পাকিস্তান-ইংল্যান্ড
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিন শেষে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান করেছে স্বাগতিকরা।
Published : 15 Oct 2024, 07:38 PM
হাঁটু গেড়ে মিডউইকেট দিয়ে বাউন্ডারিতে বল পাঠালেন কামরান গুলাম। ৯৮ থেকে কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পৌঁছে হুঙ্কার দিলেন কয়েকবার। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি বলে কথা! তার সঙ্গে দারুণ জুটিতে ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস খেললেন সাইম আইয়ুব। তবে এরপরও দারুণ বোলিংয়ে মুলতানে পাকিস্তানকে একটু চাপেই রাখতে পারল ইংল্যান্ড।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে দ্বিতীয় টেস্টে ৫ উইকেটে ২৫৯ রান নিয়ে মঙ্গলবার দিন শেষ করেছে স্বাগতিকরা। শেষ বেলায় কামরান বিদায় না নিলে দিনটি হতে পারত তাদের।
ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট খেলতে নেমে চমৎকার ব্যাটিংয়ে ১১৮ রান করেন কামরান। ২২৪ বলের ইনিংসটি সাজান ১ ছক্কা ও ১১ চারে। টেস্ট অভিষেকে সেঞ্চুরি করা পাকিস্তানের ত্রয়োদশ ব্যাটসম্যান তিনি। দলটির হয়ে সবশেষ এই কীর্তি গড়েন আবিদ আলি, ২০১৯ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে।
টেস্টের ১৪৭ বছরের ইতিহাসে অভিষেক ম্যাচে চার নম্বরে নেমে সেঞ্চুরি করা ষষ্ঠ ব্যাটসম্যান কামরান। সবশেষ এমন কিছু দেখা যায় গেছে দুই যুগ আগে। ২০০০ সালে বাংলাদেশের প্রথম টেস্টে এই পজিশনে ১৪৫ রান করেছিলেন আমিনুল ইসলাম।
পঞ্চম টেস্টে তৃতীয় ফিফটি উপহার দেওয়া সাইম খেলেন ৭ চারে ক্যারিয়ার সেরা ৭৭ রানের ইনিংস। ১৯ রানে দুই উইকেট হারিয়ে ভীষণ চাপে পড়া দলের ঘুরে দাঁড়াতে কামরানের সঙ্গে ১৪৯ রানের জুটি গড়েন এই ওপেনার।
মুলতানে ব্যাটিং স্বর্গ বানিয়ে প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শোচনীয়ভাবে হেরেছিল পাকিস্তান। ওই ম্যাচের পিচেই হচ্ছে দ্বিতীয় টেস্ট। তাই প্রত্যাশা অনুযায়ী স্পিনাররা পেয়েছেন সুবিধা।
দিনের শুরুতে দুই পেসার ম্যাথু পটস ও ব্রাইডন কার্সকে দিয়ে স্রেফ পাঁচ ওভার বোলিং করান দুই মাস পর ফেরা ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস। স্পিনারদের আক্রমণে আনার ফল দ্রুত পায় দল। পরপর দুই ওভারে ইংলিশদের উল্লাসে ভাসান জ্যাক লিচ।
দিনের অষ্টম ওভারে চমৎকার এক ডেলিভারিতে আবদুল্লাহ শাফিকের স্টাম্প এলোমেলো করে দেন বাঁহাতি এই স্পিনার। পরের ওভারে তার শিকার পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদ। আগের ম্যাচের দুই সেঞ্চুরিয়ান এবার ছুঁতে পারেননি দুই অঙ্কও।
বিপদে পড়া দলের হাল ধরেন সাইম ও কামরান। লিচ ও শোয়েব বাশিরের স্পিন সামলে দারুণ ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াতে থাকেন তারা দুইজন। প্রথম সেশনে এই দুইজনের যুগলবন্দি ভাঙতে পারেনি ইংল্যান্ড।
লাঞ্চের পরও দেখেশুনে খেলতে থাকেন সাইম-কামরান। প্রতিপক্ষকে তেমন কোনো সুযোগই দিচ্ছিলেন না তারা। ৯৭ বলে ফিফটি স্পর্শ করেন সাইম। কয়েক ওভার পঞ্চাশে পা রাখেন কামরানও, ১০৪ বলে।
দুইজনের ধৈর্যশীল ব্যাটিংয়ে শতরানের জুটিতে শক্ত ভিত পেয়ে যায় স্বাগতিকরা। একটা সময় মনে হচ্ছিল, দ্বিতীয় সেশনও অনায়াসে কাটিয়ে দেবেন তারা দুইজন।
কিন্তু চা বিরতিতে যাওয়ার এক ওভার আগে মনোযোগ হারিয়ে ফেলেন সাইম। পটসের বলে আলগা শটে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি। বিরতির পর সাউদ শাকিলকে কট বিহাইন্ড করে দ্রুত ফেরান কার্স।
মোহাম্মদ রিজওয়ানের উইকেটও পেতে পারতেন পটস। উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছিলেন ৬ রানে থাকা পাকিস্তানের কিপার-ব্যাটসম্যান। কিন্তু বল ব্যাটে লেগেছিল কিনা নিশ্চিত না হওয়ায় রিভিউ নেয়নি ইংল্যান্ড। পরে দেখা যায় হালকা ব্যাট ছুঁয়ে গেছে বল।
এরপর কামরানকেও একবার জীবন দেয় ইংল্যান্ড। লিচের বলে মিড-অনে ক্যাচ নিতে পারেননি বেন ডাকেট। তখন ৭৯ রানে ছিলেন কামরান। শেষ পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত তিন অঙ্কে পা রাখা থেকে তাকে ঠেকাতে পারেনি ইংল্যান্ড। ১৯২ বলে সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন কামরান।
বেঁচে যাওয়া দুই ব্যাটসম্যানের ব্যাটে আরেকটি পঞ্চাশ ছোঁয়া জুটি পায় পাকিস্তান। মনে হচ্ছিল, তাদের ব্যাটে দিন পার করে দেবে দলটি। কিন্তু বাশিরকে উইকেট ছেড়ে বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টায় বলের লাইন মিস করে বোল্ড হন কামরান।
দিনের বাকি সময় কাটিয়ে দিয়ে ৩৭ রানে অপরাজিত আছেন রিজওয়ান। আর সালমান আলি আঘা খেলছেন ৫ রানে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৯/৫ (শাফিক ৭, সাইম ৭৭, মাসুদ ৩, কামরান ১১৮, শাকিল ৪, রিজওয়ান ৩৭*, সালমান ৫*; পটস ১৭-৬-৩৬-১, কার্স ১১-৫-১৪-১, লিচ ২৮-১-৯২-২, বাশির ২৩-১-৬৬-১, রুট ৬-০-২৪-০, স্টোকস ৫-০-২০-০)