বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ
পাকিস্তানে ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর জিততে পারলে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে মিরপুর টেস্ট জেতাও সম্ভব, বলছেন বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ।।
Published : 23 Oct 2024, 05:51 PM
“বিশ্বাস…বিশ্বাস… বিশ্বাস… বিশ্বাস…”, মুশতাক আহমেদের কণ্ঠে ঘুরেফিরে বারবার একই শব্দ। যখন তাকে সুনির্দিষ্ট করে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘এই বিশ্বাস মানে কি ম্যাচ জয়ের বিশ্বাস?’, শুনে একটু যেন অবাকই হলেন তিনি। এমনভাবে তাকালেন, যে দৃষ্টির মানে, “এতক্ষণ তাহলে বলছি কী!” বাংলাদেশের স্পিন বোলিং কোচের মতে, বিশ্বাসের ভেলায় চেপে জয়ের তীর খুঁজে নিতে পারে বাংলাদেশ।
স্কোরবোর্ডের দিকে তাকালে আর একটু সাহসী হলে, মুশতাকের কথাকে খুব অমূলক মনে হবে না হয়তো। মিরপুর টেস্টের দ্বিতীয় দিন শেষে বাংলাদেশের সামনে ছিল ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা। তৃতীয় দিন শেষে সেই দলটি এখন জয়ের স্বপ্নও দেখতে পারছে!
বৃষ্টি আর আলোকস্বল্পতা মিলিয়ে তৃতীয় দিনে খেলা হয়েছে মাত্র ৫৭.৫ ওভার। দিনের শুরুর দিকে তিন উইকেট হারানোর পর মনে হচ্ছিল, ইনিংস ব্যবধানের হার কেবল সময়ের ব্যাপার। কিন্তু মেহেদী হাসান মিরাজের দুর্দান্ত ইনিংস ও অভিষিক্ত জাকের আলির সঙ্গে ১৩৮ রানের জুটিতে লড়াইয়ে ফিরেছে বাংলাদেশ।
তৃতীয় দিন শেষে ৮১ রানে এগিয়ে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। উইকেট বাকি আছে তিনটি।
চতুর্থ দিন সকালে দ্বিতীয় নতুন বলে এই তিন উইকেট দ্রুতই তুলে নিতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেক্ষেত্রে জয় তাদের নাগালেই থাকবে। তবে বাংলাদেশের ভরসা হয়ে ৮৭ রানে অপরাজিত আছেন মিরাজ। তার সঙ্গে আছেন নাঈম হাসান, ব্যাটিংটা যিনি ভালোই করতে পারেন। অপেক্ষায় আছেন তাইজুল ইসলাম, ব্যাট হাতে লড়াইয়ে তিনি যখন সহজে হাল ছাড়েন না।
১৫০-১৮০ রানের লিড নিতে পারলে এবং উইকেটের সহায়তা মিললে এই ম্যাচে জয় পাওয়াটা অসম্ভব নয় বাংলাদেশের জন্য।
মুশতাকের মতে, সেই লক্ষ্যটা পূরণ করতে হলে সবচেয়ে বড় অস্ত্র ‘বিশ্বাস।’ কিছুদিন আগে পাকিস্তান সফরে ২৬ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর স্মরণীয় সেই জয়কে প্রেরণা মানছেন স্পিন কোচ।
“(এই ধরনের লড়াই) সবসময়ই দারুণ। কারণ, এভাবেই বিশ্বাস রাখতে হয়। পাকিস্তান সিরিজেও ২৬ রানে ৬ উইকেট হারানোর পরও আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পেরেছিলাম। এই ধরনের ইতিবাচক ব্যাপার থেকেই সবাই বিশ্বাস পেতে শুরু করে যে, আমরা যে কোনো জায়গা থেকে জিততে পারি বা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। দলের এই ধরনের আবহ থাকা সবসময়ই দারুণ।”
“এই ধরনের ম্যাচ জিততে থাকলে সবাই বিশ্বাস করতে শুরু করে। টেস্ট ক্রিকেটের সৌন্দর্যই এটা যে, একটা দল যখন ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই করতে থাকে, বিশেষ করে লোয়ার অর্ডারে যখন এরকম লড়াই হয়, কৌশলগত দিক থেকেও প্রতিপক্ষের ওপর অনেক চাপ ফিরিয়ে দেওয়া যায়। এটা দারুণ লক্ষণ।”
সুনির্দিষ্ট অঙ্কের কোনো লিড নেওয়ার লক্ষ্য দলের নেই বলে জানালেন মুশতাক। ম্যাচে এখনও পর্যাপ্ত সময় বাকি। দলের চাওয়া, যত বেশি সময় সম্ভব, ব্যাট করে যাওয়া।
“যত বেশি সম্ভব (লিড)… যত বেশি সময় সম্ভব আমরা ব্যাট করতে চাই, যত বেশি লিড আমরা পেতে পারি…। আমার কথা হলো, পরিস্থিতি যেমনই হোক, বিশ্বাস করতে হবে। বিশ্বাস ও ভরসা থাকলে যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়। আমরা যত বেশি সম্ভব লিড পেতে চাই।”
“বিশ্বাসটা প্রথমে কোচিং স্টাফের দিক থেকে আসে। এরপর ক্রিকেটারদেরও বিশ্বাসটা রাখতে হয়। ‘আমরা’ শব্দটিই আমি ব্যবহার করব। আমরা যদি বিশ্বাস রাখি, ফলাফল না ভেবে যতক্ষণ প্রক্রিয়ায় থাকব ও লড়াই করব, যে কোনো জায়গা থেকে ঘুরে দাঁড়াব সম্ভব।”
ঘুরে দাড়ানো, লড়াই, লক্ষ্য অর্জন, এসব কথা বারবার বললেও সরাসরি ‘জয়’ শব্দটি উচ্চারণ করছিলেন না মুশতাক। যখন তাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করা হলো এই অবস্থা থেকে ম্যাচ জেতা সম্ভব কি না, স্পিন কোচ বুঝিয়ে দিলেন আগের কথা দিয়েই।
“তৃতীয়বারের মতো বলছি, ২৬ রানে ৬ উইকেট থেকে জিততে পেরেছে এই দল। এবারও কেন নয়? বিশ্বাসটা রাখতে হবে। বিশ্বাসের কথা যখন বলছি, তখন ব্যাপারটা হলো যে, জয়ের প্রক্রিয়টা জানা থাকলে কোনো অবস্থায় কেউ হাল ছাড়ে না।”
“প্রথম ইনিংসে তাইজুল যেভাবে ব্যাট করেছে, দারুণ খেলেছে সে। ১৬-১৭ রান যা-ই করেছে, সেটাকেই বলে লড়াই। প্রতিপক্ষ যখন দেখে যে, এরা হার মানতে তৈরি নয়, তখন তারা সমীহ করতে শুরু করে। প্রতিপক্ষের সেই সমীহ আদায় করতে পারা মানে, যে কোনো দলকে চ্যালেঞ্জ জানানো যায়।”