ঘরের মাঠে প্রথম ম্যাচেই জ্বলে উঠলেন গায়ানার রূপকথার নায়ক শামার জোসেফ, তবে দুর্দান্ত বোলিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে জবাব দিলেন ভিয়ান মুল্ডার।
Published : 16 Aug 2024, 11:03 AM
গায়ানার দুর্গম গ্রাম থেকে উঠে এসে শামার জোসেফের অস্ট্রেলিয়া মাতানোর অবিশ্বাস্য গল্প এখন ক্রিকেট বিশ্বের প্রায় সবার জানা। সেই রূপকথার নায়ক এবার ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টেও জ্বলে উঠলেন আগুনে বোলিংয়ে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকাও কম যায় না। আগুনে বোলিংয়ে জবাব দিলেন ভিয়ান মুল্ডার ও নান্দ্রে বার্গার। সব মিলিয়ে দুই দলের ব্যাটসম্যানদের দুর্দশায় শেষ হলো নাটকীয় প্রথম দিন।
১৩ বছর পর টেস্ট ক্রিকেট ফিরল গায়ানার এই প্রভিডেন্স স্টেডিয়ামে। প্রথম দিনটিতেই লড়াই জমে উঠল তীব্র। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংস শেষ ১৬০ রানেই। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দিন শেষ করে ৭ উইকেটে ৯৭ রান নিয়ে।
এমনিতে গায়ানার উইকেট বরাবরই একটু মন্থর ও স্পিন সহায়ক বলে পরিচিত। এবার দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। ঝকঝকে আকাশ আর চকচকে রোদেও বাতাসে বল সুইং করল দারুণভাবে। সিম মুভমেন্ট মিলল পিচে। সঙ্গে ছিল বেশ বাউন্স। সব মিলিয়ে পেসারদের দারুণ উপযোগী। তারা সেটা কাজে লাগালেন ভালোভাবেই।
৩৩ রানে ৫ উইকেট শিকার করেন শামার জোসেফ। বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ায় স্বপ্নের অভিষেক সিরিজের পর গত মাসে ইংল্যান্ড সফরটি ভালো কাটেনি তার। দেশের মাঠে অভিষেকে আবার দেখালেন নিজের ঝলক। ষষ্ঠ তার তৃতীয় ৫ উইকেট এটি।
নতুন বল হাতে নেওয়া জেডেন সিলস নেন ৩ উইকেট। দক্ষিণ আফ্রিকা এক পর্যায়ে একশর নিচে গুটিয়ে যাওয়ার শঙ্কায় ছিল। ৯৭ রানে তারা হারায় নবম উইকেট। শেষ উইকেটে ডেইন পেট ও নান্দ্রে বার্গার রেকর্ড জুটি গড়ে দলকে দেড়শ পার করান।
কঠিন উইকেটে সুবিধা করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরাও। লড়াই করেন কেবল জেসন হোল্ডার। দক্ষিণ আফ্রিকান অলরাউন্ডার মুল্ডার ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে ১৮ রানে নেন ৪ উইকেট। বাঁহাতি পেসার বার্গারের প্রাপ্তি দুটি।
উইকেটের সম্ভাব্য আচরণ অনুমান করতে পারেননি হয়তো দুই দলের অধিনায়কই। দুজনেরই চাওয়া ছিল আগে ব্যাটিং। টস জিতে সেই চাওয়া পূরণ হয় টেম্বা বাভুমার। কিন্তু প্রত্যাশা পূরণ হয়নি তাদের।
ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই দারুণ এক ড্রাইভে হোল্ডারকে চার মেরে শুরু করেন এইডেন মার্করাম। তবে উইকেটের মুভমেন্ট বোঝা যায় পরের বলেই। মার্করামের ব্যাটের কানায় লেগে থার্ড স্লিপের পাশ দিয়ে যায় বল। দ্রুতই বোলারদের দাপট দেখা যায়।
চতুর্থ ওভারে টনি ডি জর্জির স্টাম্প উড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে প্রথম উইকেট এনে দেন সিলস। মার্করামকে বোল্ড করে দেশের মাঠে প্রথম উইকেটের স্বাদ পান জোসেফ। বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হন প্রোটিয়া ব্যাটসম্যান। এক বল পর প্রোটিয়া অধিনায়ক বাভুমাকে শূন্যতে ফেরান এই পেসার।
তিনে নামা ট্রিস্টান স্টাবস প্রথম রানের দেখা পান ২০ বল খেলে। তবু ডেভিড বেডিংহ্যামের সঙ্গে লড়াই করে জুটি গড়ে তোলার চেষ্টা করেন তিনি। ৩৭ রানের জুটি গড়েন দুজন, শেষ উইকেটের আগে যেটি ছিল দলের সেরা জুটি!
