২০১৫ সালে হোবার্ট হারিকেন্সের স্রেফ একজন সমর্থক হিসেবে যিনি ছিলেন গ্যালারিতে, ১০ বছর পর ২২ গজে তার সেঞ্চুরিতেই দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিগ ব্যাশের শিরোপা জিতল দলটি।
Published : 27 Jan 2025, 08:08 PM
ফাইনালে ২০ ওভারে ১৮৩ রানের লক্ষ্য চ্যালেঞ্জিং বটে। তবে সিডনি থান্ডারের বোলাররা কোনো চ্যালেঞ্জই জানাতে পারল না প্রতিপক্ষকে। তাদের নিয়ে রীতিমতো ছেলেখেলা করলেন মিচেল ওয়েন। রান তাড়ায় খুনে ব্যাটিংয়ে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি উপহার দিলেন তিনি। দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে বিগ ব্যাশের শিরোপা জিতল হোবার্ট হারিকেন্স।
হোবার্টের ঘরের মাঠ বেলেরিভ ওভালে সোমবার ফাইনালে ৭ উইকেটে জিতেছে ন্যাথান এলিসের নেতৃত্বাধীন দলটি। ১৮৩ রানের লক্ষ্য ছুঁয়ে ফেলেছে তারা ১৪.১ ওভারেই।
আসরে নিজেদের প্রথম ম্যাচে যারা গুটিয়ে গিয়েছিল তাদের সর্বনিম্ন ৭৪ রানে, সেই দলই শেষ পর্যন্ত উঁচিয়ে ধরল ট্রফি!
অস্ট্রেলিয়ার এই টি-টোয়েন্টি প্রতিযোগিতার ১৪ বছরের পথচলায় দুটি ফাইনালে হারের পর তৃতীয়টিতে এসে ট্রফির ছোঁয়া পেল হোবার্ট।
ফাইনালের নায়ক ওয়েন। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ২০১৫ সালে গ্যালারিতে বসে হোবার্টের জন্য গলা ফাটাচ্ছেন ১৩ বছর বয়সী ওয়েন। ১০ বছর পর ম্যাচ জয়ী সেঞ্চুরিতে তিনিই দলটিকে এনে দিলেন শিরোপার স্বাদ। সত্যিই যেন স্বপ্ন!
২৩ বছর বয়সী ওয়েন সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন স্রেফ ৩৯ বলে, বিগ ব্যাশের ইতিহাসে যা যৌথভাবে দ্রুততম। ২০১৪ আসরে পার্থ স্কর্চার্সের হয়ে অ্যাডিলেইড স্ট্রাইকার্সের বিপক্ষে সমান বলে তিন অঙ্ক ছুঁয়েছিলেন আরেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রেইগ সিমন্স।
আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে ওপেনার ওয়েন ৪২ বলে করেন ১০৮ রান। যেখানে ১১টি ছক্কার পাশে চার ৬টি।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে ৬২ বলে ৯৭ রানের উদ্বোধনী জুটির পরও ৭ উইকেটে ১৮২ রানের বেশি করতে পারেনি সিডনি থান্ডার। দুই ওপেনার অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার (৩২ বলে ৪৮) ও জ্যাসন স্যাঙ্ঘা (৪২ বলে ৬৭) ছাড়া আর কেউ ত্রিশ পর্যন্ত যেতে পারেননি।
হোবার্টের হয়ে দারুণ বোলিংয়ে ৩টি করে উইকেট নেন অধিনায়ক এলিস ও রাইলি মেরেডিথ।
লক্ষ্য তাড়ায় প্রথম ওভারে ন্যাথান ম্যাকঅ্যান্ড্রুকে একটি ছক্কা ও দুটি চার মেরে ডানা মেলে দেন ওয়েন। তৃতীয় ওভারে ওয়েস অ্যাগারকে তিনটি ছক্কার সঙ্গে চার মারেন তিনি একটি। ফিফটি পূর্ণ করেন স্রেফ ১৬ বলে।
উদ্বোধনী জুটিতে ক্যালেব জুয়েলের সঙ্গে তিনি যোগ করেন ৪৪ বলে ১০৯ রান, যেখানে ওয়েন একাই করেন ৮৫।
সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়ে যায় তার দশম ওভারেই। পরের ওভারে যখন বিদায় নেন তিনি, জয়ের জন্য হোবার্টের দরকার আর ৫৮ বলে ৪৪ রান। বেন ম্যাকডারমটের ১২ বলে ১৮ ও ম্যাথু ওয়েডের ১৭ বলে ৩২ রানের সুবাদে দ্রুতই জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে যায় দলটি।
ওয়েনের ওপেনিংয়ে উঠে আসার গল্পটাও চমকপ্রদ। ২০২১ সালে বিগ ব্যাশ দিয়েই টি-টোয়েন্টি অভিষেক হয় তার। চলতি আসরের আগে পেস বোলিং অলরাউন্ডার হিসেবে তিনি ব্যাটিং করতেন সাত কিংবা আট নম্বরে।
হোবার্টের হয়ে প্রথম চার আসর মিলিয়ে তিনি খেলতে পারেন কেবল ১৩ ম্যাচ। রান করতে পারেন মোটে ৭৯। সর্বোচ্চ ইনিংস ছিল ২৮।
এবারের আসরে তাকে তুলে আনা হয় ওপেনিংয়ে। দ্বিতীয় ম্যাচেই ৬৩ বলে সেঞ্চুরি করে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দেন তিনি। পার্থের বিপক্ষে ওই ম্যাচে রান তাড়ায় ৫ ছক্কা ও ৯ চারে ৬৪ বলে অপরাজিত ১০১ রানের ইনিংস খেলে দলকে জেতান এই তরুণ।
ফাইনালে রান তাড়ায় আরেকটি বিধ্বংসী সেঞ্চুরিতে দলকে এনে দিলেন ট্রফি।
১১ ম্যাচে ২০৩.৬০ স্ট্রাইক রেটে ৪৫২ রান করে আসরের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকও তিনিই।