সমর্থকদের উদ্দেশ্যে রবিচন্দ্রন অশ্বিন বললেন, 'সবার মনে রাখা উচিত আমরা এই দেশেরই ক্রিকেটার।'
Published : 30 Mar 2024, 08:08 PM
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের অধিনায়ক হিসেবে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি হার্দিক পান্ডিয়ার। আসরে প্রথম দুই ম্যাচে দল তো হেরেছেই, দর্শকদের দুয়োও শুনতে হয়েছে তাকে। জাতীয় দলের সতীর্থের সঙ্গে দেশের মানুষের এমন আচরণ কোনোভাবেই মানতে পারছেন না রবিচন্দ্রন অশ্বিন। অভিজ্ঞ স্পিনার সবাইকে মনে করিয়ে দিলেন, তারা ভারতেরই ক্রিকেটার।
আইপিএলের গত দুই আসরে গুজরাট টাইটান্সকে নেতৃত্ব দিয়ে একটি শিরোপা জেতানো পান্ডিয়াকে এবার দলে ফেরায় মুম্বাই। রোহিত শার্মাকে সরিয়ে অধিনায়ক করা হয় তাকে। মুম্বাইকে নেতৃত্ব দিয়ে পাঁচটি আইপিএল শিরোপা জেতানো রোহিতকে অধিনায়কের পদ থেকে সরানোটা সমর্থকদের অনেকেই ভালোভাবে নেয়নি।
একদিকে পান্ডিয়ার গুজরাট থেকে চলে যাওয়া, অন্যদিকে রোহিতকে মুম্বাইয়ের নেতৃত্ব থেকে সরানো, দুই দলের সমর্থকদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ দেখা যায় মুম্বাইয়ের প্রথম ম্যাচে, যেদিন তারা গুজরাটের মুখোমুখি হয়। টসের জন্য পান্ডিয়া মাঠে আসার পর গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ‘রোহিত, রোহিত’ চিৎকার। গ্যালারির বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তাকে দুয়ো দেওয়া শুরু হয়।
ম্যাচটি ৬ রানে হেরে যায় মুম্বাই। সানরাইজার্স হায়দরাবাদের বিপক্ষে পরের ম্যাচেও একই অভিজ্ঞতা হয় পান্ডিয়ার। দুয়ো শোনার পাশাপাশি টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রানের ম্যাচে ৩১ রানে হারের স্বাদ পায় তার দল।
পান্ডিয়ার জন্য ক্রমেই কঠিন হয়ে ওঠা পরিস্থিতি সামলাতে মুম্বাইয়ের কোনো বিবৃতি দেওয়া উচিত কিনা, নিজের ইউটিউব চ্যানেলে আলাপকালে এমন প্রশ্নের সম্মুখীন হন অশ্বিন। রাজস্থান রয়্যালসের এই ক্রিকেটার বলেন, এই ধরনের বাজে দৃশ্যের অবসান ঘটানো সমর্থকদের দায়িত্ব, ক্লাবের নয়।
“এই খেলোয়াড়রা কোন দেশের প্রতিনিধিত্ব করে, মানুষের তা মনে রাখা উচিত। এটা আমাদের দেশ। সমর্থকদের লড়াই কখনোই এতটা বাজে হওয়া উচিত নয়। আমি বহুবার বলেছি, এমন কিছু সিনেমার সংস্কৃতি, এটা শুধু এখানেই (ভারতে) হয়।”
“জানি মার্কেটিং, ব্র্যান্ডিং ও পজিশনিংয়ের মতো অনেক বিষয় রয়েছে। আমি এসব অস্বীকার করছি না, তবে অন্য কোনো দেশে এমন লড়াই ঘটতে দেখেছেন কি? জো রুট ও জ্যাক ক্রলির সমর্থকদের মধ্যে লড়াই দেখা যায়? নাকি জো রুট ও জস বাটলার সমর্থকদের লড়াই হয়? এটা পাগলামি। অস্ট্রেলিয়ায় প্যাট কামিন্সের ভক্তদের সঙ্গে স্টিভেন স্মিথ ভক্তদের লড়াই দেখেন?”
রোহিতের নেতৃত্বে ২০১৫ থেকে টানা সাত আসর খেলেছেন পান্ডিয়া। সেই রোহিতকে এখন খেলতে হচ্ছে পান্ডিয়ার নেতৃত্বে, যা মানতে পারছেন না দর্শকদের একটি অংশ। অশ্বিন বললেন, এটা তো নতুন কিছু নয়। আগেও ভারতের অনেক গ্রেট ক্রিকেটার একে অপরের অধিনায়কত্বে খেলেছেন।
“আমি বুঝি না, কোনো ক্রিকেটারকে ভালো না লাগলে এবং তাকে দুয়ো দেওয়া হলে ক্লাবকে কেন এর ব্যাখ্যা দিতে হবে? আমরা এমন ভাব করছি যেন, এমন ঘটনা আগে ঘটেনি।”
“সাচিন টেন্ডুলকারের নেতৃত্বে সৌরভ গাঙ্গুলি খেলেছেন, উল্টোটাও হয়েছে। এই দুজন আবার রাহুল দ্রাবিড়ের অধিনায়কত্বে খেলেছেন। এই তিনজন অনিল কুম্বলের নেতৃত্বে এবং তারা সকলেই এমএস ধোনির নেতৃত্বে খেলেছেন। ধোনির নেতৃত্বে যখন তারা খেলেছিলেন, তখন এই খেলোয়াড়রা ক্রিকেটের গ্রেট ছিলেন। ধোনিও বিরাট কোহলির নেতৃত্বে খেলেছেন।”
অশ্বিন মনে করেন, অন্যের দোষ খোঁজার আগে সবার নিজেকে দেখা উচিত। তার মতে, সিনেমার সংস্কৃতির সঙ্গে কখনোই খেলাধুলাকে মেলানো ঠিক নয়।
“সমস্যাটা কী জানেন? আমরা সবাই খুশি মনে ঘরে বসে বাইরের আবর্জনার দিকে তাকায়। নিজেরা এটি না সরিয়ে আশা করি, অন্য কেউ পরিষ্কার করবে।”
“খেলাটিতে সত্যিকারের খেলোয়াড় থাকে, তাদের আবেগ জড়িয়ে থাকে, এখানে কিছুই পূর্ব লিখিত নয়। নায়কদের বন্দনা করা ভালো, কিন্তু সিনেমার সঙ্গে খেলাধুলার কখনোই তুলনা করা ঠিক নয়। নিজের প্রিয় খেলোয়াড় বা দলের যে দিকটা ভালো লাগে সেটা আপনি উপভোগ করতেই পারেন, কিন্তু তার জন্য অন্য আরেকজন খেলোয়াড়কে নিচে নামিয়ে নয়। এই ব্যাপারটা আমাদের দেশ থেকে চিরতরে অদৃশ্য হয়ে যেতে দেখতে চাই।”
পান্ডিয়ার নেতৃত্বে মুম্বাই পরের ম্যাচে খেলবে অশ্বিনের দল রাজস্থানের বিপক্ষে, আগামী সোমবার।