আইপিএলে পরপর দুই ম্যাচে অবিশ্বাস্য বিপরীতমুখি অভিজ্ঞতা হলো পাঞ্জাব কিংসের, ঘুরে দাঁড়ানোর দারুণ নজির মেলে ধরল শ্রেয়াস আইয়ারের দল।
Published : 16 Apr 2025, 12:06 PM
সেদিন পরাজয়ের পরও হাসছিলেন শ্রেয়াস আইয়ার। ২০ ওভারে ২৪৫ রান তুলেও হার, সেটিও ৯ বল বাকি রেখেই। অসহায়ত্বের হাসিতে পাঞ্জাব কিংস অধিনায়ক বলেছিলেন, “যেভাবে দুই ওভার বাকি থাকতে ওরা জিতে গেল, আমার হাসিই পেয়ে যাচ্ছে।” সেই শ্রেয়াস পরের ম্যাচ শেষে যেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না কী করবেন। এবারও কণ্ঠে অসহায়ত্ব নিয়ে বললেন, “ভাষায় ফুটিয়ে তোলা কঠিন…।” তবে এবারের এই অনুভূতি আনন্দের। তার দল যে জিতে গেছে ১১১ রানের পুঁজি নিয়েও!
আইপিএলে পরপর দুই ম্যাচে অবিশ্বাস্য বিপরীতমুখি অভিজ্ঞতার স্বাদ পেল পাঞ্জাব কিংস। গত শনিবার হায়দরাবাদে ২৪৫ রানের পুঁজি নিয়েও তারা জিততে পারেনি। আভিশেক শার্মার ৫৫ বলে ১৪১ রানের অতিমানবীয় ইনিংসে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ ৮ উইকেটে ম্যাচ জিতে নেয় ৯ বল বাকি রেখে।
পরের ম্যাচে মঙ্গলবার ঘরের মাঠ মুল্যানপুরে পাঞ্জাব গুটিয়ে যায় স্রেফ ১১১ রানে। উইকেট ব্যাটিংয়ের জন্য খুব সহজ ছিল না। তবে এই পুঁজিও তো যথেষ্ট ছিল না জয়ের জন্য। কিন্তু উজ্জীবিত বোলিং ফিল্ডিংয়ে এই পুঁজিতেই ১৬ রানের অবিস্মরণীয় এক জয় পায় পাঞ্জাব। আইপিএলে সবচেয়ে কম রান নিয়ে জয়ের রেকর্ড এটি।
এতে অসাধারণ এক রেকর্ডের যুগলবন্দি হয়ে গেল পাঞ্জাবের। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান তাড়ায় এবং সবচেয়ে কম পুঁজিতে জয়, দুটিই এখন তাদের!
দুটিই কলকাতা নাইট রাইডার্সের বিপক্ষে ও দুই ম্যাচেই ছিলেন শ্রেয়াস। তবে সেবার তিনি ছিলেন পরাজিত দলে, এবার জয়ী ড্রেসিং রুমে।
গত আইপিএলেই ইডেন গার্ডেন্সে ২০ ওভারে ২৬১ রান তুলেছিল শ্রেয়াসের কলকাতা। সেই রান তাড়ায় পাওয়ার প্লের ৬ ওভারেই ৯৩ রান তুলে ফেলে পাঞ্জাব। ২০ বলে ৫৪ রান করে আউট হন ওপেনার প্রাভসিমরান সিং। তিনে নেমে রাইলি রুশো করেন ১৬ বলে ২৬। আরেক ওপেনার জনি বেয়ারস্টো ও চারে নামা শাশাঙ্ক সিং বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে শেষ করেন ম্যাচ। ৯ ছক্কায় ৪৮ বলে ১০৮ রানে অপরাজিত থাকেন বেয়ারস্টো, ৮ ছক্কায় ২৮ বলে অপরাজিত ৬৮ শাশাঙ্ক। রান তাড়ার রেকর্ড গড়ে পাঞ্জাব ৮ উইকেটে জিতে যায় ৮ বল বাকি রেখে।
সেই পাঞ্জাব এবার শ্রেয়াসের নেতৃত্বে দেখিয়ে দিল, এত কম রান নিয়েও জেতা যায়!