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে স্টাবসকে ২৬ রানে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন হোল্ডার। বেডিংহ্যামকে ২৮ রানে থামান জোসেফ।
জোসেফ-সিলসের তোপে এরপর পরপর তিন ব্যাটসম্যান ফেরেন খালি হাতে-মুল্ডার, কেশাভ মহারাজ ও কাগিসো রাবাদা।
কিপার-ব্যাটসম্যান কাইল ভেরেইনা একটু লড়াই করার চেষ্টা করছিলেন। তাকে ২১ রানে বোল্ড করে ৫ উইকেট পূর্ণ করেন জোসেফ।
৯ উইকেটে ৯৭ থেকে পিট ও বার্গার দারুণ লড়াই করে কিছুটা বাড়ান দলের রান। শেষ জুটিতে ৬৩ রান যোগ করেন দুজন। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে যা দক্ষিণ আফ্রিকার রেকর্ড।
চারটি চার ও এক ছক্কায় ৩৮ রান করে অপরাজিত থাকেন পিট। ২৩ রান করা বার্গারকে ফিরিয়ে ইনিংস শেষ করেন বাঁহাতি স্পিনার গুডাকেশ মোটি।
ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজও ভুগতে থাকে শুরু থেকেই। দ্বিতীয় ওভারেই মিকাইল লুইকে বোল্ড করে দেন বার্গার। সপ্তম ওভারে আক্রমণে এসে মুল্ডার বিদায় করেন ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটকে।
তিনে নামা কেসি কার্টি কিছুটা সময় এক প্রান্ত আগলে রাখলেও মুল্ডারের দুর্দান্ত বোলিংয়ে অন্য প্রান্তে সুবিধা করতে পারেননি আলিক আথানেজ, কাভেম হজরা। ভালো খেলতে থাকা সেই কার্টিকেই ২৬ রানে আটকে দেন বার্গার।
একটু পর জশুয়া দা সিলভাকে ফিরিয়ে যখন নিজের চতুর্থ শিকার ধরলেন মুল্ডার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ তখন কাঁপছে ৬ উইকেটে ৫৬ রান নিয়ে।
সপ্তম উইকেটে কিছুটা প্রতিরোধ গড়েন জেসন হোল্ডার ও গুডাকেশ মোটি। দিনটাও শেষ করে দেওয়ার পথে ছিলেন তারা। শেষ বেলায় মহারাজকে সুইপ করতে গিয়ে মোটি ফেরেন ১১ রানে। জুটি থামে ৪১ রানে।
৩৩ রানে অপরাজিত থাকা হোল্ডারের দিকেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বিতীয় দিনে তাকিয়ে থাকবে রান কিছু বাড়ার আশায়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৫৪ ওভারে ১৬০ (মার্করাম ১৪, ডি জর্জি ১, স্টাবস ২৬, বাভুমা ০, বেডিংহ্যাম ২৮, ভেরেইনা ২১, মুল্ডার ০, মহারাজ ০, রাবাদা ০, পিট ৩৮*, বার্গার ২৩; হোল্ডার ১২-৪-২৬-১, সিলস ১৪-৩-৪৫-৩, জোসেফ ১৪-৪-৩৩-৫, ওয়ারিক্যান ৮-১-১৯-০, মোটি ৬-১-২৮-০)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১ম ইনিংস: ২৮.২ ওভারে ৯৭/৭ (ব্র্যাথওয়েট ৩, লুই ০, কার্টি ২৬, আথানেজ ১, হজ ৪, হোল্ডার ৩৩*, জশুয়া ৪, মোটি ১১; রাবাদা ১১-৩-২৬-০, বার্গার ৭-১-৩২-২, মুল্ডার ৬-২-১৮-৪, মহারাজ ৪.২.১-৬-১)।