পাল্টা আক্রমণে ভারতকে চাপে রেখেই ঐতিহাসিক সিরিজ জয়, বললেন নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক টম ল্যাথাম।
Published : 27 Oct 2024, 01:10 PM
সেই ১৯৫৫ সাল থেকে ভারতে সফর করছে নিউ জিল্যান্ড। হার্ভি কেভের সেই দল থেকে জন রিড, গ্রাহাম ডাওলিং, লি জারমন, স্টিভেন ফ্লেমিং, ড্যানিয়েল ভেটোরি, কেন উইলিয়ামসন- কত অধিনায়ক অনেক স্বপ্ন নিয় গেছেন ভারত সফরে। প্রতিবারই মুখ থুবড়ে পড়তে হয়েছে। নিউ জিল্যান্ড ক্রিকেটের সেই অধরা অর্জন এবার ধরা দিয়েছে টম ল্যাথামের হাত ধরে।
নেতৃত্ব ল্যাথামের জন্য নতুন কিছু নয়। এই সফরের আগেও ১০টি টেস্টে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি নানা সময়ে। তবে সবকটিই ছিল নিয়মিত অধিনায়কের অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত দায়িত্বে। নিয়মিত অধিনায়ক হওয়ার পর প্রথম সিরিজেই এমন এক সাফল্য তিনি এনে দিলেন, প্রায় ৭০ বছর ধরে যেটির অপেক্ষায় ছিল কিউই ক্রিকেট। ভারতে টেস্ট সিরিজ জয়ী প্রথম নিউ জিল্যান্ড অধিনায়ক ল্যাথাম। তার উচ্ছ্বাসও যেন তাই আকাশছোঁয়া।
এবারের আগে সিরিজ জয় তো বহু দূরের পথ, একটি টেস্ট জিততেই বছরের পর বছর অপেক্ষায় থাকতে হতো নিউ জিল্যান্ডকে। ভারতে আগের ৩৬ টেস্টে কিউইদের জয় ছিল কেবল দুটি। এবার দুই টেস্ট মিলে গেল দুটি জয়।
শুধু নিউ জিল্যান্ডের জন্য নয়, ভারত সফরকে ক্রিকেট বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জগুলির একটি মনে করা হয় সব দলের জন্যই। গত প্রায় ১২ বছরে দেশের মাঠে সিরিজ হারেনি তারা। ৪ হাজার ৩৩১ দিন পর ভারতীয়দের দেশের মাঠে সিরিজ পরাজয়ের স্বাদ দিল ল্যাথামের দল।
জয়ের পর এই আনন্দ প্রকাশের কোনো পথ যেন খুঁজে পাচ্ছেন না ল্যাথাম।
“আমি অনেকটা… বলতে পারেন, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। অবশ্যই দলের জন্য দারুণ গৌরবময় মুহূর্ত এটি। শ্রীলঙ্কা সিরিজে প্রত্যাশিত ফল না পাওয়ার পর এখানে এসে যে ঘরানার ক্রিকেট আমরা খেলেছি, তা দারুণ। দুই ম্যাচেই সিরিজ জিতে আমরা খুব গর্বিত।”
“নিউ জিল্যান্ডের অনেক দল এখানে এসেছে যুগে যুগে। এখানে সিরিজ জিততে পারা প্রথম দল হতে পারাটা স্পেশাল এক অর্জন এবং এই দল নিয়ে আমি গর্বিত।”
এই সিরিজের আগে শ্রীলঙ্কায় দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশড হয়ে এসেছে নিউ জিল্যান্ড। সেখানে প্রাবাথ জায়াসুরিয়া, নিশান পেইরিস, ধানাঞ্জায়া ডি সিলভাদের স্পিনেই চোখে সর্ষে ফুল দেখছেন কিউই ব্যাটসম্যানরা। কিউই বোলারদের হতাশার করে বড় রান করেছেন কামিন্দু মেন্ডিস, কুসাল মেন্ডিস, দিনেশ চান্ডিমালরা।
ওই সিরিজের পরপরই নেতৃত্ব ছেড়ে দেন টিম সাউদি। নেই দায়িত্ব পান ল্যাথাম। ভারতে দলের খেলার ধরন পাল্টে ফেলায় জোর দেন তিনি ও টিম ম্যানেজমেন্ট।
সিরিজ জয়ের পর ল্যাথাম জানালেন, আগ্রাসনের পথ ধরে সাফল্যের ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন তারা।
“আমরা এখানে এসে চেয়েছি পাল্টা জবাব দিতে। ব্যাটিং ও বোলিংয়ে আমরা চেয়েছি ভারতকে চাপে রাখতে। নিশ্চিতভাবেই আমরা তা পেরেছি। বিশেষ করে, ব্যাট হাতে আমরা এই সিরিজে যেভাবে খেলেছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। এমন উইকেটে খেলা হয়েছে, যেখানে সময় কাটানো বড় ব্যাপার ছিল না, রান করাটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ।”
“যেটা বললাম, প্রথম থেকেই আমরা চেয়েছি আক্রমণ করে ভারতকে চাপে রাখতে। দুই ম্যাচেই আমরা তা পেরেছি, প্রথম ম্যাচে বোলিংয়ে, দ্বিতীয় ম্যাচে এখানে ব্যাটিংয়ে। প্রথম ইনিংসে রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। আর বোলাররা সিরিজুড়েই যা করেছে, তা দেখাটা দারুণ তৃপ্তির।”
প্রথম টেস্টে বেঙ্গালুরুতে ভারতকে ৪৬ রানে গুটিয়ে দিয়ে চমকে দেয় নিউ জিল্যান্ড। পরে তারা বড় লিড নেয় দলীয় রান চারশ ছাড়িয়ে। দ্বিতীয় ইনিংসে ভারত লড়াই করলেও আবার ঘুরে দাঁড়িয়ে ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেন ল্যাথামরা।
দ্বিতীয় টেস্টে পুনেতে কিউইদের জন্য স্পিন সহায়ক উইকেটের কৌশল নেয় ভারত। দলে ফেরা ওয়াশিংটন সুন্দারের দারুণ বোলিংয়ে কিউইরা অলআউট হয় ২৫৯ রানে। কিন্তু মিচেল স্যান্টনারের স্পিনে পাল্টা জবাব দেয় নিউ জিল্যান্ডও। ভারতের ইনিংস শেষ হয় ১৫৬ রানে।
দ্বিতীয় ইনিংসে সুইপের পর সুইপ খেলে ভারতীয় স্পিনারদের এলোমেলো করে দেন ল্যাথাম নিজে। এরপর স্যান্টনারের আরেকটি দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে ১১৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয় নিউ জিল্যান্ড।
সিরিজ জয়ের পর এবার তাদের সামনে হোয়াইটওয়াশ-ইতিহাসের হাতছানি। মুম্বাইয়ে শেষ টেস্ট শুরু শুক্রবার।