আগের ম্যাচে নিজেদের ভুলের দায় অকপটে স্বীকার করে মেহেদী হাসান মিরাজ বললেন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে পরের দুই ম্যাচে এখনও সুযোগ দেখছে বাংলাদেশ।
Published : 08 Nov 2024, 05:38 PM
ম্যাচের পর দুদিন পেরিয়ে গেছে প্রায়। তবে আগের ম্যাচের আক্ষেপটা রয়ে গেছে মেহেদী হাসান মিরাজের। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে তার জুটি যখন জমে গিয়েছিল, ম্যাচটা তাদেরই শেষ করে আসা উচিত ছিল। সেই আফসোসকে সঙ্গী করেই সামনে তাকাচ্ছেন তিনি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে পিছিয়ে থাকলেও বাংলাদেশের সুযোগ এখনও দেখছেন এই অলরাউন্ডার।
শারজাহতে বুধবার ২৩৬ রান তাড়ায় ৬৫ রানে দুই উইকেট হারানোর পর শান্ত ও মিরাজের জুটি এগিয়ে নিচ্ছিল দলকে। দুজনই সাবলীল ব্যাটিং করছিলেন। আফগান বোলারদের সামনে খুব একটা বিপাকে পড়তে হয়নি কাউকে। আল্লাহ মোহাম্মদ গাজানফারকে ছক্কায় ওড়ানোর পর আজমাতউল্লাহ ওমারজাইকে ছক্কা মারেন শান্ত। মোহাম্মাদ নাবিকে মাথার ওপর দিয়ে ছক্কায় আছড়ে ফেলেন মিরাজ।
তবে দুজনের কেউই ইনিংস বড় করতে পারেননি। নাবিকে সুইপ করতে গিয়ে শান্ত বিদায় নেন ৪৭ রানে। একটু পর সুইপ করার চেষ্টায় গাজানফারকে উইকেট দেন ২৮ রান করা মিরাজ।
মিরাজকে ফিরিয়ে ভয়ঙ্কর এক স্পেলের ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করেন গাজানফার। ওই স্পেলে স্রেফ চার রানে পাঁচ উইকেটসহ ম্যাচে ২৬ রানে ছয় উইকেট নেন তরুণ এই স্পিনার। ২৩ রানের মধ্যে শেষ ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ২ উইকেটে ১২০ রানে থাকা দলের ইনিংস গুটিয়ে যায় ১৪৩ রানে।
দ্বিতীয় ওয়ানডের আগের দিন বিসিবির ভিডিও বার্তায় মিরাজ বলেন, সেদিন ২০ ওভারের পর উইকেটের আচরণ হুট করেই বদলে যায় অনেকটা।
“যখন আমি আর শান্ত ব্যাটিং করছিলাম, আমাদের দুজনের কাছে উইকেট সহজই মনে হচ্ছিল। ২০ ওভারের পর বল যখন একটু নরম হয়ে গেছে, পুরোনো হয়ে গেছে, হঠাৎ করে টার্ন করা শুরু হয়ে গেছে বেশি। আমি আর শান্ত সেট ব্যাটসম্যান হয়েও খুব ‘স্ট্রাগল’ করছিলাম।”
তবে দলের হারের পেছনে উইকেটকে দায় দিচ্ছেন না মিরাজ। বাংলাদেশের সহ-অধিনায়ক মেনে নিলেন নিজের ও অধিনায়কের ভুল।
“ওই সময় আমরা যেভাবে সেট ছিলাম, অবশ্যই দুজনের একজনের শেষ করা উচিত ছিল। আমি শান্তকে বারবার বলছিলাম ‘যেহেতু আমাদের দুজনেরই খেলতে সমস্যা হচ্ছে, পরের ব্যাটসম্যানদের কাজ অনেক কঠিন হবে।’ হঠাৎ করে উইকেটে এত টার্ন হচ্ছিল, স্লো টার্ন হচ্ছিল, আবার সোজা আসছিল, মানে অনুমান করা যাচ্ছিল না যে, কোন বল সোজা যাবে, কোনটা টার্ন করবে।”
“ওই সময়টায় আমিও ভুল করেছি, শান্তও ভুল করেছে। তবে আমরা এটা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই উইকেটে অবশ্যই সেট ব্যাটসম্যানদের খেলা শেষ করা উচিত ছিল। আমি ও শান্ত দুজনই ভুল করেছি অবশ্যই।”
এই ম্যাচ দিয়ে প্রায় আট মাস পর ওয়ানডে ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ। সেজন্য কিছুটা জড়তা ছিল বলেও মনে করেন মিরাজ।
শারজাহতে বাংলাদেশ ওয়ানডে খেলেছে সবশেষ সেই ১৯৯৫ সালে। এই সিরিজের দলের বেশির ভাগ ক্রিকেটারের তখন জন্মও হয়নি।
লম্বা বিরতির পর ওয়ানডে খেলার জড়তা এখন আর নেই। শারজাহর উইকেটের চরিত্রও বোঝা গেছে। মিরাজ তাই এখন ভালো কিছুর আশা করছেন।
“একটা ম্যাচ হেরেছি, এখনও দুইটা ম্যাচ আছে। এখনও সুযোগ আছে আমাদের। দুটি ম্যাচ চিন্তা না করে, পরের ম্যাচটি আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু আমরা একটু ব্যাকফুটে আছি। এখন একটা ম্যাচ খেলেছি এখানে…ওয়ানডে লম্বা সময় পর খেললাম আমরা, ৭-৮ মাস আগে খেলেছিলাম (সবশেষ), সবার ভেতর ওই জিনিসটাও কাজ করছিল যে, অনেক দিন পর খেলছি।”
“এখন প্রস্তুতি ওভাবেই নিচ্ছি। অনেক দিন পর খেলেছি এই মাঠে, একটা আইডিয়া হয়েছে। মোমেন্টাম কীভাবে নিতে হবে, সেটা আমরা অনুশীলন করছি।”
এই দুই ম্যাচে বাংলাদেশ পাবে না মুশফিকুর রহিমকে। আঙুলের চোট নিয়ে সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। মিরাজ বললেন, দলের জন্য বড় ধাক্কা এমন একজন ক্রিকেটারকে হারানো।
“এটা তো অবশ্যই আমাদের জন্য দুঃখজনক যে, মুশফিক ভাইয়ের ইনজুরি হয়েছে। তিনি দলের ভেতর কতটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, এটা আমরা সবাই জানি। তিনি যেভাবে ক্রিকেট খেলেন এবং দেশকে সার্ভিস দিয়ে গেছেন, এটা অসাধারণ।”
শারজাহ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শনিবার বাংলাদেশ সময় বিকেল চারটায় শুরু দ্বিতীয় ম্যাচ।