চিটাগং কিংসকে হারিয়ে পয়েন্ট টেবিলের দুইয়ে উঠেছে ফরচুন বরিশাল।
Published : 19 Jan 2025, 05:34 PM
আগের ম্যাচে জয় এনে দেওয়া জুটি এবার শুরুতেই ভেঙে গেল ভুল বোঝাবুঝিতে। রান আউট হয়ে ফিরে গেলেন তামিম ইকবাল। ফেরার আগে আউট নিয়ে দাভিদ মালানের সঙ্গে কিছুটা মনোমালিন্য হলো তার। অধিনায়কের সঙ্গে ওই ঘটনার পর নিজের করণীয় বুঝে নিলেন মালান। আরেকপ্রান্তে দ্রুত আরও তিন উইকেট হারালেও শেষ পর্যন্ত শঙ্কা উড়িয়ে অবিচল থেকে দলের জয়ের ধারা ধরে রাখলেন অভিজ্ঞ ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরি স্টেডিয়ামে অল্প পুঁজি নিয়েও বরিশালকে ভড়কে দিয়েছিল চিটাগং কিংস। তবে স্থানীয় দলকে হতাশায় ডুবিয়ে ৬ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
বিপুল সমর্থকগোষ্ঠি থাকা বরিশাল ও ঘরের মাঠের দল চিটাগংয়ের খেলা হওয়ায় এদিন দর্শক আগ্রহ ছিল তুঙ্গে। ম্যাচের প্রথম ইনিংস শেষ হওয়ার আগেই পূর্ণ হয়ে যায় গ্যালারি। কিন্তু টি-টোয়েন্টির মারকাটারি ক্রিকেটের বিনোদন দিতে পারেনি তাদেরকে চিটাগং।
ফাহিম আশরাফ ও রিপন মণ্ডলের বোলিং তোপে ১২১ রানে আটকে যায় চিটাগং। রান তাড়ায় শুরুতে হোঁচট খেলেও মালানের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ১৯ বল বাকি থাকতেই জয় নিশ্চিত করে বরিশাল।
সাত ম্যাচে বরিশালের এটি পঞ্চম জয়। চিটাগংকে তিনে নামিয়ে দুইয়ে উঠল তারা। সমান ম্যাচে চিটাগংয়ের জয় চারটি।
আবার বাদ শান্ত
প্রথম দুই ম্যাচে ব্যর্থতার পর তৃতীয়টিতে নাজমুল হোসেন শান্তকে বাদ দিয়েছিল বরিশাল। এক ম্যাচ পরই অবশ্য ফেরেন তিনি। তিন ম্যাচ খেলে আবার বরিশালের একাদশে জায়গা হারালেন জাতীয় দলের অধিনায়ক।
এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে তার সংগ্রহ ৫৬ রান। চার ইনিংসেই দুই অঙ্ক ছুঁতে পারেননি। শান্তর জায়গায় একাদশে ফেরেন লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন।
পাওয়ার প্লেতে চিটাগংয়ের সর্বনাশ
টস হেরেও ব্যাটিং পেয়ে চিটাগং কিংস অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বলেন, টস জিতলে তিনি ব্যাটিংই নিতেন। চিটাগংয়ের ইনিংসের শুরুটাও ছিল দারুণ। ম্যাচের প্রথম ওভারে জাহান্দাদ খানকে বলে দুই চার ও এক ছক্কা মারেন উসমান খান। পরের ওভারে তানভির আহমেদের বলে চার মারেন তিনি।
তবে দ্রুতই চিত্র বদলে যায়। তৃতীয় ওভারে বোলিংয়ে এসে বিপজ্জনক উসমানকে (১৩ বলে ১৯)। ফেরান রিপন।
ওই ওভারে গ্রাহাম ক্লার্ককেও হারায় চিটাগং। ক্রিজে গিয়ে প্রথম দুই বলে চার মারার এক বল পরই রিপনের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন ছন্দে থাকা ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
