মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় ৯০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড গড়লেন ভারতের দুই ব্যাটার।
Published : 28 Jun 2024, 05:08 PM
অভিষেক টেস্টে সেঞ্চুরির খুব কাছে গিয়েও চার রানের দূরত্বে আটকা পড়েছিলেন শেফালি ভার্মা। পরের দুই টেস্টে আর পারেননি কাছাকাছি যেতে। এবার সেই দূরত্ব ঘুচিয়ে দিলেন তো বটেই, ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরিকে তিনি নিয়ে গেলেন ডাবল সেঞ্চুরির ঠিকানায়। এই পরিক্রমায় ভারতীয় ব্যাটার নিজে গড়লেন ছক্কার রেকর্ড আর স্মৃতি মান্ধানার সঙ্গে জুটিতে পৌঁছে গেলেন ইতিহাসের চূড়ায়।
দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চেন্নাই টেস্টের প্রথম দিনে ২৯২ রানের জুটি গড়েন মান্ধানা ও শেফালি। মেয়েদের টেস্ট ক্রিকেটের প্রায় ৯০ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় উদ্বোধনী জুটি এটিই। দুজনের স্ট্রোকের ছটায় রেকর্ড হয়েছে এ দিন আরও কিছু।
ডাবল সেঞ্চুরির পথে এ দিন ৮টি ছক্কা মারেন শেফালি। নারী টেস্টে এক ইনিংসে দুটির বেশি ছক্কা ছিল না এতদিন আর কোনো ব্যাটারের।
এমএ চিদাম্বারাম স্টেডিয়ামে শুক্রবার টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামে ভারত। শুরুতে থিতু হতে একটু সময় নেন দুজন। প্রথম ৮ ওভারে রান আসে ১৫। এরপর দুর্দান্ত সব শট খেলে ওয়ানডের গতিতে রান তুলতে থাকেন দুজন। লাঞ্চের আগে ২৮ ওভারে রান আসে ১৩০।
লাঞ্চের পর শতরান পূর্ণ করেন দুজনই। আগে মাইলফলকে পৌঁছান শেফালি। ২০ বছর বয়সী ব্যাটার প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১১৩ বলে। মান্ধানা দ্বিতীয় টেস্ট শতরানে পা রাখেন ১২২ বলে।
এরপরও ছুটতে থাকেন দুজন। দুইশ পেরিয়ে জুটির রান এগোতে থাকে তিনশর দিকে। দুজনের রানও ছিল পাশাপাশি। অফ স্পিনার ডেলমা টাকারকে ছক্কা মেরে আগে দেড়শ ছোঁয়ার সম্ভাবনা জাগান মান্ধানা। কিন্তু ওই ওভারেই আউট হয়ে যান ২৭ বছর বয়সী ব্যাটার।
ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে ২৭ চার ও ১ ছক্কায় ১৬১ বলে ১৪৯ রান করেন তিনি।
জুটি থামে ২৯২ রানে। উদ্বোধনী জুটিতে ২০ বছর পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দেন তারা। ২০০৪ সালে করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪১ রানের জুটিতে রেকর্ডটি গড়েছিলেন পাকিস্তানের কিরান বালুচ ও সাজিদা শাহ।
উদ্বোধনী জুটির বাইরে এর চেয়ে বড় জুটি নারী টেস্টের ইতিহাসে আছে আর কেবল একটি। ১৯৮৭ সালে ইংলান্ডের বিপক্ষে ৩০৯ রানের জুটি গড়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ার ডেনিস অ্যানেটস ও লিন্ডসে রিলার।
ভারতের হয়ে যে কোনো উইকেটে আগের সর্বোচ্চ জুটির রেকর্ড ছিল থিরুশ কামিনি ও পুনাম রাউতের। ২০১৪ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মাইশোরে দ্বিতীয় উইকেটে ২৭৫ রান যোগ করেছিলেন দুজন।
মান্ধানার বিদায়ের সময় ১৪১ রানে ছিলেন শেফালি। দ্রুতই দেড়শ পেরিয়ে চোখের পলকে যেন তিনি পৌঁছে যান দুইশতে। ১৯৪ বলে পূর্ণ হয় তার ডাবল সেঞ্চুরি। দেড়শ থেকে দুইশতে যেতে বল লাগে কেবল ৩৬টি।
দক্ষিণ আফ্রিকার কোনো বোলার তাকে থামাতে পারেনি। ২৩ চার ও ৮ ছক্কায় ১৯৭ বলে ২০৫ রান করে তার ইনিংস থামে রান আউটে।
মেয়েদের টেস্টে এক ইনিংস সর্বোচ্চ ছক্কা ছিল এতদিন স্রেফ দুটি। রেকর্ডটি যৌথভাবে ছিল ৫ ব্যাটারের। শেফালি নিজেও দুই দফায় দুটি করে ছক্কা মেরেছিলেন। এবার রেকর্ডটিকে তিনি নিয়ে গেলেন অন্যদের ধরাছোঁয়ার অনেকটা বাইরে।
ভারতীয় কোনো ব্যাটারের এটি দ্বিতীয় টেস্ট ডাবল সেঞ্চুরি। সর্বোচ্চ রানের রেকর্ডটি তিনি ছুঁতে পারেননি একটুর জন্য। ২০০২ সালে টন্টনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২১৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন মিতালি রাজ।
নারী টেস্টে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের বিশ্বরেকর্ড কিরান বালুচের। ২০০৪ সালে করাচিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২৪২ রান করেছিলেন পাকিস্তানের এই ব্যাটার।
মেয়েদের টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরি হলো এখন সব মিলিয়ে ১০টি।
শেফালি ও মান্ধানার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর ফিফটি করেন জেমিমা রদ্রিগস (৫৫)। অধিনায়ক হারমারপ্রিত কৌর দিন শেষ করেন ৪২ রানে অপরাজিত থেকে, কিপার রিচা ঘোষ ৪৩ রানে।
প্রথম দিনে ৯৮ ওভারে ভারত তোলে ৪ উইকেটে ৫২৫ রান। একগাদ রেকর্ড হয়ে যায় দলীয় স্কোরেও।
নারী টেস্টের ইতিহাসে এক দিনে এত রান আগে হয়নি কখনোই।
ভারতীয় দল ৫০০ রানের ইনিংসই খেলল এই প্রথমবার। তাদের আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০০২ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৪৬৭।
দলীয় সর্বোচ্চ রানের বিশ্বরেকর্ডও এখন বলা যায় স্রেফ সময়ের ব্যাপার। গত ফেব্রুয়ারিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেই রেকর্ডটি গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। পার্থে ইনিংস ঘোষণা করেছিল তারা ৯ উইকেটে ৫৭৫ রানে।