দুর্দান্ত ফর্মে থাকা জাকের আলি উপহার দিলেন ছয় ম্যাচে চতুর্থ ফিফটি।
Published : 02 Apr 2024, 04:47 PM
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সাফল্যের স্বাদ পেয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে যেন আরও অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছেন জাকের আলি। দুর্দান্ত ফর্মের ধারাবাহিকতায় ছুটছেন তিনি। ছুটছে তার দল আবাহনীও। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর জাকের আলির দারুণ ব্যাটিংয়ে চ্যাম্পিয়নদের অপ্রতিরোধ্য জয়যাত্রা চলছেই।
ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটের দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর ম্যাচ ঘিরে আগের সেই আগে-রোমাঞ্চ মিলিয়ে গেছে বহু আগেই। মাঠের ক্রিকেটেও সেই উত্তেজনার ছোঁয়া দেখা গেল না। আবাহনী লিমিটেডের সামনে যে পাত্তাই পেল না মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। ৮ উইকেটের এই জয়ের ৮ ম্যাচের সবকটিই জিতে নিল বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা।
ফতুল্লায় আবাহনীকে জয়ের পথে তুলে দেয় দলের বোলাররাই। ৫০ ওভার খেলে মোহামেডান করতে পারে কেবল ১৯৯ রান। সেই রান তাড়ায় কোনো বেগ পেতে হয়নি আবাহনীকে। ১৫ ওভার আগেই ম্যাচ শেষ করে দেয় তারা।
৫ চার ও ৩ ছক্কায় ৬২ বলে ৬৩ করে আউট হয়ে যান ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। জাকের দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন চারটি চার আর ছয় ছক্কায় ৯০ বলে ৭৮ রান করে।
চলতি লিগে তার চতুর্থ ফিফটি এটি। আগের পাঁচ ম্যাচে তার রান ২১, ৭৬*, ২০, ৭৮ ও ৫৮।
টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা মোহামেডান শুরুটা করে প্রথম দুই ওভারে রনি তালুকদারের দুটি বাউন্ডারি। তবে এক ওভারে দুই উইকেট নিয়ে জবাবটা দ্রুতই দিয়ে দেন তাসকিন আহমেদ। ম্যাচর পঞ্চম ওভারে তিন বলের মধ্যে তিনি ফিরিয়ে দেন রনি তালুকদার ও ইমরুল কায়েসকে।
পরের ওভারে মাহিদুল ইসলামকে বোল্ড করে মোহামেডানকে জোর ধাক্কা দেন তানজিম হাসান। আগের পাঁচ ম্যাচে এই কিপার-ব্যাটসম্যানের স্কোর ছিল ৯৪, ৭০*, ৫৯, ৭৮, ৭০। এই ম্যাচে তিনি ফেরেন ৫ রানেই।
এরপর রুবেল মিয়া ও আরিফুল ইসলামও টেকেননি বেশিক্ষণ। ৫৭ রানে ৫ উইকেট হারায় মোহামেডান।
ছয়ে নেমে মাহমুদউল্লাহ এক প্রান্ত আগলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। লড়িয়ে ফিফটি করলেও শেষ পর্যন্ত তিনিও পারেননি নিজের কাজ শেষ করতে। তিন ছক্কায় ৮৪ বলে ৫৪ করে ফেরেন তিনি।
পরে আরিফুল হক ৩৩ রান করে দলকে টানেন একটু। শেষ দিকে দুই ছক্কায় আবু হায়দারের ১৫ বলে ২২ রানের ইনিংসে দুইশর কাছে যেতে পারে আবাহনী।
বল হাতেও আবু হায়দার মোহামেডানকে এনে দেন প্রথম সাফল্য। আগের ম্যাচে সেঞ্চুরি করা এনামৃল হক বিদায় নেন ১২ রানে। তবে পরের জুটিতেই ম্যাচের ভাগ্য নিশ্চিত করে দেন নাঈম ও জাকের। দ্বিতীয় উইকেটে ১০৬ রান যোগ করেন দুজন।
এনামুলের বিদায়ের পরের ওভারেই নাসুম আহমেদকে ছক্কায় ওড়ান নাঈম। ক্রিজে যাওয়ার পরপরই আবু হায়দারকে টানা দুই বলে ছক্কা-চার মারেন জাকের। পরের ওভারে নাসুমকে টানা দুটি ছক্কায় উড়িয়ে দেন নাঈম। সব চাপও তাতে উড়ে যায়। অনায়াসেই সামনে এগিয়ে যান দুজন।
শতরানের জুটির পর নাসুমের বলে একটি বাউন্ডারি মেরে পরের বলে ছক্কার চেষ্টায় আউট হয়ে যান নাঈম। এরপর আর কোনো উইকেট পড়তে দেননি জাকের ও আফিফ হোসেন। ম্যাচ জেতানো অবিচ্ছিন্ন জুটিতে দুজন যোগ করেন ৭৩ রান।
৬৬ বলে পঞ্চাশে পা রাখেন জাকের। ফিফটির পর তার ব্যাট থেকে ছক্কা আসে আরও তিনটি। পরে আসিফ হাসানের ওভারে একটি চার ও টানা দুটি ছক্কায় ম্যাচ শেষ করে দেন আফিফ।
৮ ম্যাচে পুরো ১৬ পয়েন্ট নিয়ে যথারীতি শীর্ষে আবাহনী। সমান ম্যাচে দ্বিতীয় পরাজয়ে আগের মতোই দুইয়ে মোহামেডান।
এ দিনের অন্য দুটি ম্যাচের কোনোটিই হতে পারেনি। সাভারে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে সৃষ্ট যানজটে পড়ে কোনো দল সময়মতো মাঠে যেতে না পারায় ম্যাচ দুটি পিছিয়ে যায় একদিন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব: ৫০ ওভারে ১৯০/৯ (ইমরুল ২, রনি ১০, রুবেল ১১, মাহিদুল ৫, আরিফুল ইসলাম ১৯, মাহমুদউল্লাহ ৫৪, আরিফুল হক ৩৩, আবু হায়দার ২২, কামরুল রাব্বি ১১*, আসিফ ৭*; তাসকিন ৯-০-৫৮-২, সাইফ ১০-০-৪২-১, তানজিম ১০-১-৩১-৩, তানভির ৯-২-২০-১, রাকিবুল ১০-১-৩৭-১, মোসাদ্দেক ২-০-২-১)।
আবাহনী লিমিটেড: ৩৫ ওভারে ১৯৫/২ (এনামুল ১২, নাঈম শেখ ৬৩, জাকের ৭৮*, আফিফ ৩৯*; আবু হায়দার ৫-১-২৫-১, নাসুম ৮-০-৪৭-১, কামরুল রাব্বি ৩-০-১৯-০, আরিফুল ইসলাম ১০-০-৪২-০, আসিফ ৬-০-৪০-০, আরিফুল হক ৩-০-২০-০)।
ফল: আবাহনী লিমিটেড ৮ উইকেটে জয়ী।
ম্যান অব দা ম্যাচ: জাকের আলি।