কলকাতার ২৬১ রান তাড়া করে পাঞ্জাবের জয় ও রেকর্ডময় ম্যাচ নিয়ে ক্রিকেটবিশ্বে আলোচনার ঝড়।
Published : 27 Apr 2024, 11:10 AM
ম্যাচ তখন শেষের পথে। ধারাভাষ্যে কেভিন পিটারসেন বললেন, “এই ম্যাচের হাইলাইটস প্যাকেজটা খুব মজার হবে। এমনিতে তো সাধারণত ৩০ মিনিটের প্যাকেজ থাকে, এই ম্যাচের হাইলাইটস তো হবে ৪ ঘণ্টা...!" ইংল্যান্ডের সাবেক বিধ্বংসী ব্যাটসম্যান আসলে ভুল কিছু বলেননি। ৩৯ ওভারে ৪২ ছক্কা হয়েছে যে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, এক দল ২৬১ করার পর প্রতিপক্ষ টপকে গেছে ৮ বল বাকি রেখে, সেই ম্যাচ পুরোটাই তো হাইলাইটস!
আইপিএলে শুক্রবার কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে পাঞ্জাব কিংসের অবিশ্বাস্য জয়ের ম্যাচ আলোচনার ঝড় তুলেছে ক্রিকেট বিশ্বে।
ইডেন গার্ডেন্সে ফিল সল্টের ৩৭ বলে ৭৫, সুনিল নারাইনের ৩২ বলে ৭১ ও কয়েকজনের ক্যামিও ইনিংস মিলিয়ে কলকাতা তোলে ২০ ওভারে ২৬১ রান। সেই রান তাড়ায় পাঞ্জাবকে ঝড়ো সূচনা এনে দেন প্রাভসিমরান সিং (২০ বলে ৫৪)। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টোর ৪৮ বলে অপরাজিত ১০৮ ও শশাঙ্ক সিংয়ের ২৮ বলে ৬৮ রানের অপরাজিত ইনিংসে পাঞ্জাব জিতে যায় ৮ উইকেটে।
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এই প্রথম কোনো দল ২৬০ রান তাড়ায় জিততে পারল। এই সংস্করণে এক ম্যাচে সবচেয়ে বেশি ছক্কার রেকর্ড ছিল ৩৮টি। এবারের আইপিএলেই দুটি ম্যাচে যে রেকর্ড হয়েছিল। সেটিকে পেছনে ফেলে এই ম্যাচে ছক্কা হলো ৪২টি।
আইপিএলে প্রথমবার কোনো ম্যাচে দুই দলের চার ওপেনারই পেরিয়েছেন পঞ্চাশ। দুইশর বেশি স্ট্রাইক রেটে ফিফটি ছুঁয়েছেন পাঁচ ব্যাটসম্যান, এক টি-টোয়েন্টিতে এটিও রেকর্ড।
এসব পরিসংখ্যানেই ফুটে ওঠে, কতটা অসহায় ছিলেন বোলাররা। এমন দুঃস্বপ্নের ভেতর দিয়ে বোলারদের যেতে দেখে ম্যাচ চলার সময়ই রবিচন্দ্রন অশ্বিন বোলাদের জন্য ‘এসওএস’ বা জরুরি বার্তা পাঠানোর তাগিদ অনুভব করলেন। ভারতের স্পিন গ্রেট সামাজিক মাধ্যমে লিখলেন, “দয়া করে কেউ এসওএস পাঠান ‘বোলারদের রক্ষা করুন।”
পাঞ্জাবের রান তিন ওভারে যখন প্রয়োজন ৩৪ রান, অষ্টাদশ ওভারে বেয়ারস্টো ও শশাঙ্ক মিলে রান নেন ২৫। শেষ দুই ওভারে তখন প্রয়োজন দাঁড়ায় মাত্র ৯ রানের। অশ্বিন তখন যোগ করেন, “২৬০ রানের বেশি তাড়ায় শেষ দুই ওভারে কেবল বলপ্রতি রান লাগে… ব্যাপারটা হজম করতে দিন…।”
সবাই অবশ্য বোলারদের প্রতি সহানুভূতি খুঁজে পাচ্ছেন না। অশ্বিনের মতোই যিনি ছিলেন অফ স্পিনার, ইংল্যান্ডের গ্রায়েম সোয়ান যেমন ব্যাটারদের তাণ্ডবই উপভোগ করতে চান এই সংস্করণে। ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের কথার উত্তরে তিনি তা জানিয়ে দিয়েছেন স্পষ্ট।
এবারের আইপিএলে রানের যে সুনামি বয়ে চলেছে, সেটিই উঠে আসে ভোগলের প্রতিক্রিয়ায়, “কত রান আসলে যথেষ্ট? প্রতিটি দিনই যেন এই সীমানা বেড়ে চলেছে।” সেটির জবাবে সোয়ান লিখেন, “তবে দেখার জন্য তো এসব দারুণ! বোলারদের জন্য টেস্ট আছে, টি-টোয়েন্টি ব্যাটসম্যানদেরই প্রাপ্য।”
ধারাভাষ্যকার ইয়ান বিশপ যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছেন, কিংবা কিছু না বলেও বোঝাতে চাইলেন অনেক কিছু। তার ছোট্ট প্রতিক্রিয়া কেবল, ‘হুমমমম….।” শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের কাছে এই রান তাড়া ছিল, “বিনোদনের চূড়ান্ত।”
ব্যাট হাতে যিনি নিজেও তাণ্ডব চালান নিয়মিত এবং দারুণ সব রান তাড়ায় দলকে জিতিয়েছেন, সেই জস বাটলারের অবাক প্রতিক্রিয়া, “এটা ছিল সাংঘাতিক!”
