রায়ার্ন বার্লের অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও ইয়াসির আলির আগ্রাসী ইনিংসে খুলনা টাইগার্সকে সহজে হারাল দুর্বার রাজশাহী।
Published : 10 Jan 2025, 05:52 PM
রায়ান বার্ল তখন মাত্রই ক্রিজে গিয়েছেন। চার উইকেট হারিয়ে রাজশাহী তখন সঙ্কটে। মোহাম্মাদ নাওয়াজের বল উড়িয়ে মারলেন বার্ল। হাসান মাহমুদ ডাইভ দিয়ে বল মুঠোয় নিলেও পরে গেল ফসকে। গড়িয়ে বল পেরিয়ে গেল সীমানা। ম্যাচটিও যেন তখনই বেরিয়ে গেল খুলনার কাছ থেকে।
দুই রানে আউট হওয়ার বদলে জীবন পেয়ে বার্ল খেললেন কার্যকর এক ইনিংস। ইয়াসির আলির সঙ্গে তার আগ্রাসী জুটিই অনেকটা গড়ে দিল ম্যাচের ভাগ্য। বার্ল পরে বল হাতে রাখলেন অবদান। টানা দুই হারের পর রাজশাহী পেল জয়ের দেখা।
টানা দুই জয়ে বিপিএল শুরু করা খুলনা টাইগার্স এই ম্যাচটি খেলতে নেমেছিল এক সপ্তাহের বিরতির পর। এই সময়টায় তাদের মোমেন্টামও যেন গেল হারিয়ে। দুর্বার রাজশাহী ম্যাচ জিতে নিল ২৮ রানে।
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার ২০ ওভারে রাজশাহী তোলে ১৭৮ রান। খুলনার ইনিংস শেষ হয় ১৫০ রানে।
২৯ বলে ৪৮ রানের অপরাজিত ইনিংসের পর ১৩ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা বার্ল।
দুই প্রান্তে দুই রকম
প্রথম ওভারে নাসুম আহমেদের বলে মোহাম্মদ হারিসের চার ও ছক্কায় শুরু হয় ম্যাচ। পাকিস্তানি এই ব্যাটসম্যান এগোতে থাকেন আগ্রাসনের পথ ধরেই। তবে সেই পথে ছুটতে পারেননি জিসান আলম।
৫ ওভারে ৪২ রান তোলে রাজশাহী। হারিসের রান তখন ১৮ বলে ২৬, জিসানের ১২ বলে ১২।
পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে নাসুমকে স্লগ সু্ইপ খেলার চেষ্টায় বোল্ড হয়ে যান হারিস। আসরের পাঁচ ম্যাচের সবকটিতে দুই অঙ্ক ছুঁলেন তিনি, কিন্তু সর্বোচ্চ ইনিংস ৩২ রানের।
মন্থর পথচলা
তিনে নেমে অধিনায়ক এনামুল হক ৫ রানে ক্যাচ দিয়ে জীবন পেলেও আউট হন ৮ বলে ৭ রান করে। টুর্নামেন্টে প্রথমবার ব্যাট করতে নেমে এসএম মেহরব ৪ রানে বোল্ড হন মেহেদী হাসান মিরাজের বলে।
জিসান আলম ডানা মেলতে পারেননি তখনও। দশম ওভারে মোহাম্মদ নাওয়াজকে ছক্কার চেষ্টায় সীমানায় যখন ধরা পড়েন তরুণ ওপেনার, তার রান তখন মোটে ২২ বলে ২৩।
১০ ওভারে রাজশাহীর রান দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৬৭।
দুর্দান্ত জুটি
বিপদের মধ্যে দারুণ প্রতি আক্রমণে রাজশাহীকে এগিয়ে নেন ইয়াসির আলি ও রায়ান বার্ল। ছন্দে থাকা দুই ব্যাটসম্যান পঞ্চম উইকেটে ৮৮ রান যোগ করেন ৫১ বলে।
ইয়াসির ক্রিজে গিয়েই আবু হায়দারের বলে টানা দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেন অভিযান। বার্ল অবশ্য রক্ষা পান ২ রানেই। নাওয়াজের বলে সীমানায় ডাইভ দিয়ে ক্যাচ নিতে পারেননি হাসান মাহমুদ। বল তার হাতে লেগে গড়িয়ে পেরিয়ে যায় সীমানা। এক বল পরই বিশাল ছক্কায় গ্রীন গ্যালারিতে বল আছড়ে ফেলেন জিম্বাবুয়ের এই ক্রিকেটার।
