বিশ্বকাপ জয়ের আবেগময় উদযাপনে মুম্বাইয়ে লাখো মানুষের শুভেচ্ছার আর ভালোবাসার বৃষ্টিতে সিক্ত গোটা ভারতীয় দল।
Published : 05 Jul 2024, 02:23 PM
সুবিশাল মেরিন ড্রাইভের অবস্থা ছিল ‘তিল ঠাঁই আর নাহি রে।’ লোকে লোকারণ্য চারপাশ, লাখো মানুষের গর্জনে প্রকম্পিত গোটা মুম্বাই। বিশ্বকাপজয়ী নায়কদের এক নজর দেখতে, শুভেচ্ছা জানাতে, বিজয় উল্লাসে শামিল হতে ভেঙে পড়েছিল যেন গোটা মুম্বাই। সমর্থকদের এই আবেগ-ভালোবাসার জোয়ার দেখে আপ্লুত রোহিত শার্মা, ভিরাট কোহলিসহ গোটা ভারতীয় দল।
মুম্বাইয়ে ভারতীয় দলের ‘ভিক্টরি প্যারেডের’ অসংখ্য ছবি, ভিডিও ক্লিপ ভারত হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে গোটা ক্রিকেট বিশ্বে। সেসব ছবিতেই ফুটে উঠেছে, ক্রিকেটপাগল ভারতীয়রা একটি বিশ্ব শিরোপার জন্য কতটা বুভুক্ষু ছিল।
আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, দিল্লি থেকে ভারতীয় দল মুম্বাইয়ে আসার পর বিকেল ৫টার পরপর কোনো সময়ে এই বিজয়যাত্রা শুরু হবে। তবে দুপুর থেকেই মেরিন ড্রাইভে সমাবেত হতে থাকেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। অবস্থা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, যে ছাদখোলা বাসে ওঠার কথা ভারতীয় দলের, সেই বাস ভিড়ে আটকা পড়ে যায় ক্রিকেটারদের নেওয়ার আগেই!
মুম্বাইয়ে আসার আগেই ক্লান্তিতে নুয়ে অবসন্ন থাকার কথা ক্রিকেটারদের। বারবাডোজ থেকে লম্বা ফ্লাইটে দিল্লিতে পা রাখেন তারা বৃহস্পতিবার ভোরে। বিমানবন্দরে এক দফা আয়োজনে তাদেকে স্বাগত জানানো হয়। এরপর বিশেষ আয়োজন ছিল দিল্লির একটি হোটেলে। সেখানে নানা আনুষ্ঠানিকতা শেষে গোটা দল যায় প্রধানমন্ত্রীর বাসবভনে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সংবর্ধনা দেন গোটা দলকে। এরপর আবার ফ্লাইটে তারা দিল্লি থেকে আসেন মুম্বাইয়ে।
কিন্তু বিজয়যাত্রা যখন শুরু হয়, ক্লান্তির ছাপ দেখা যায়নি কারও মধ্যেই। ছাদখোলা বাসে নেচে-গেয়ে, চিৎকার করে, সবটুকু সময় মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে উল্লাস করেন ক্রিকেটার, কোচিং স্টাফের সবাই। ভারতীয় বোর্ডের সচিব ও সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি বলে বিবেচিত জয় শাহও ছিলেন বাসে।
রোহিত শার্মার জন্য এরকম ছাদখোলা বাসে বিজয় উদযাপন নতুন কিছু নয়। ১৭ বছর আগে প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়ের পরও এই অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেই সময়ের ২০ বছর বয়সী উঠতি এই ব্যাটসম্যানের। সেই স্মৃতি তার মনে আলাদা জায়গা নিয়ে থাকবে সবসময়ই। তবে এবার ছাদখোলা বাসেই উল্লাসের ফাঁকেই ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, এই জয় তার কাছে একটুই বেশিই বিশেষ।
“২০০৭ সালের অনুভূতি ভিন্ন ছিল। আমরা বিকেলে শুরু করেছিলাম, এবার সন্ধ্যায় শুরু হলো। ২০০৭ কখনোই ভোলার নয়, প্রথম বিশ্বকাপ বলে কথা! তবে এবার আরেকটু বেশিই স্পেশাল, কারণ এবার দলকে নেতৃত্ব দিয়েছি। আমার জন্য তাই খুবই গর্বের উপলক্ষ।”
“মানুষের এই উত্তেজনা, রোমাঞ্চ দেখেই সব বুঝতে পারছেন… এতেই ফুটে উঠছে, শুধু আমাদের জন্য নয়, গোটা জাতির জন্য এই শিরোপার অর্থ কতটা… এটার আবেদন বিশাল। আমার ভালো লাগছে যে, এই মানুষদের জন্য কিছু অর্জন করতে পেরেছি আমরা।”
‘ভিক্টরি প্যারেড’ শেষে ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে গোটা দলকে সংবর্ধনা দেওয়া হয় ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে। এখানেও গ্যালারিতে ছিলেন হাজারও দর্শক। যথারীতি মাঠেও প্রাণশক্তিতে ভরপুর হয়েই নেচেগেয়ে উদযাপন করতে দেখা যায় ক্রিকেটারদের।
ওয়াংখেড়েরে বিজয়মঞ্চে দাঁড়িয়ে রোহিত আবার তুলে ধরলেন, এই শিরোপা কত বড় আনন্দের উপলক্ষ হয়ে এসেছে তাদের জন্য।
“বিশ্বকাপ নিয়ে দেশে ফিরতে পেরে গোটা দুনিয়া পেয়ে গেছি আমরা। গত ১১ বছরে যে মানুষগুলি আমাদের সমর্থন করেছেন, খেলা দেখেছেন, এই শিরোপা তাদের জন্য। আমাদের সবার সঙ্গে তারাও এই ট্রফি ফিরে আসার অপেক্ষায় ছিল। শেষ পর্যন্ত আমরা তা পেরেছি, আমি খুবই খুশি ও নির্ভার।”
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ছিলেন না ভিরাট কোহলি। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপজয়ী দলে তিনি ছিলেন। তবে তখনও তিনি তরুণ তারকা। ‘কোহলি’ হয়ে ওঠার পর তার প্রথম বিশ্বকাপ জয় এটিই। এই বিজয় উৎসবের স্মৃতি তাই তার মনে জ্বলজ্বলে হয়ে থাকবে আজীবন।
“স্টেডিয়ামে যারা এসেছেন, সবার প্রতি দারুণ কৃতজ্ঞতা। আজকে পথে পথে আমরা যা দেখেছি, জীবনেও ভুলতে পারব না তা।”
“গত চারদিন ছিল আমাদের জন্য রোলার-কোস্টার ভ্রমণের মতো। বিশ্বকাপ জয়ের পরপরই আমরা বারবাডোজ ছেড়ে ভারতে আসতে এবং সবার সঙ্গে উপভোগ করতে মুখিয়ে ছিলাম। কিন্তু হারিকেনের কারণে আটকা পড়ে যাই। অনেকটা অ্যান্টি-ক্ল্যাইম্যাক্সের মতো ছিল। তবে ফেরার পর থেকে যা কিছু হচ্ছে, অসাধারণ সব কিছু।”