দীর্ঘ অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে ১২১ বলে ১৪৩ রানের ইনিংস খেললেন ইয়াসির আলি চৌধুরি।
Published : 07 Mar 2025, 01:59 PM
সৌম্য সরকারের লেগ স্টাম্পে করা ডেলিভারি ফ্লিক করলেন ইয়াসির আলি চৌধুরি। বল উড়ে সীমানার ওপারে যেতেই ঘুচে গেল তার ছয় বছরের অপেক্ষার। তার প্রতিক্রিয়ায় যদিও ততটা উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। ছোট্ট উদযাপনের পরই মনোযোগী হলেন ইনিংস আরও বড় করায়। পরের বলটিও পেশির জোরে উড়িয়ে দিলেন ছক্কায়।
লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে প্রায় ৬ বছর ও ৫৯ ইনিংস পর তিন অঙ্কের দেখা পেলেন মিডল-অর্ডার ব্যাটসম্যান। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ধানমন্ডি স্পোর্টস ক্লাবের শতরান ছাড়িয়ে তিনি এগিয়ে গেলেন আরও অনেকটা পথ।
লেজেন্ডস অব রুপগঞ্জের বিপক্ষে বিকেএসপিতে শুক্রবার ষষ্ঠ ওভারে ক্রিজে গিয়ে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে ইয়াসির করেন ১২১ বলে ১৪৩ রান। ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসটি সাজান তিনি ৭টি করে চার-ছক্কায় ।
লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার তৃতীয় সেঞ্চুরি এটি। ২০১৯ সালের প্রিমিয়ার লিগে সবশেষ শতরান করেছিলেন ইয়াসির। ব্রাদার্স ইউনিয়নের হয়ে আবাহনীর লিমিটেডের বিপক্ষে সেদিন ১০৬ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। এত দিন সেটিই ছিল লিস্ট 'এ' ক্রিকেটে তার সর্বোচ্চ।
এবারের লিগে প্রথম ম্যাচেও ভালো কিছুর আভাস দিলেও ইনিংস টেনে নিতে পারেননি তিনি। সেদিন ২টি করে চার-ছক্কায় ৪১ রান করে ফিরে যান ড্রেসিং রুমে। এবার দলের বিপদের সময়েই তিনি খেললেন চলতি লিগে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
২০২২ সালে আফগানিস্তান সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডে অভিষেক ইয়াসিরের। বছর ঘুরতেই দল থেকে বাদও পড়ে যান তিনি। মাঝের সময়ে ৭ ইনিংসে এক ফিফটিতে করেছেন মোটে ১০২ রান।
মুশফিকুর রহিমের অবসরে জাতীয় দলের মিডল-অর্ডারে তৈরি হয়েছে শূন্যতা। সেই জায়গা নেওয়ার আশায় থাকবেন ইয়াসিরও। লিগের শুরুটা যেমন করলেন তিনি, ধারাবাহিকতা ধরে রাখলে ২৮ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানকেও হয়তো বিবেচনায় রাখবেন নির্বাচকরা।
রূপগঞ্জের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ৬ ওভারের মধ্যে ধানমন্ডির দুই ওপেনারের বিদায়ে ক্রিজে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর ড্রেসিং রুমে ফিরে যান ফজলে মাহমুদও।
চাপের সময়ে শুরুতে কিছুটা সময় নেন ইয়াসির। নুরুল হাসান সোহানের সঙ্গে ৭৩ বলে ৫০ রানের জুটি গড়েন তিনি। যেখানে সোহানের অবদান ৩৩ রান। দলের একশ পেরিয়ে অধিনায়কের বিদায়ে পুরো দায়িত্ব বর্তায় ইয়াসিরের কাঁধে।
ব্যক্তিগত ৩৩ রানে সৌভাগ্যের ছোঁয়া পান তিনি। তানভির ইসলামের বলে শর্ট মিড উইকেটে সহজ ক্যাচ ছেড়ে দেন জাকের আলি। এরপর শেখ মেহেদি হাসানের বলে ছক্কা মেরে ফিফটি করেন ৭৩ বলে।
এরপর ইনিংসের গতি বদলের শুরু। পরের পঞ্চাশ করতে লাগে আর মাত্র ২৪ বল। তানভির ও রেজাউর রহমান রাজার বল ছক্কায় ওড়ান অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। সৌম্যর বলে ছক্কা মেরে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ৯৭ বলে।
শতক ছুঁয়ে ইয়াসিরের ব্যাট থেকে আসে আরও ৩টি ছক্কা।
ইয়াসিরকে দারুণ সঙ্গ দিয়ে ৬৩ বলে ৬২ রানের ইনিংস খেলেন মইন খান। দুজনের পঞ্চম উইকেট জুটিতে আসে ১১২ বলে ১৪৬ রান।
শেষ দিকে ঝড় তোলেন জিয়াউর রহমান। ২ চার ও ৩ ছক্কায় মাত্র ১৮ বলে ৪০ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার। পঞ্চম উইকেট জুটিতে ইয়াসির ও জিয়া মিলে যোগ করেন ৩২ বলে ৬৯ রান।
ইয়াসিরের সেঞ্চুরির সঙ্গে মইনের ফিফটি ও জিয়ার তাণ্ডবে শেষ পর্যন্ত ৭ উইকেটে ৩৩২ রান করে ধানমন্ডি।
দুই হাত খুলে রান দেন রূপগঞ্জের পেসাররা। ১০ ওভারে উইকেটশূন্য থেকে ৭১ রান খরচ করেন শরিফুল ইসলাম, আগের ম্যাচে যিনি ১০ ওভারে স্রেফ ১৪ রানে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ১ উইকেটের জন্য রাজা দেন ৮৭ রান। ৫ ওভারে ৬২ রান খরচায় ২ উইকেট নেন সৌম্য।