ম্যাচ জিতে বাঁধনহারা উদযাপনে মেতে ওঠা শ্রেয়াস পরে পুরস্কার বিতরণীয় আয়োজনে যেন কথাই বলতে পারছিলেন না, “আমার ভাবনা… ভাষায় ফুটিয়ে তোলা কঠিন। নিজের সহজাত প্রবণতার ওপর স্রেফ আস্থা রাখছিলাম…”, এটুকু বলে থেমে থেমে ম্যাচের নানা কিছু বলার চেষ্টা করছিলেন তিনি। কিন্তু এক পর্যায়ে আত্মসমর্পণই করলেন যেন প্রতিক্রিয়া প্রকাশে, “এখনও আসলে কথা বলতে পারছি না। এমন জয় এত দ্রুত হজম করা কঠিন… তবে সত্যি বলতে, এই ধরনের জয় দলকে অনেক প্রেরণা জোগায়।”
পরে নিজেকে একটু সামলে নিলেন পাঞ্জাব অধিনায়ক। ১১১ রান নিয়ে জয় কঠিন হলেও তাকে একটু আশা দেখাচ্ছিল উইকেটের আচরণ।
“উইকেট একটু অসম ছিল, বাউন্স ধারাবাহিক ছিল না। এটা আমাদের মাথায় ছিল। বোলারদেরকে বলেছিলাম, স্টাম্পে বল রাখতে। তারা পরিকল্পনার বাস্তবায়ন করেছে দারুণভাবে।”
বোলিংয়ে নেমে প্রথম ওভারেই সুনিল নারাইনকে ফেরান মার্কো ইয়ানসেন। পরের ওভারে বিদায় নেন কুইন্টন ডি কক। আইপিএল অভিষেকে দ্বিতীয় বলেই উইকেট পান অস্ট্রেলিয়ান পেসার জেভিয়ার বার্টলেট।
তবে শুরুর ধাক্কা সামলে কলকাতাতে জয়ের দিকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন আজিঙ্কা রাহানে ও আঙ্কৃশ রাঘুভানশি। এক পর্যায়ে রান ছিল ২ উইকেটে ৬২। রাহানেকে ফিরিয়ে তখন ৫৫ রানের জুটি ভাঙেন ইউজভেন্দ্রা চেহেল। যদিও এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্তটি ভুল দিয়েছিলেন আম্পায়ার, তবে রাহানে রিভিউ নেননি।
কলকাতার ধসের শুরু সেখানেই। চেহেল পরের ওভারে ফেরান ২৮ বলে ৩৭ রান করা আঙ্কৃশকে। ভেঙ্কাটেশ আইয়ারকে বিদায় করেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। চেহেল পরের ওভারে টানা দুই বলে আউট তরেন রিঙ্কু সিং ও রামানদিপ সিংকে। এরপর ইয়ানসেন আক্রমণে ফিরে ফিরিয়ে দেন হার্শিত রানাকে।
২ উইকেটে ৬২ থেকে কলকাতা তখন ৮ উইকেটে ৭৯!
নাটকীয়তার উল্টো স্রোত নিয়ে আসেন তখন আন্দ্রে রাসেল। চেহেলের শেষ ওভারে দুই ছক্কা ও এক চারে তিনি জমিয়ে তোলেন ম্যাচ। তবে পাঞ্জাব তখন জয়ের সুবাস পেয়েই গেছে। অসাধারণ এক ওভারে আর্শদিপ সিং পাঁচ বলে রান না দিয়ে শেষ বলে আউট করেন বৈভাব আরোরাকে। পরের ওভারে ইয়ানসেনের প্রথম বল স্টাম্পে টেনে আনেন রাসেল।
উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা স্টেডিয়াম। গ্যালারিতে নেটে ওঠেন পাঞ্জাবের স্বত্বাধিকারীদের একজন প্রিতি জিন্তা। ৩৩ রানের মধ্যে ৮ উইকেট হারিয়ে কলকাতা তখন স্তব্ধ।
শেয়াস বললেন, চেহেল বোলিংয়ে আসার পরই জয়ের বিশ্বাস অনুভব করতে থাকেন তিনি।
“শুরুতে দুই ওভারে দুই উইকেট নিয়ে মোমেন্টাম আমাদের ছিল। তবে ওদের দুই ব্যাটার এসে মোমেন্টাম ওদের দিকে নিয়ে যায়। ইউজি (ইউজভেন্দ্রা) এসে হঠাৎ বল টার্ন করাতে শুরু করল। আমাদের আশা তাতে বেড়ে গেল। এরপর থেকেই আমি বিশ্বাস করতে শুরু করি যে, এখান থেকে ম্যাচ ঘুরিয়ে ফেলতে পারি আমরা।”
“চেয়েছিলাম ফিল্ডিং যেন আগ্রাসী হয় ঠিক ব্যাটসম্যানের সামনে, যাতে তারা ভিন্ন কিছুর চেষ্টা করে এবং ভুল করে। সেটাই হয়েছে। এরপর স্রোত আমাদের দিকে চলে আসে।”
ছয় ম্যাচে চার জয় আর দুই হারে এখন পয়েন্ট তালিকার চারে পাঞ্জাব। তবে এমন জয়ের পর দল যেন এখনই উচ্ছ্বাসের জোয়ারে ভাসতে না থাকে, সতর্ক করে দিয়েছেন অধিনায়ক।
“এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমাদের পা যেন মাটিতেই থাকে। এই জয় থেকে যেন বেশি উড়তে শুরু না করি। এই জয় অবশ্যই আমাদেরকে প্রবলভাবে উজ্জীবিত করতে। আমরা ইতিবাচক সবটুকু নেব ও প্রথম বল থেকে যে বিশ্বাসটা ছিল, সেটিকে সঙ্গী করে পরের ম্যাচে কাজে লাগাতে চেষ্টা করব।”