পাঞ্জাবের রান তাড়ায় মূল নায়ক বেয়ারস্টো হলেও চারে নামা শশাঙ্ক সিংয়ের ভূমিকা কম ছিল না মোটেও। এবারের আইপিএলে আগেও দারুণ কয়েকটি ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যান এই ম্যাচে পরিস্থিতির দাবি পুরোপুরি মিটিয়ে ৮ ছক্কায় ২৮ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত থাকেন।
তার কথা আলাদা করে উল্লেখ করলেন দক্ষিণ আফ্রিকার পেস কিংবদন্তি ও সানরাইজার্স হায়দরাবাদের সাবেক বোলিং কোচ ডেল স্টেইন।
“শশাঙ্কের জন্য এর চেয়ে বেশি খুশি আর হতে পারতাম না। কয়েক বছর আগে আমাদের সঙ্গে সানরাইজার্স হায়দরাবাদে ছিল যে। কঠোর পরিশ্রম করে, অসাধারণ এক ছেলে, নিজের সবটুকু উজাড় করে দেয় এবং সবসময় মুখে হাসি লেগেই আছে। দারুণ করেছো বন্ধু, দারুণভাবেই প্রাপ্য তোমার।”
রানের এই উৎসব ও ব্যাটিংয়ের বিবর্তন দেখে উচ্ছ্বসিত আকাশ চোপড়া। সাবেক ভারতীয় ব্যাটসম্যান ও ধারাভাষ্যকার এখন এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার চ্যালেঞ্জটা ছুড়ে দিলেন বোলারদের দিকে।
“এই ধরনের ম্যাচকে কিভাবে বর্ণনা করা যায়? সম্ভবত, ‘ঐতিহাসিক’ বললেই কেবল উপযুক্ত হয়। ২৬২ রান তাড়া করা হয়ে গেল ৮ বল ও ৮ উইকেট বাকি রেখে। আর কত কী সম্ভব!”
“ব্যাটাররা তাদের সত্যিকারের সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দিয়েছে… এখন দায়িত্বটি বোলারদের, মানিয়ে নেওয়া ও বিবর্তনের কাজটি যেন তারা ব্যাটারদের চেয়েও ভালো করতে পারে।”
ক্রিকেটের সেই বির্বতনের পালা ফুঠে উঠল পাঞ্জাবের অধিনায়ক স্যাম কারানের কণ্ঠে।
"ক্রিকেট এখন বেসবলে পরিণত হচ্ছে, তাই না? অবিশ্বাস্য ছিল এই রান তাড়া। কোত্থেকে বলা শুরু করব! তবে সবচেয়ে বেশি খুশি হয়েছি ম্যাচ জিতে এবং দুটি পয়েন্ট পেয়ে। আসলে এই ধরনের ম্যাচ মনে হয় যেন দুনিয়ার বাইরের কিছু।"
পাঞ্জাবের এই রান তাড়ার পর সামনেই যে আলোচনা হতে পারে, সেই প্রশ্নটিই তোলা হলো লাক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের এক্স প্রোফাইল থেকে, “৩০০ রানও কি যথেষ্ট?”