পরের ওভারে ফাহিমের জোড়া আঘাত। দ্বিতীয় বলে পারভেজ হোসেন ও শেষ বলে হায়দার আলিকে ফেরান পাকিস্তানি অলরাউন্ডার।
মাত্র ১ রান করতে পারেন পারভেজ। সাত ম্যাচে ফিফটি তো দূরের কথা, একবারও ৪০ ছুঁতে পারেননি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির বাংলাদেশ দলে থাকা তরুণ ওপেনার।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে শামীম হোসেনকেও আউট করে চিটাগংকে কোণঠাসা করে দেন ফাহিম। ৩৯ রানে হারায় তারা ৫ উইকেট।
চিটাগংয়ের ব্যাটিংয়ের লেজ এ দিন ছিল বেশ লম্বা। সাতে নামে আলিস আল ইসলাম, স্বীকৃতি ক্রিকেটে যিনি কখনও ২৫ রানও করতে পারেননি। এ দিনও পারেননি ব্যতিক্রমী কিছু করতে। শূন্য রানে ফেরেন তিনি সাত বল খেলে।
চিটাগংয়ের রান তখন ৬ উইকেটে ৫৬।
মিঠুন-সানির লড়াই
স্বীকৃত সব ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে একাই লড়াই চালিয়ে যান মিঠুন। অষ্টম ওভারে জাহান্দাদের বলে পুল করে ছক্কার পর চার মারেন চিটাগং অধিনায়ক।
পরে আট নম্বরে নেমে মিঠুনের সঙ্গে জুটি বাধেন আরাফাত সানি। দুজন মিলে ৩৭ বলে গড়েন ইনিংসের সর্বোচ্চ ৩১ রানের জুটি।
১৫তম ওভারে মিঠুনকে ড্রেসিং রুমে পাঠান তানভির। ছক্কা মারার চেষ্টায় লং অন সীমানায় মাহমুদউল্লাহর হাতে ক্যাচ দেন ৩৫ রান করা ব্যাটসম্যান।
এরপর একপ্রান্ত আগলে রেখে শেষ পর্যন্ত খেলেন সানি। ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ২ চারে ৩৪ বলে ২৭ রান করেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার।
মিঠুন ও সানির চেষ্টায় কোনোমতে ১২০ পেরিয়ে যায় চিটাগং।
ফাহিম ৩, রিপন ৩
চিটাগংয়ের ব্যাটিং নাড়িয়ে দিয়ে ৩টি করে উইকেট নেন ফাহিম ও রিপন। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রান দেন ফাহিম। রিপনের খরচ ২৩ রান।
চার ওভারে কেবল ১২ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন বাঁহাতি স্পিনার তানভির ইসলাম। ফেরার ম্যাচে ৩ ওভারে ২৫ রান খরচায় উইকেটশূন্য থাকেন রিশাদ।
শুরুতে বরিশালের হোঁচট
রান তাড়ায় ব্যাটিংয়ে নেমে একদমই সুবিধা করতে পারেননি তামিম আকিবাল। জড়তা কাটিয়ে ওঠার আগেই চতুর্থ ওভারে দাভিদ মালানের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হন বরিশাল অধিনায়ক। শর্ট কাভারে উসমান খানের দারুণ ফিল্ডিংয়েরও অবদান আছে সেখানে।
পরের ওভারে বোলিংয়ে এসে প্রথম বলেই তাওহিদ হৃদয়কে আউট করেন সৈয়দ খালেদ আহমেদ। কভারে বেশ নিচু হয়ে ক্যাচ নেন পারভেজ। রিপ্লে দেখে আউটের সিদ্ধান্ত জানান থার্ড আম্পায়ার।
গত বৃহস্পতিবার খুলনা টাইগার্সের বিপক্ষে জেতার পর মায়ের মৃত্যুর খবর পেয়েছিলেন খালেদ। তাই পরের ম্যাচ খেলা হয়নি তার। এক ম্যাচ পর দলে ফিরে প্রথম বলেই সাফল্য পেয়ে যান তিনি।
সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে মাঠেই অসন্তোষ প্রকাশ করেন হৃদয়। ডাগআউটে চতুর্থ আম্পায়ারের সঙ্গে এটি নিয়ে কথা বলেন তামিম। তাতে অবশ্য ফায়দা হয়নি কোনো।
২ উইকেট হারিয়ে পাওয়ার প্লেতে মাত্র ২৮ রান করতে পারে বরিশাল।
রিভার্স সুইপে ধরা মুশফিক, ছক্কার চেষ্টায় আউট মাহমুদউল্লাহ
প্রায় দুই সপ্তাহ পর ব্যাট হাতে বিপিএলের ২২ গজে নামলেন মুশফিকুর রহিম। সবশেষ তিন ম্যাচে ব্যাটিংই পাননি তিনি। এবার নেমেও ভালো কিছু করতে পারেননি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান।
চাপ সরাতেই হয়তো সানির বলে রিভার্স সুইপের চেষ্টা করেন মুশফিক। কিন্তু পয়েন্ট ফিল্ডারকে পার করতে পারেননি। ১০ বলে ১১ রান করে আউট হন তিনি।
সানির পরের ওভারে চমৎকার দুটি শটে বাউন্ডারি মারেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু তিনিও টিকতে পারেননি।
দশম ওভারে খালেদের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ছক্কা মারার চেষ্টায় হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। লং অন থেকে অনেকটা দৌড়ে বৃত্তের কাছে এসে দারুণ ক্যাচ নেন ক্লার্ক।
১০ ওভারে বরিশালের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৫৬ রান।
দায়িত্ব নিয়ে নায়ক মালান
অন্য প্রান্তে ব্যাটসম্যানদের আসা-যাওয়ার মিছিলে বিচলিত হননি মালান। শুরুতে কিছু সময় নেন তিনি। একপর্যায়ে ২০ বলে তার ছিল ১৮ রান। পরে ধীরে ধীরে খোলস থেকে বেরিয়ে বাড়ান রানের গতি।
ত্রয়োদশ ওভারে আলিসের বল ছক্কায় ওড়ান মালান। এক ওভার পর সানির বাঁহাতি স্পিনে ডিপ মিড উইকেট দিয়ে বড় ছক্কা মারেন তিনি। ধীরস্থির শুরুর পর মাত্র ১৬ বলে ৩২ রান করেন তিনি। বিপিএলে নিজের পঞ্চম ও ক্যারিয়ারের ৬৫তম ফিফটি করতে ৩৬ বল খেলেন ইংলিশ ব্যাটসম্যান।
ছয় নম্বরে নামা মোহাম্মদ নাবি দারুণ সঙ্গ দেন মালানকে। দুজন মিলে গড়েন মাত্র ৪৪ বলে ৬৯ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি। ২১ বলে ২৬ রানে অপরাজিত থাকেন নাবি। আগের ম্যাচে ৪৯ রানে অপরাজিত থাকা মালান এবার খেলেন ৫৬ রানের ইনিংস।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
চিটাগং কিংস: ২০ ওভারে ১২১/৮ (উসমান ১৯, পারভেজ ১, ক্লার্ক ৮, মিঠুন ৩৫, হায়দার ১, শামীম ৫, আলিস ০, সানি ২৭*, খালেদ ৯, শরিফুল ৫*; জাহান্দাদ ৩-০-৩১-০, তানভির ৪-০-১৪-২, রিপন ৪-০-২৩-৩, ফাহিম ৪-০-১২-৩, রিশাদ ৩-০-২৫-০, নাবি ২-০-৬-০)
ফরচুন বরিশাল: ১৬.৫ ওভারে ১২২/৪ (তামিম ৮, মালান ৫৬*, হৃদয় ১, মুশফিক ১১, মাহমুদউল্লাহ ১৬, নাবি ২৬*; ফার্নান্দো ৩-০-২২-০, শরিফুল ৩-০-১৮-০, আলিস ৩-০-২১-০, খালেদ ৩.৫-০-২৭-২, সানি ৪-০-৩৩-১)
ফল: ফরচুন বরিশাল ৪ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: দাভিদ মালান