ্যান যেমন খুব সমৃদ্ধ নয়, পারফরম্যান্সও দারুণ চমকপ্রদ কিছু ছিল না সত্যি বলতে। তবে এবার এখনও পর্যন্ত ১৩৪ রান করেছেন ১৩৪ স্ট্রাইক রেটে। ৭ ইনিংসের ৫টিতেই অপরাজিত থাকায় তার গড় ৬৭। কার্যকর কিছু ইনিংস তিনি খেলেছেন।
কোচ সালাউদ্দিনের মতে, ৬-৭ নম্বর পজিশনের জন্য এখন দেশের দ্বিতীয় সেরা ব্যাটসম্যান জাকের।
“আমার চাওয়া-পাওয়া এখানে ব্যাপার নয়। আমার মনে হয়, এই পজিশনের জন্য, সে বাংলাদেশের সেরাদের একজন। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পরে যদি কোনো ছেলেকে দেখি, আমার মনে হয়, এই ছেলেটাই সেরা। কারণ প্রতিটি দিনই আমাদের দলকে সে বাঁচাচ্ছে এবং ভালো একটা অবস্থানে দিয়ে আসছে, সেটা আগে ব্যাট করুক বা পরে করুক।”
“খুব সেন্সিবল ব্যাটও করে। এমন নয় যেতার হাতে শট নেই, চারদিকে শট খেলতে পারে সে। পেসে ভালো খেলে, স্পিনেও ভালো খেলে। তার রেকর্ডও ভালো। এই ধরনের ছেলেদের সুযোগ দেওয়া উচিত।”
শুধু জাতীয় দল নয়, এমনকি ‘এ’ দল গঠনের সময়ও দলীয় সমন্বয় বা ভারসাম্যের দিকে খেয়াল রাখা হয় না বলে অভিযোগ জাতীয় দলের সাবেক সহকারী কোচ সালাউদ্দিনের।
“এই ধরনের খেলোয়াড়কে আমরা যদি ৬-৭ নম্বরে সুযোগ না দেই… সবসময়ই দেখেন, শ্রীলঙ্কায় একটা ‘এ’ দল পাঠিয়েছেন, তখনও ৮টা ওপেনার পাঠিয়েছেন। তাহলে মিডল অর্ডারে কে খেলতে চায়? ঢাকা লিগে (প্রিমিয়ার) আমি মিডল অর্ডারে খেলোয়াড় খুঁজে পাই না, কারণ কেউ মিডল অর্ডারে খেলতে চায় না। কারণ, ওপেনাররা ১ হাজার রান করে, তাদেরকেই আমরা দলে নেই।”
“যে ৩০০ রান করে… ৬-৭ নম্বরের খেলোয়াড় তো ১ হাজার রান করবে না, সে ৩০০ রান করবে এবং সেই রান খুবই মূল্যবান। তার ৩০০ রানের ওপর নির্ভর করবে দল জিতবে না হারবে। তো এই ধরনের ছেলেদের আমরা যদি উৎসাহ না দেই, তাহলে কেউ তো সেখানে ব্যাট করতে চাইবে না।”
ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচের ধারণা, হয়তো স্রেফ পরিসংখ্যান দেখে বা রানের তালিকায় শীর্ষে থাকাদেরকেই বিবেচনা গড়া করা হয় জাতীয় দল গড়ার সময়।
“তারা (দল নির্বাচন যারা করেন) কী বুঝে দল বানায়, আমি বুঝি না আসলে। আপনি যেটা বলেছেন, সেটাই হতে পারে, হয়ত রান দেখে… ওপরের দিকে অনেক রান করেছে, দলে নিয়ে নিয়েছি। একটা ছেলে যে ৫ নম্বরে ব্যাট করছে, সে ৫০ করবে না, সে ২০ করবে.. হয়তো ৫ বলে ২০ করবে, দল জিতবে বা হারবে… ওভাবে দল গড়লে অনেক ভালো হবে।”
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজের স্কোয়াডে জায়গা পাওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে টপ অর্ডারে ব্যাট করার মতো ব্যাটসম্যান আছেন নাজমুল হোসেন শান্ত, লিটন কুমার দাস, এনামুল হক, মোহাম্মদ নাঈম শেখ ও সৌম্য সরকার। এছাড়া তাওহিদ হৃদয়ও বিপিএলে কুমিল্লার হয়ে দুর্দান্ত খেলছেন তিনে নেমে। সেদিক থেকে সত্যিকারের মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান আছেন কেবল মাহমুদউল্লাহ।
সেটি নিয়েই আরেক দফা খোঁচা দিয়ে সালাউদ্দিন বললেন, সহজাত পজিশনের বাইরে খেলিয়ে কারও কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স আশা করা উচিত নয়।
“নতুন যে টি-টোয়েন্টি দলটা আছে, একটু বিশ্লেষণ করে দেখবেন, কয়টা মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নেওয়া হয়েছে। সৌম্যসহ আপনার দলে ৫টা ওপেনার আছে। সবাই নতুন বলের খেলোয়াড়, ওপরে ব্যাট করবে, তাহলে পেছনে ব্যাট করবে কে?”
“হয়তো এই ওপেনারদের মধ্য থেকেই কেউ সেখানে ব্যাট করবে। কিন্তু সে তো অভ্যস্ত নয়। যেহেতু অভ্যস্ত নয়, তাহলে তার কাছ থেকে পারফরম্যান্স আশা করলেও তো ভুল করবেন। আমার মনে হয়, সঠিক জায়গায় সঠিক ক্রিকেট বেছে নেওয়াটা জরুরি।”