চতুর্থ দিন সকালে ২৫ মিনিট আর ২৪ রানে শেষ বাংলাদেশের ইনিংস, ৭ উইকেটের দারুণ জয় দক্ষিণ আফ্রিকার।
Published : 24 Oct 2024, 12:08 PM
তৃতীয় দিনের খেলা শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের বোলিং কোচ মুশতাক আহমেদ বারবার বলেছিলেন দলের ভেতরের বিশ্বাসের কথা। কিন্তু সেই বিশ্বাসের কোনো প্রতিফলন পড়ল না ২২ গজে। না দেখা গেল পারফরম্যান্সের প্রতিজ্ঞা, না হলো মেহেদী হাসান মিরাজের সেঞ্চুরি, না জমে উঠল কোনো লড়াই। চতুর্থ দিনে বাংলাদেশকে পাত্তা না দিয়ে এক সেশনেই কাজ সেরে নিল দক্ষিণ আফ্রিকা।
মিরপুর টেস্টে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
৭ উইকেটে ২৮৩ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ চতুর্থ দিনে টিকতে পারে কেবল ২৫ মিনিট, যোগ করতে মোটে কেবল আর ২৪ রান।
৩০৭ রানে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে মেহেদী হাসান মিরাজ আউট হন ৯৭ রানে। টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথমবার নব্বইয়ে আটকা পড়লেন তিনি।
৪৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে আরও একবার বাংলাদেশের মূল হন্তারক কাগিসো রাবাদা। ৬৫ টেস্টের ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১৫ বার ইনিংসে ৫ উইকেটের স্বাদ পেলেন এই ফাস্ট বোলার।
শেষ ইনিংসে ১০৬ রানের লক্ষ্য ছুঁতে মোটেও বেগ পেতে হয়নি প্রোটিয়াদের। উইকেট যদিও তিনটি হারাতে হয়েছে, তবে রান তুলেছে তারা ওয়ানডের গতিতে। ম্যাচ শেষ লাঞ্চের মিনিট দশেক আগেই।
প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট শিকারি তাইজুল দ্বিতীয় ইনিংসেও নেন তিন উইকেট। তবে ম্যাচে ৯ উইকেট নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার নায়ক রাবাদা। যদিও প্রথম ইনিংসে পার্থক্য গড়ে দেওয়া ইনিংসে ম্যাচের সেরা কাইল ভেরেইনা।
দিনের শুরুতে অনুমিতভাবেই দ্বিতীয় নতুন বল নিয়ে আক্রমণ শুরু করে দক্ষিণ আফ্রিকা। সাফল্য মিলতেও সময় লাগেনি। ১৬ রান নিয়ে দিন শুরু করা নাঈম হাসান আউট হয়ে যান দিনের তৃতীয় বলেই। পিচ করে তীক্ষ্ণভাবে ভেতরে ঢোকা ডেলিভারিটি একটু বেশিই ভালো ছিল তার জন্য। রাবাদা পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।
পরের ওভারে দারুণ এক কাভার ড্রাইভে চার মেরে নব্বইয়ে পা রাখেন মিরাজ। একটু একটু করে এগিয়ে যেতে থাকেন শতরানের দিকে। তাইজুল ইসলাম তো বরাবরই ব্যাট হাতে নির্ভর করার মতো। মিরাজের সেঞ্চুরি ও দলের লড়াইয়ের আশা তাই তখনও ছিল।
মুল্ডারের বলে দারুণ এক শটে চার মারেন তাইজুলও। কিন্তু একটু বেশি সাহসী হয়ে যাওয়াতেই হয়তো বিপত্তি। চার মারার এক বল পরই ক্যাচ তুলে দেন তিনি স্লিপে।
দলের আশা তখন শেষ। আশা কেবল মিরাজের মাইলফলক ঘিরে। কিন্তু ধরা দিল না সেটিও। শেষ জুটি বলেই হয়তো একটু অস্থির হয়ে উঠছিলেন মিরাজ। রাবাদার লেংথ বলে জায়গা বানিয়ে র্যাম্প শট খেলার চেষ্টায় ধরা পড়েন তিনি স্লিপে।
১০ চার ও ১ ছক্কা ১৯১ বলে ৯৭ রানে শেষ হয় তার লড়াই।
এই নিয়ে এ বছর চারবার শতরানের আশা জাগিয়েও তিনি পারলেন না। গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপকেষ চট্টগ্রামে অপরাজিত থাকেন তিনি ৮১ রানে। অগাস্টে পাকিস্তান সফরে পরপর দুই টেস্টে খেলেন ৭৭ ও ৭৮ রানের ইনিংস। এবার আরেকটু এগিয়ে গেলেও তিন অঙ্কের দেখা পেলেন না। ২০২১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৩ রানের ইনিংসটিই এখনও পর্যন্ত তার একমাত্র টেস্ট শতরান।
রান তাড়ায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে ভুগতে হয়নি খুব একটা। হাসান মাহমুদ নতুন বলে কয়েকবার অস্বস্তিতে ফেলেন ব্যাটসম্যানদের। তাইজুল ইসলামও চেষ্টা করে যান তার মতো করেই। তবে প্রোটিয়ারা রান তুলতে থাকে অনায়াসেই।
উদ্বোধনী জুটিতে ওভারপ্রতি চারের বেশি রান তোলেন এইডেন মার্করাম ও টনি ডি জোর্জি। চারটি চারে ২০ রান করে মার্করাম ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে বোল্ড হন তাইজুলের সোজা হয়ে যাওয়া বলে। তাইজুলকে উড়িয়ে মারতে গিয়েই উইকেট হারান সাত চারে ৪১ রান করা ডি জোর্জি।
পরে মুমিনুল হককে একটি ছক্কা মারার পর ডেভিড বেডিংহ্যাম বিদায় নেন তাইজুলের টার্ন ও বাউন্সে। তবে চারটি চার ও এক ছক্কায় ৩০ রানে অপরাজিত থেকে দ্রুতই দলকে জয় এনে দেন ট্রিস্টান স্টাবস।
২০১৪ সালে শ্রীলঙ্কায় জয়ের ১০ বছর পর উপমহাদেশে টেস্ট জয়ের স্বাদ পেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
দ্বিতীয় টেস্ট চট্টগ্রামে শুরু আগামী মঙ্গলবার।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১০৬
দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৩০৮
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (আগের দিন ২৮৩/৭) ৮৯.৫ ওভারে ৩০৭ (মিরাজ ৯৭, নাঈম ১৬, তাইজুল ৭, হাসান ৪*; রাবাদা ১৭.৫-৪-৪৬-৬, মুল্ডার ১৩-৩-৪০-১, মহারাজ ৩৭-১০-১০৫-৩, পিট ১৯-০-৯৫-০, মার্করাম ৩-১-৭-০)।
দক্ষিণ আফ্রিকা ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ১০৬): ২২ ওভারে ১০৬/৩ (ডি জোর্জি ৪১, মার্করাম ২০, স্টাবস ৩০*, বেডিংহ্যাম ১২, রিকেলটন ১*; হাসান ৫-২-১২-০, তাইজুল ১১-১-৪৩-৩, মিরাজ ২-০-১৩-০, নাঈম ২-০-২০-০, মুমিনুল ২-০-১৬-০)।
ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ৭ উইকেটে জয়ী
সিরিজ: দুই ম্যাচের সিরিজে দক্ষিণ আফ্রিকা ১-০ ব্যবধানে জয়ী।