পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
বাংলাদেশের আমিনুল ইসলাম বুলবুলকে মনে করিয়ে দেওয়া সেঞ্চুরিটির পর পাকিস্তানি এই ক্রিকেটার বললেন, অনেক উপেক্ষার পরও দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে গেছেন তিনি।
Published : 16 Oct 2024, 09:30 AM
বয়স পেরিয়ে গেছে ২৯। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট ক্যারিয়ারের শুরু সেই ২০১৩ সালে। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে, পঞ্চাশের কাছাকাছি গড় আর ১৬ সেঞ্চুরিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার রান করে, বল হাতে দক্ষতা দেখিয়ে, পাকিস্তান ‘এ’ দলে দুর্দান্ত পারফর্ম করে তবেই মাথায় উঠেছে টেস্ট ক্যাপ। অনেক প্রতীক্ষার পর পাওয়া সুযোগটি দারুণভাবেই কাজে লাগাতে পারলেন কামরান গুলাম। অভিষেকে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানি এই অলরাউন্ডার যেন তার হার না মানা মানসিকতার পুরস্কার পেলেন।
মুলতানে ইংল্যান্ড-পাকিস্তান দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনের নায়ক ছিলেন কামরান। টেস্ট অভিষেকের দিনটি স্মরণীয় করেন রাখেন তিনি ১১ চার ও ১ ছক্কায় ১১৮ রানের ইনিংস খেলে।
অভিষেকে চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করা মাত্র ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান তিনি। সবশেষ নজিরটি ছিল ২৪ বছর আগের। বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে ইনিংসটি খেলেছিলেন আমিনুল ইসলাম।
কামরানের জন্য এই দিন এবং এই ইনিংসটি কতটা আবেগময়, তা ফুটে উঠেছে সেঞ্চুরির পর তার উদযাপনেই। অভিষেকে সেঞ্চুরি করা যে কোনো ক্রিকেটারের জন্যই বড় স্বপ্ন। তবে তার জন্য এটি আরও বেশি স্পেশাল, কারণ অনেক বন্ধুর পথ মাড়িয়ে, অনেক উপেক্ষা ও অপেক্ষার যন্ত্রণা চাপা দিয়ে, কঠিন লড়াই করে তবেই এই জয়ের গল্প তিনি রচনা করেছেন।
অভিষেকের দিনটি শেষে কামরান গর্ব নিয়েই অতীতকে বয়ে নিয়ে এলেন বর্তমানে।
“এই সুযোগটির জন্য দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করছিলাম। তবে কখনও হাল ছাড়িনি। সুযোগের অপেক্ষা করে গেছি। স্রেফ এটিই ভেবেছি। বারবার স্কোয়াডে ডাক পেয়েছি ও বাদ পড়ে গেছি। এজন্যই সবসময় শুধু ভেবেছি, যখনই সুযোগ পাব, কীভাবে কাজে লাগাব…।”
“প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রচুর রান করেছি। ভেন্যু বা দলের ব্যাপার তাই আমার মাথায় আসেনি। স্রেফ অভিষেকের সুযোগটা কাজে লাগাতে হতো। জানতাম যে, অনেক পরিশ্রম করে এই সুযোগটা পেয়েছি। সৌভাগ্যবশত, এটা কাজে লেগেছে।”
কঠিন পরীক্ষায় পড়তে হয়েছে তাকে টেস্ট অভিষেকের ইনিংসেও। দশম ওভারে যখন ব্যাট হাতে মাঠে নামেন তিনি, ১৯ রান তুলতেই ২ উইকেট হারিয়ে তখন প্রবল চাপে পাকিস্তান। কামরানের ব্যাটিংয়ে অবশ্য সেই চাপের ছাপ পড়েনি। অভিষেকের অস্বস্তিও বোঝা যায়নি। সাবলিল ব্যাটিং করে বুঝিয়ে দেন, এটা তারই আঙিনা!
সাইম আইয়ুবের সঙ্গে ১৪৯ রানের জুটিতে চাপ সরিয়ে দেন অনেক দূরে। ৭৭ রান করে সাইমের বিদায়ের পর সাউদ শাকিল দ্রুত ফিরলে মোহাম্মদ রিজওয়ানের সঙ্গে আরেকটি কার্যকর জুটি গড়েন কামরান।
শেষ বেলায় আউট হয়ে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করতে পারেননি তিনি। তবে নিজেকে মেলে ধরার তৃপ্তি তার আছে।
“যখন ক্রিজে গিয়েছি, আমরা তখন দ্রুত দুটি উইকেট হারিয়েছি। তবে আমি চেয়েছি ইতিবাচক মানসিকতায় খেলতে, যেভাবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে খেলে থাকি। এটিই আমার ভাবনায় ছিল এবং নিজের সহজাত খেলা খেলতে চেয়েছি।”
অভিষেক ম্যাচ বা দলের পরিস্থিতির চাপ তো ছিলই, কামরানের জন্য অদৃশ্য এক বড় চাপও ছিল। তিনি দলে এসেছেন যে বাবর আজমের বদলে! বিশ্রামের মোড়কে বাদ পড়েছেন বাবর। তার মতো একজনের জায়গায় নেওয়া মানে বাড়তি কৌতূহলের খোরাক জাগানো। ব্যর্থ হলে প্রশ্ন ওঠার শঙ্কাও বেশি।
সেই ভাবনা খেলে গেছে কামরানের মনেও। তবে ভালো করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তিনি।
“বাবর খুবই ভালো ক্রিকেটার। আমার মনের কোণেও এরকম ভাবনা এসেছে যে কিংবদন্তির বদলে খেলছি, খুবই ভালো ক্রিকেটার সে। তবে ঠিক করেছিলাম যে, ১১০ ভাগ দিয়ে খেলব এবং ইতিবাচক মানসিকতায় মাঠে নামব। জানতাম যে, এই সুযোগ কাজে লাগাতেই হবে। সুযোগটি যখন এলো, কাজে লাগাতে পেরেছি।”
কামরানের সেঞ্চুরিতে প্রথম দিনে মঙ্গলবার ৫ উইকেটে ২৫৯ রান তোলে পাকিস্তান।