ওয়ানডে ক্রিকেটে ২০২২ সালটা স্বপ্নের মতো কেটেছে মেহেদী হাসান মিরাজের। ব্যাটে-বলে দারুণ অবদান রেখেছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে। এবার পারফরম্যান্সের স্বীকৃতিও পেলেন এই অলরাউন্ডার। প্রথমবারের মতো তার ঠাঁই হলো আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে।
মঙ্গলবার দুপুরে আইসিসি ঘোষণা করে ২০২২ সালের বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ। বাবর আজমের অধিনায়কত্বে অলরাউন্ডার হিসেবে দলে জায়গা পান মিরাজ।
বর্ষসেরা একাদশে বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি মিরাজই। দলে নিউ জিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ভারত ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আছেন দুজন করে। বাংলাদেশ ছাড়া পাকিস্তান ও জিম্বাবুয়ে থেকে সুযোগ পেয়েছেন একজন করে ক্রিকেটার।
বছরের শুরুতে আফগানিস্তান ও শেষের দিকে ভারতের বিপক্ষে ব্যাটিংয়ে অবিশ্বাস্য পারফরম্যান্স উপহার দেন মিরাজ। বছরজুড়ে বল হাতে ধারাবাহিক ছিলেন ২৫ বছর বয়সী অলরাউন্ডার।
সব মিলিয়ে ব্যাটিংয়ে একটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৬৬ গড়ে ৩৩০ রান করেন মিরাজ। বল হাতে ১৫ ম্যাচে ২৮.২০ গড়ে তার শিকার ২৪ উইকেট। ছয় বছরের ক্যারিয়ারে এক পঞ্জিকাবর্ষে এটিই তার সেরা ব্যাটিং বা বোলিং পারফরম্যান্স।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে চট্টগ্রামে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচে আফিফ হোসেনের সঙ্গে মিলে দুর্দান্ত এক জয় এনে দেন মিরাজ। স্রেফ ৪৫ রানে ৬ উইকেট পড়ার পর সপ্তম উইকেটে ১৭৪ রানের রেকর্ড জুটি গড়েন দুজন। মিরাজ অপরাজিত থাকেন ৮১ রানে, তখনও পর্যন্ত যা তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ।
সেটিকে তিনি টপকে যান ডিসেম্বরে। ভারতের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মুস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে দশম উইকেটে ৫১ রানের জুটি গড়ে দলকে জেতান মিরাজ। নিজে অপরাজিত থাকেন ৩৮ রানে। পরের ম্যাচে করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। আট নম্বরে নেমে তিনি খেলেন ৮ চার ও ৪ ছয়ে ৮৩ বলে ১০০ রানের অপরাজিত ইনিংস।
মিরাজদের বর্ষসেরা ওয়ানডে দলের অধিনায়কত্ব পাওয়া বাবরের ২০২২ সালও কেটেছে দুর্দান্ত। ব্যাট হাতে ৫ ফিফটি ও ৩ সেঞ্চুরিতে ৮৪.৮৭ গড়ে করেছেন ৬৭৯ রান। তার অধিনায়কত্বে ৯ ম্যাচের ৮টিই জিতেছে পাকিস্তান। তাই বাবরকেই দেওয়া হয়েছে বর্ষসেরা দলের অধিনায়কত্ব।
বাবরের সঙ্গে উদ্বোধনী জুটির দায়িত্বে আছেন অস্ট্রেলিয়ার ট্রাভিস হেড। গতবছর ৬৮.৭৫ গড় ও ১১২.৪৫ স্ট্রাইকরেটে ৫৫০ রান করেছেন হেড।
মিডল অর্ডারে আছেন আইসিসির পূর্ণ সদস্য দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ রান করা শ্রেয়ার আইয়ার (৭২৪ রান)। পরের নামগুলো যথাক্রমে শেই হোপ (৭০৯ রান), টম ল্যাথাম (৫৫৮ রান ও ১৬ ডিসমিসাল)।
অলরাউন্ডার হিসেবে মিরাজ ছাড়া আছেন জিম্বাবুয়ের সিকান্দার রাজা। ২০২২ সালে তিন সেঞ্চুরি ও দুই ফিফটিতে ৬৪৫ রান এবং ৮ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
বোলিং আক্রমণে রাখা হয়েছে তিন পেসার আলজারি জোসেফ (২৭ উইকেট), মোহাম্মদ সিরাজ (২৪ উইকেট) ও ট্রেন্ট বোল্ট (১৮ উইকেট) এবং লেগ স্পিনার অ্যাডাম জ্যাম্পাকে (৩০ উইকেট)।
আইসিসির ভোটিং একাডেমির ভোট, ক্রীড়া সাংবাদিকদের ভোট এবং অনলাইনে ক্রিকেট অনুসারীদের ভোটে চূড়ান্ত করা হয়েছে এআ একাদশ।
২০২২ সালের আইসিসি বর্ষসেরা ওয়ানডে একাদশ :
