পাকিস্তান-ইংল্যান্ড সিরিজ
দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং ধসে পড়লেও পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদের চোখে, বিব্রতকর পরাজয়ের বড় কারণ বোলারদের ব্যর্থতা।
Published : 11 Oct 2024, 03:51 PM
প্রায় দেড়শ বছরের টেস্ট ইতিহাসে আগে কখনও যা দেখা যায়নি, সেই ঘটনার জন্ম দিল পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে পাঁচশর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হারল তারা। নিখাদ ব্যাটিং উইকেটেও দ্বিতীয় ইনিংসে ধসে পড়ে তাদের ব্যাটিং। তবে ম্যাচ হারের পেছনে বড় দায় বোলারদেরই দেখেন অধিনায়ক শান মাসুদ।
মুলতান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে ইনিংস ও ৪৭ রানে হেরেছে পাকিস্তান। প্রথম ইনিংসে ১৪৯ ওভার ব্যাটিং করে ৫৫৬ রান করা দল দ্বিতীয়বার গুটিয়ে গেছে মাত্র ২২০ রানে। চতুর্থ ও পঞ্চম দিন মিলিয়ে ৫৪.৫ ওভার খেলতে পেরেছে তারা।
এর আগে অবশ্য ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের দাপটের সামনে ম্লান হয় পাকিস্তানের বোলিং। ওয়ানডে ঘরানার ব্যাটিংয়ে ১৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ৮২৩ রান করে ইংলিশরা। ক্যারিয়ারসেরা ইনিংস খেলেন হ্যারি ব্রুক ও জো রুট।
ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রায় ৩৪ বছর পর ট্রিপল সেঞ্চুরি করা ইনিংসে ব্রুক থামেন ৩১৭ রানে। আর আগের সেরা ২৫৪ ছাপিয়ে রুট করেন ২৬২ রান। দুজনের ম্যারাথন জুটিতে আসে যেকোনো সফরকারী দলের সর্বোচ্চ ৪৫৪ রান।
২৬৭ রানের লিড নিয়ে ইংলিশদের ইনিংস ঘোষণার পরও তেমন বদলায়নি উইকেটের চরিত্র। ধারাভাষ্য কক্ষে ও সামাজিক মাধ্যমে সড়কের মতো এই উইকেটের সমালোচনায় মুখর থাকেন সাবেক ক্রিকেটার, বিশ্লেষকরা।
তবু দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ে নেমে সেটির কোনো ফায়দা নিতে পারেনি পাকিস্তান। মাত্র ৮২ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চতুর্থ দিনেই একরকম নিশ্চিত হয়ে যায় তাদের ইনিংস পরাজয়। শেষ দিন প্রথম সেশনেই বাকি কাজ সারে ইংলিশরা।
ম্যাচের প্রায় সাড়ে তিন দিন ও প্রথম দুই ইনিংস শেষে যেখানে ড্র-ই ভাবা হচ্ছিল সম্ভাব্য ফল, সেখানে ইতিহাসের প্রথম দল হিসেবে প্রথম ইনিংসে পাঁচশর বেশি রান করেও ইনিংস ব্যবধানে হেরে যায় পাকিস্তান।
এমন পরাজয়ের পর স্বাভাবিকভাবেই আলোচনায় তাদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিং। তবে ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে শান মাসুদ কাঠগড়ায় তুললেন বোলারদের।
“আমরা তৃতীয় বা চতুর্থ ইনিংসের ব্যাপারে কথা বলছি। কিন্তু দিনশেষে এটি দলীয় খেলা। দল হিসেবে সবকিছুরই নিজস্ব সুবিধা ও প্রতিক্রিয়া আছে। আপনি ৫৫০ রান করবেন, তখন এর বিপরীতে ১০ উইকেট নিতে হবে। এই জিনিসটাই আমরা করতে পারিনি।”
“আমরা যদি ১০ উইকেট নিতে পারতাম ও ইংল্যান্ডকে আমাদের রানের আশপাশে রাখতে পারতাম, তাহলে পঞ্চম দিনে এই ২২০ রান চ্যালেঞ্জিং হতে পারত। দল হিসেবে আমাদের এটি বের করতে হবে যে কীভাবে প্রথম ইনিংসে ব্যাটিং-বোলিংয়ে অবদান রেখে ম্যাচের গতিপ্রকৃতি ঠিক করা যায়। এই জায়গায় আমরা ধুঁকছি।”
দ্বিতীয় ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটিং ব্যর্থতার গল্প নতুন কিছু নয়। সবশেষ সাত টেস্টে একবারও দ্বিতীয় ইনিংসে আড়াইশ রান করতে পারেনি তারা।
বাংলাদেশের বিপক্ষে সবশেষ সিরিজেই প্রথম টেস্টে প্রথম ইনিংসে ৬ উইকেটে ৪৪৮ রানে ইনিংস ঘোষণা করা দল, দ্বিতীয়বার গুটিয়ে যায় মাত্র ১৪৬ রানে। পরে ম্যাচও হেরে যায় ১০ উইকেটে। দ্বিতীয় টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে তারা করে ১৭২ রান। বাংলাদেশ জেতে ৬ উইকেটে।
দ্বিতীয় ইনিংসের হতশ্রী ব্যাটিংয়ের কথা স্বীকার করলেও ঘুরে-ফিরে বোলারদের কাঁধেই দায় চাপাতে চাইলেন পাকিস্তান অধিনায়ক।
“আমরা ভালো অবস্থানে যাচ্ছি। আপনি আপনার ব্যাটিং দলকে প্রথম ইনিংসে ভালো স্কোর দাঁড় করাতে বলতে পারেন। এরপর আমাদেরই দায়িত্ব ম্যাচটা গুছিয়ে নেওয়া, যেন ভালোভাবে শেষ করতে পারি। লিড যেমনই হোক, তৃতীয় ইনিংসে ২২০ রানও ভালো স্কোর হতে পারে।”
“আমরা ইংল্যান্ডের থেকেও এটি শিখতে পারি। তারা ২০ উইকেট নেওয়ার পথ বের করে নিয়েছে। ২০ উইকেট নেওয়া ছাড়া আপনি টেস্ট জিততে পারবেন না। হ্যাঁ, দল হিসেবে আমাদের দ্বিতীয় ইনিংসের ব্যাটিংয়ে উন্নতি করতে হবে। কিন্তু আপনাকে ২০ উইকেট নেওয়া শিখতে হবে। সামনের দিকে এটিই আমাদের চ্যালেঞ্জ হবে।”