শতরানের জুটিতে শান্ত-জাকিরের ‘প্রথম’

চতুর্থ ইনিংসের কঠিন লড়াইয়ে বাংলাদেশকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন দুই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

শাহাদাৎ আহমেদ সাহাদচট্টগ্রাম থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Dec 2022, 06:23 AM
Updated : 17 Dec 2022, 06:23 AM

‘১০ মিনিট পর বিরতি, একটি উইকেট নিয়ে নাও। পানি পান করতে ভালো লাগবে। চেষ্টা করো ভাইয়েরা। কেউ উইকেট দেবে না, আমাদেরই নিতে হবে। চেষ্টা করো’- স্টাম্পের পেছন থেকে উচ্চস্বরে বলছিলেন রিশাভ পান্ত। একটি উইকেটের জন্য ভারতীয় কিপার দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছিলেন অনেক। কিন্তু কাজ হয়নি। নিয়ন্ত্রিত ব্যাটিংয়ে নির্বিঘ্নে প্রথম সেশন কাটিয়ে দিয়েছেন জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বাংলাদেশের দুই ওপেনার গড়েছেন রেকড গড়া জুটি।

মাথায় ৫১৩ রানের বোঝা। এর সঙ্গে প্রথম ইনিংসে স্রেফ ১৫০ রানে গুটিয়ে যাওয়ার গ্লানি। তৃতীয় দিন শেষ বিকেলে অমন কঠিন পরিস্থিতিতে উইকেটে গিয়েও জাকির ও শান্তর ব্যাটিংয়ে পড়েনি চাপের ছাপ। দিনের খেলা শেষ হওয়া পর্যন্ত ১২ ওভার দারুণ খেলেন দুজন। সেই ধারা বজায় রেখেছেন চতুর্থ দিন সকালেও। শনিবার প্রথম সেশনে কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। স্কোরবোর্ডে জমা পড়েছে ১১৯ রান।

তাতে দুজনের নাম লেখা হয়ে গেছে রেকর্ড বইয়ে। ভারতের বিপক্ষে ১২ টেস্টে বাংলাদেশের প্রথম শতরানের উদ্বোধনী জুটি এটিই।

শুরুর জুটিতে পঞ্চাশ এসেছিল আগে স্রেফ একবারই। ২০১০ সালের চট্টগ্রাম টেস্টে ৫৩ রান করেছিলেন তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েস।

জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শনিবার কুলদিপ যাদব ও মোহাম্মদ সিরাজ দুই প্রান্তে বোলিং শুরু করেন। এক ওভার পরই কুলদিপের জায়গায় আনা হয় রবিচন্দ্রন অশ্বিনকে। থার্ড ম্যান ও স্কয়ার লেগের ফিল্ডারকে সীমানায় রেখে বাউন্সারের ফাঁদ পাতেন সিরাজ। তাতে পা দেননি শান্ত। 

পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণের সঙ্গে দারুণ কিছু পুল-হুক খেলে ভারতের পরিকল্পনা ভেস্তে দেন বাঁহাতি এ ওপেনার। স্রেফ তিন ওভার পরই সরিয়ে দেওয়া হয় সিরাজকে। আক্রমণে আসেন উমেশ যাদব। দুজন মিলে টানা দশ ওভারের স্পেলে রানের গতি টেনে ধরেন। কিন্তু চিড় ধরাতে পারেননি জাকির-শান্তর আত্মবিশ্বাসে।

৪০ রানে পৌঁছে কিছুটা খোলসবন্দী হন শান্ত। পরের ১০ রান করতে খেলেন ৪৩ বল। ১৫ ইনিংস পর প্রথম ফিফটি স্পর্শ করেন ১০৮ বলে। অন্য প্রান্তে জাকির ছিলেন সাবলিল। উমেশ-অশ্বিনদের দারুণভাবে সামলে ৭ চারে ১০১ বলে ফিফটি পূরণ করেন অভিষিক্ত ওপেনার।

বাংলাদেশের হয়ে অভিষেক টেস্টে চতুর্থ ইনিংসে ফিফটি আছে আর কেবল সাব্বির রহমানের, এই মাঠেই ২০১৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৪।

শান্ত-জাকিরের মনোসংযোগে চিড় ধরাতে বাড়তি কিছুর আশ্রয় নেন মোহাম্মদ সিরাজ। লাঞ্চে আগে প্রায় প্রতি বলেই শান্তর কাছে গিয়ে কিছু না কিছু বলতে দেখা যায় তাকে। শান্ত অবশ্য র্লিপ্ত প্রতিক্রিয়া দেখান।  সিরাজের বলেই দারুণ এক পুল শটে বাউন্ডারি মেরে জুটির ১০০ রান পূরণ করেন তিনি। 

টেস্ট ক্রিকেটে উদ্বোধনী জুটিতে বাংলাদেশের নবম শতরান এটি। ভারতের বিপক্ষে সব জুটি মিলিয়ে শতরান এলো স্রেফ পঞ্চমবার। ২০১৭ সালের হায়দ্রাবাদ টেস্টে পঞ্চম উইকেটে সবশেষ ১০০ রান যোগ করেছিলেন সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিম।

ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে রান তাড়ার চাপ মাথায় নিয়ে উইকেটে গিয়ে বাংলাদেশ শুরুর জুটিতে শতরানের বন্ধন পেল কেবল দ্বিতীয়বার। সেই ২০০৫ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ বাঁচানোর লড়াইয়ে ৮৩ ওভারে ১৩৩ রানের জুটি গড়েছিলেন জাভেদ ওমর বেলিম ও নাফিস ইকবাল।