নাটকীয় টাইয়ের পর সুপার ওভার রোমাঞ্চে জিতল বাংলাদেশ

উত্তেজনায় ঠাসা ম্যাচে দারুণ জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল বাংলাদেশের মেয়েরা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 7 Nov 2023, 11:29 AM
Updated : 7 Nov 2023, 11:29 AM

সুপার ওভারের শেষ বলে প্রয়োজন ২ রান। অফ স্টাম্পের বাইরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে মিড অফের ওপর দিয়ে মারলেন নিগার সুলতানা। বল চলে গেল সীমানার বাইরে। বাঁধনহারা উল্লাসে ফেটে পড়লেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। মুহূর্তের মধ্যে তার সঙ্গে যোগ দিল পুরো দল।

মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে রোমাঞ্চকর টাইয়ের পর সুপার ওভার রোমাঞ্চে জিতল বাংলাদেশ। নাটকীয়তায় ভরা ম্যাচটি জিতে পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে ১-১ সমতা ফেরাল নিগারের দল।

মূল ম্যাচ টাই হওয়ার পর নাহিদা আক্তারের করা ওভারে ২ উইকেট হারিয়ে ৭ রান করে পাকিস্তানের মেয়েরা। রান তাড়ায় নাশরা সান্ধুর প্রথম বলেই দারুণ ইনসাইড আউট শটে চার মারেন সোবহানা মোস্তারি। 

পরের তিন বলে স্বর্ণা আক্তারের সঙ্গে মিলে নেন আরও ২ রান। দুই বলে ২ রানের সমীকরণে পঞ্চম বলে ক্রিজ ছেড়ে মারতে গিয়ে স্টাম্পড হন সোবহানা। ফলে জেঁকে বসে পরাজয়ের শঙ্কা। সেই শঙ্কা তুড়ি মেরে উড়িয়ে দারুণ বাউন্ডারিতে ম্যাচ শেষ করেন নিগার।

সতীর্থদের সঙ্গে উদযাপন শেষে ড্রেসিং রুমে ফেরার আগে প্যাভিলিয়নের ওপরের গ্যালারিতে নিজের বাবা-মায়ের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করতে দেখা যায় নিগারকে। সেখানে তখন সৃষ্টি হয় আবেগঘন এক মুহূর্ত।

মূল ম্যাচ জিততে পাকিস্তানের দুই বলে প্রয়োজন ছিল ১ রান, হাতে ছিল ১ উইকেট। ফাহিমা খাতুনের জোরের ওপর করা ডেলিভারিতে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি সান্ধু। উইকেটের পেছনে ধরতে পারেননি নিগারও। 

শর্ট ফাইন লেগে যাওয়া বলে রানের জন্য ছোটেন দুই ব্যাটার। নিশিতা আক্তারের দারুণ থ্রোয়ে নন স্ট্রাইকে রান আউট হন সান্ধু, ম্যাচ হয় টাই। এই সংস্করণে দুই দলেরই দ্বিতীয় টাই ম্যাচ এটি। গত জুলাইয়ে ভারতের বিপক্ষে প্রথম টাই করে বাংলাদেশ।

সুপার ওভারে জেতানোর আগে মূল ম্যাচেও বাংলাদেশকে লড়াই করার পুঁজি এনে দেওয়ার কারিগর নিগার। তার ৩ চারে ১০৪ বলে ৫৪ রানের ইনিংসে ৯ উইকেটে ১৬৯ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। পরে পাকিস্তান অলআউট হয় একই রানে। 

বাংলাদেশের অধিনায়কত্ব করা নিগারের ১৯তম ওয়ানডে এটি। তিনিই এখন বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি নেতৃত্ব দেওয়া ক্রিকেটার। এত দিন রেকর্ডটি ছিল রুমানা আহমেদ ও সালমা খাতুনের। দুজনই ১৮ ম্যাচে অধিনায়কত্ব করেন।

ফিফটির পর দুটি স্টাম্পিং করে রেকর্ড গড়ার উপলক্ষ্য রাঙিয়ে ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন নিগার। 

পাকিস্তানের রান তাড়ায় শুরু থেকেই আঁটসাঁট বোলিংয়ে রানের চাকা আটকে রাখে বাংলাদেশ। উদ্বোধনী জুটিতে ৪১ রান করতে ১০০ বল খেলেন সিদরা আমিন, সাদাফ শামস। সিদরাকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ফাহিমা। 