বাবর আজম (অধিনায়ক), ট্রাভিস হেড, শেই হোপ, শ্রেয়াস আইয়ার, টম ল্যাথাম (উইকেটকিপার), সিকান্দার রাজা, মেহেদী হাসান মিরাজ, আলজারি জোসেফ, মোহাম্মদ সিরাজ, ট্রেন্ট বোল্ট ও অ্যাডাম জ্যাম্পা।
মেয়েদের বর্ষসেরা ওয়ানডে দল
নারী ক্রিকেটে বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আছেন সর্বোচ্চ তিন জন করে। অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের দুই জন করে এবং নিউ জিল্যান্ড থেকে আছেন একজন।
দুই ওপেনারের একজন হিসেবে জায়গা পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার অ্যালিসা হিলি। গত বছরটা দুর্দান্ত কাটে তার, বিশেষ করে বিশ্বকাপের নকআউট পর্বে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সেমি-ফাইনালে খেলেন ১২৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। পরে ফাইনালে জয়ের পথে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১৩৮ বলে খেলেন ১৭০ রানের বিধ্বংসী ইনিংস।
ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে ওয়ানডে বিশ্বকাপ ইতিহাসের ফাইনালে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস এটি। ৫০৯ রান করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ স্কোরার ছিলেন তিনিই, মেয়েদের বিশ্বকাপের এক আসরে যা সর্বোচ্চ।
দলের আরেক ওপেনার ভারতের স্মৃতি মান্ধানা ২০২২ পঞ্জিকাবর্ষে একটি সেঞ্চুরির সঙ্গে হাফ সেঞ্চুরি করেন ছয়টি। একমাত্র সেঞ্চুরিটি বিশ্বকাপে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১২৩। পরে ইংল্যান্ড সফরেও ব্যাট হাতে আলো ছড়ান এই বাঁহাতি।
দক্ষিণ আফ্রিকার লরা উলভার্ট বছর জুড়ে উজ্জ্বল ছিলেন। ফেব্রুয়ারিতে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিনি খেলেন ১১৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। পরে নিউ জিল্যান্ডে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে করেন চারটি ফিফটি। বছরের মাঝামাঝি আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ৮৯ রানের পর দুটি ফিফটি করেন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।
হিলির মতো বিশ্বকাপে আলো ছড়ান ইংল্যান্ডের ন্যাট সিভারও। ফাইনালে রান তাড়ায় দল হারলেও তিনি খেলেন অপরাজিত ১৪৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। দুই সেঞ্চুরিতে আসরে তিনি করেন ৪৩৬ রান। বছরে ওয়ানডেতে ৮৩৩ রানের পাশাপাশি তিনি হাত ঘুরিয়ে উইকেট নেন ১২টি।
২০২২ সালে মাত্র ১০ ওয়ানডে ইনিংসে খেলেই ৪০৩ রান করেন অস্ট্রেলিয়ার বেথ মুনি। আউট হন তিনি মাত্র চারবার, ব্যাটিং গড় তাই ১০০ এর ওপরে। আর স্ট্রাইক রেট ৯৬,৪১। মেয়েদের ক্রিকেটে সেরা ব্যাটারদের একজন তিনি অনেক দিন ধরেই।
দলের অধিনায়ক হিসেবে আছেন ভারতের হারমানপ্রিত কাউর। গত বছর তিনি করেন দুটি সেঞ্চুরির সঙ্গে পাঁচটি ফিফটি। হাত ঘুরিয়ে নেন ৫ উইকেট। সাত নম্বরে অলরাউন্ডার হিসেবে থাকা নিউ জিল্যান্ডের অ্যামিলিয়া কার ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে সেঞ্চুরির পর টানা তিনটি ফিফটি করেন ভারত সফরে।
দলের চার বোলার হিসেবে আছেন ইংল্যান্ডের সোফি এক্লেস্টোন (৩৪ উইকেট), দক্ষিণ আফ্রিকার আয়াবঙ্গা খাকা (২৭ উইকেট), ভারতের রেনুকা সিং (১৮ উইকেট) ও দক্ষিণ আফ্রিকার শাবনিম ইসমাইল (৩৭ উইকেট)।
২০২২ সালের মেয়েদের বর্ষসেরা ওয়ানডে দল:
অ্যালিসা হিলি (উইকেটরক্ষক, অস্ট্রেলিয়া), স্মৃতি মান্ধানা (ভারত), লরা উলভার্ট (দক্ষিণ আফ্রিকা), ন্যাট সিভার (ইংল্যান্ড), বেথ মুনি (অস্ট্রেলিয়া), হারমানপ্রিত কাউর (অধিনায়ক, ভারত), অ্যামেলিয়া কার (নিউ জিল্যান্ড), সোফি এক্লেস্টোন (ইংল্যান্ড), আয়াবঙ্গা খাকা (দক্ষিণ আফ্রিকা), রেনুকা সিং (ভারত), শাবনিম ইসমাইল (দক্ষিণ আফ্রিকা)