‘আশার চেয়ে বেশি’ পেয়ে রোমাঞ্চিত মুশফিক 

লাল বলে ভালো পারফরম্যান্সের পরও এখনই জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার আশা তেমন একটা ছিল না বাংলাদেশের টেস্ট দলে ডাক পাওয়া তরুণ এই পেসারের।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 June 2023, 04:21 PM
Updated : 4 June 2023, 04:21 PM

গত অক্টোবরে হওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে প্রথম শ্রেণির সংস্করণে অভিষেক মুশফিক হাসানের। ছাপ রাখতে সময় নেননি একদমই। রংপুর বিভাগের তরুণ পেসার প্রথম ম্যাচেই ঢাকা বিভাগের শিকার করেন ৫ উইকেট। এরপর লাল বলে ক্রমেই আলো ছড়িয়ে ছুটে চলার পালা। স্বপ্নময় সেই পথ ধরে সাত মাসের মাথায় এখন তিনি বাংলাদেশের টেস্ট দলে!

আফগানিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র টেস্টের বাংলাদেশ দলে নতুন মুখ হিসেবে শাহাদাত হোসেনের সঙ্গী মুশফিক। এই মৌসুমে জাতীয় লিগ ও বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে ভালো পারফর্ম করেছেন। সম্ভাবনার ছাপ রেখেছেন বাংলাদেশ ‘এ’ দলে। তবে তার ভাবনায় সীমানায় জাতীয় দল ছিল না এখনই। মাত্রই তো পেশাদার ক্রিকেটে পথচলা শুরু করলেন।

টেস্ট দলে ডাক পেয়ে তাই চমকে গেছেন ২০ বছর বয়সী পেসার। সুযোগ পেলে নিজেকে মেলে ধরতে অবশ্য আত্মবিশ্বাসী তিনি।

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের বাংলাদেশ দলে ছিলেন তিনি। ওই আসরে একটি বেশি ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। পরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগেও বেশিরভাগ সময় কাটে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের বেঞ্চে বসে। তিনটি ম্যাচ খেলে তিন উইকেটের দেখা পান দেদার রান বিলিয়ে।

তবে এই মৌসুমে অক্টোবরে জাতীয় লিগ দিয়ে নিজেকে মেলে ধরেন মুশফিক। ৬ ম্যাচে নেন ২৫ উইকেট। চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন তিনিই। বগুড়ায় ঢাকা বিভাগের অভিজ্ঞ ব্যাটিং লাইন আপকে গুঁড়িয়ে এক ইনিংসেই নেন ৮ উইকেট।

তাকে মনে ধরে যায় জাতীয় নির্বাচকদের। সুযোগ দেওয়া হয় ভারত 'এ' দলের বিপক্ষে বাংলাদেশ 'এ' দলে। সিলেটে আনঅফিসিয়াল টেস্টে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের সামনে বেশ রান দিলেও আউট করেন যাশাসবি জয়সওয়াল, অভিমন্যু ইশ্বরন ও যশ ঢুলকে।

বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের সবশেষ আসরে ৪ ম্যাচে তার শিকার ছিল ১৬ উইকেট। এরপর এবার বাংলাদেশ 'এ' দলের হয়ে সিলেটে ওয়েস্ট ইন্ডিজ 'এ' দলের বিপক্ষে দুটি আনঅফিসিয়াল টেস্ট খেলে ৫ উইকেট নেন পোক্ত শারীরিক গড়নের এই পেসার।

সব মিলিয়ে সাত মাসের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে ১৩ ম্যাচে মুশফিকের ঝুলিতে রয়েছে ৪৯ উইকেট।

কিন্তু এতেই জাতীয় দলের দুয়ার খুলে যাবে, ভাবতে পারেননি তিনি। 'এ' দলের সিরিজ শেষ করে চলে যান লালমনিরহাটে নিজের বাড়িতে। রোববার বিকেলে সময় কাটাচ্ছিলেন বাড়ির পাশের মাঠে। তার দলে ডাক পাওয়া নিয়ে যখন দেশের ক্রিকেট আঙিনায় তোলপাড়, তিনি তখনও সেই ঢেউয়ের বাইরে।

পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি জানালেন, ম্যানেজার নাফিস ইকবালের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন দলে সুযোগ পাওয়ার খবর।    

“(জাতীয় দলে ডাক পেয়ে) ভালো লাগছে… সবারই তো আশা থাকে জাতীয় দলের হয়ে খেলার। আমি মাঠে ছিলাম। ফোন বাসায় রেখে গিয়েছিলাম। পরে বাসায় এসে দেখলাম খবরটা।”

“জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার কথা জানাতে নাফিস ভাই ফোন দিয়েছিলেন। পরে অভিনন্দন জানালেন উনি। প্রস্তুত থাকতে বললেন যেন সুযোগ এলে ভালো খেলতে পারি।”

প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ারে এই ছোট্ট সময়ে দারুণ সম্ভাবনার ছাপ রাখলেও টেস্ট দলে ডাক পাওয়ার প্রত্যাশা তার ছিল না এখনই। তবে একদিন দেশকে প্রতিনিধিত্ব করবেন, এই স্বপ্ন তো মনের কোণে লালন করছিলেন যত্ন করেই।

“জাতীয় ক্রিকেট লিগ, বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগে ভালো করেছিলাম। সত্যি বলতে, (জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার) আশা ছিল না। তবে সবসময় ভাবতাম, সুযোগ পেলে ইনশাআল্লাহ...”

অবশ্য স্কোয়াডে ডাক পেলেও টেস্ট অভিষেকের জন্য কঠিন লড়াইয়ের সামনে পড়তে হবে মুশফিককে। তিনি ছাড়াও স্কোয়াডে পেসার আছে ৪ জন- তাসকিন আহমেদ, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, ইবাদত হোসেন চৌধুরি, শরিফুল ইসলাম। তাদের প্রত্যেকেরই আছে টেস্ট খেলার অভিজ্ঞতা।

এই ৪ পেসারের সঙ্গে লড়াই জিতে মূল একাদশে সুযোগ পাওয়ার চ্যালেঞ্জটা যে কঠিন, তা জানা আছে মুশফিকের। তবে অপেক্ষায় থাকতে আপত্তি নেই তার।


“আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন তো এক ম্যাচ শুধু। (একাদশে) সুযোগ পাব কি না, তা তো পরে বোঝা যাবে৷ তবে সুযোগ পেলে নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টাই থাকবে।”