দুজনই পরে চড়াও হন মিরাজের ওপরে। প্রথম ওভারে এক রান দেওয়া খুলনা অধিনায়কের পরের দুই ওভার থেকে দুজনে রান নেন ২৫।
শেষের আগের ওভারে ভাঙে এই জুটি। আবু হায়দারের দারুণ ইয়র্কারে ইয়াসির বোল্ড হন ২৫ বলে ৪১ রান করে।
আকবরের ছোট্ট ঝড়
শেষটায় যেমন কিছুর আশা ছিল রাজশাহী, ঠিক তেমন কিছুই দলকে উপহার দেন আকবর আলি। ক্রিজে গিয়ে প্রথম বলেই চার মারেন এই কিপার-ব্যাটার। পরের বলে চোখধাঁধানো রিভার্স র্যাম্প শটে মারেন ছক্কা। ওভারটি শেষ করে তিনি আরেকটি চার মেরে।
হাসান মাহমুদের শেষ ওভারে অবশ্য একটির বেশি চার তিনি মারতে পারেননি। ওভারের শুরুতে সিঙ্গল নেওয়া বার্ল আর স্ট্রাইক পাননি। ফিফটি থেকে দুই রান দূরে অপরাজিত রয়ে যান তিনি।
আকবর অপরাজিত থাকেন ৯ বলে ২১ রান করে।
শেষ ৭ ওভারে রাজশাহী তোলে ৮০ রান।
খুলনার ব্যর্থতা
রান তাড়ায় শুরু থেকেই লড়াইয়ে পিছপা হতে থাকে খুলনা টাইগার্স। দলের কেউ বড় কোনো ইনিংস খেলতে পারেননি, গড়ে ওঠেনি বলার মতো কোনো জুটি।
জিসান আলমের অফ স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করে রাজশাহী। তাকে রিভার্স সুইপ করে ছক্কা মারেন উইলিয়াম বোসিস্টো। কিন্তু টানা তিন বলে রিভার্স সুইপ খেলে তৃতীয়টিতে আউট হয়ে যান তিনি।
তিনে নেমে অধিনাক মিরাজ থার্ড ম্যান সীমানায় ধরা পড়েন তাসকিনের বলে। মোহাম্মদ নাঈম শেখ দুটি চার একটি ছক্কা মারলেও ২৪ রান করতে বল খেলেন ২৮টি।
আফিফ হোসেন ছন্দে ফেরার আভাস দিয়েও আউট হয়ে যান ২৯ বলে ৩৩ রান করে।
মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন দুটি ছক্কা মেরে থামেন ১৮ রানেই। আসরে প্রথম খেলতে নেমে দুই ছক্কায় ৬ বলে ১৭ রানের ক্যামিও খেলে থামেন অভিজ্ঞ ইমরুল কায়েস।
সেভাবে লড়াই জমাতেই পারেনি খুলনা। আফিফের ৩৩ রানই দলের সর্বোচ্চ। সেরা জুটিও ৩৩ রানের।
পাঁচ ম্যাচে রাজশাহীর এটি দ্বিতীয় জয়।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
দুর্বার রাজশাহী: ২০ ওভারে ১৭৮/৫ (হারিস ২৭, জিসান ২৩, এনামুল ৭, মেহরব ৫, ইয়াসির ৪১, বার্ল ৪৮*, আকবর ২১*; নাসুম ৩-০-২০-২, হাসান ৪-০-৩৩-০, ইরশাদ ৪-০-৩৮-০, নাওয়াজ ৩-০-২৭-১, মিরাজ ৩-০-২৬-১, আবু হায়দার ৩-০-৩৩-১।
খুলনা টাইগার্স: ১৯.৩ ওভারে ১৫০ (বসিস্টো ৬, নাঈম ২৪, মিরাজ ১, আফিফ ৩৩, মাহিদুল ১৮, ইমরুল ১৭, আবু হায়দার ৪, নাওয়াজ ৯, নাসুম ১৮, হাসান ৩, ইরশাদ ৫*; জিসান ৪-০-১৮-১, তাসকিন ৩.৩-০-৩০-২, মেহরব ৪-০-২৫-১, সোহাগ ৩-০-২৭-২, মৃত্যুঞ্জয় ২-০-৩১-১, বার্ল ২-০-১৩-২, শফিউল ১-০-৩-১)।
ফল: দুর্বার রাজশাহী ২৮ রানে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: রায়ার্ন বার্ল।