পরের ওভারে অভিজ্ঞ বিসমাহ মারুফকে কট বিহাইন্ড করেন রাবেয়া খান। ২৫তম ওভারে আরেক ওপেনার সাদাফকে আউট করেন অভিষিক্ত নিশিতা। ৩ চারে ২৯ রান করতে ৮৩ বল খেলেন সাদাফ।

এরপর নিদা দার, আলিয়া রাজরা রানের গতিতে দম দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। দুজনকেই আউট করেন লেগ স্পিনার রাবেয়া। আলিয়া ২১ ও অধিনায়ক নিদা করেন ২৭ রান। 

এরপর ইরাম জাভেদ, নাজিহা আলভি, দিয়ানা বেগদের ব্যাটে ধীরে ধীরে জয়ের সম্ভাবনা জাগায় পাকিস্তান। তবে কেউই পুরো কাজ শেষ করতে পারেননি। চাপের মুহূর্তে স্নায়ুচাপ ধরে রেখে ম্যাচ টাই করে বাংলাদেশ। 

বল হাতে স্রেফ ২৯ রান খরচায় ৩ উইকেট নেন রাবেয়া। 

ম্যাচের প্রথমভাগে টস জিতে ব্যাটিং নেয় বাংলাদেশ। শামিমা সুলতানার জায়গায় একাদশে সুযোগ পাওয়া মুর্শিদা খাতুন দেন ইতিবাচক শুরুর আভাস। তবে ইনিংস বড় করতে পারেননি। ২ চারে ১৮ বলে ১২ রান করে ফেরেন তিনি। 

দ্বিতীয় উইকেটে ফারজানা হক, সোবহানার জুটিতে স্লথ হয়ে আসে রানের চাকা। দুজন মিলে ৬০ বলে যোগ করেন স্রেফ ২২ রান। নাশরা সান্ধুর বলে এলবিডব্লিউ হওয়া সোবহানা ৩৫ বলে করেন ১৬ রান। 

এরপর ফারজানার সঙ্গে জুটি বাধেন অধিনায়ক নিগার। তখনও বাড়েনি রানের গতি। দলীয় একশ পূর্ণ হওয়ার আগে ৩২তম ওভারে ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হন ফারজানা। ৩ চারে ৪০ রান করতে ৮৮ বল খেলেন অভিজ্ঞ ব্যাটার। 

এর আগের ওভারে ব্যক্তিগত ২২ রানের মাথায় মিড অফে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান নিগার। পরে ফাহিমা খাতুন ছাড়া আর কেউই তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি অধিনায়ককে। ২ চারে ১৭ বলে ১৬ রান করে ফাহিমা ফিরলে বাকিটা একাই টানেন নিগার।

৪৯তম ওভারে গিয়ে ৯৯ বলে তিনি পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের চতুর্থ ফিফটি। ইনিংসের শেষ ওভারে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

পুরো ইনিংসে বাংলাদেশের চার ব্যাটার হন স্টাম্পড আউট। ওয়ানডেতে এক ইনিংসে যা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ।

পাকিস্তানের হয়ে ২টি করে উইকেট নেন সাদিয়া ইকবাল, নাশরা সান্ধু। 

একই মাঠে শুক্রবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

বাংলাদেশ: ৫০ ওভারে ১৬৯/৯ (মুর্শিদা ১২, ফারজানা ৪০, সোবহানা ১৬, নিগার ৫৪, ফাহিমা ১৬, রিতু ৮, স্বর্ণা, নাহিদা ৭, রাবেয়া ৪, মারুফা ৫*, নিশিতা ২*; দিয়ানা ৯-০-৩৯-১, সাদিয়া ১০-২-৩২-২, সান্ধু ১০-১-২৭-২, নিদা ৭-০-৩০-০, উম্মে হানি ১০-০-২৫-১, বিসমাহ ৪-০-১৪-০)

পাকিস্তান: ৪৯.৫ ওভারে ১৬৯ (সাদাফ ২৯, সিদরা ২২, বিসমাহ ০, আলিয়া ২১, নিদা ২৭, ইরাম ১৫, নাজিহা ২২, দিয়ানা ১৪, উম্মে হানি ১১, সান্ধু ৪, সাদিয়া ১*; মারুফা ৭-২-১৭-১, নাহিদা ১০-১-৪৩-১, রাবেয়া ১০-২-২৯-৩, নিশিতা ৮-০-৩২-১, ফাহিমা ৯.৫-১-৩৬-১, স্বর্ণা ৫-১-১১-০)

ফল: টাই (বাংলাদেশ সুপার ওভারে জয়ী)

প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: নিগার সুলতানা