টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ
টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়ে ভারতীয় অধিনায়ক রোহিত শার্মা বললেন, তার ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্ত এটি।
Published : 30 Jun 2024, 10:23 AM
ম্যাচ শেষ হতেই কেনসিংটন ওভালের সবুজ ঘাসে উপুড় হয়ে কিছুক্ষণ রোহিত শার্মা। একটু পর শুয়ে পড়লেন হাত-পা ছড়িয়ে আকাশের দিকে মুখ করে। একটু পর আবার হাঁটু গেড়ে রইলেন। উঠে দাঁড়িয়ে ছুটলেন এদিক-সেদিক। যাকে পেলেন, আলিঙ্গনে জড়ালেন। হার্দিক পান্ডিয়াকে কোলে তুলে নিলেন। হাসলেন, কাঁদলেন। নানা আবেগের জোয়ার বয়ে গেল। ৩৭ বছর বয়সী একজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ক্রিকেটার যেন স্রেফ শিশু হয়ে গেলেন।
রোহিতের প্রতিটি পদক্ষেপই বলে দিচ্ছিল, কতটা আকাঙ্ক্ষার জয় এটি, কতটা তীব্র তাড়নার ট্রফি এটি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল, এ দিন এই দুনিয়ার সবচেয়ে সুখি মানুষটি তিনিই। পরে তার কথায়ও তা ফুটে উঠল। ভারতের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক এটিও বললেন, নিয়তিই এই ট্রফি তাদের জন্য বরাদ্দ করে রেখেছিল।
রোহিতের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের শুরুটাই ছিল টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দিয়ে। প্রথম আসরেই বিশ্ব সেরা স্বাদ তিনি পেয়েছিলেন। তবে সময়ের প্রবাহে নেই স্মৃতিতে পলি জমে গিয়েছি প্রচুর। তাছাড়া, তিনি তখন এই রোহিত ছিলেন না।
দলে জায়গা পাকা করা আর আক্ষেপ-হতাশার কয়েকটি বছর শেষে মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে উঠে আসা, নিজের ক্যারিয়ারকেও নতুন উচ্চতায় তুলে নেওয়া, রেকর্ডের পর রেকর্ড গড়া, বিশ্ব ক্রিকেটের বড় নাম আর ভারতীয় ক্রিকেটের মহীরূহ হয়ে ওঠা, অধিনায়কের ভার বয়ে চলা… গৌরবময় এই অধ্যায়ে তো বড় অপ্রাপ্তির কাঁটা ছিল বিশ্বকাপ শিরোপা।
২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনাল থেকে বিদায়, গত বছর কয়েক মাসের ব্যবধানে আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ ও ওয়ানডে বিশ্বকাপে ফাইনালে হারের বেদনা, সব পেরিয়ে আরেকবার শিরোপা মঞ্চে নিজেদের তুলে এনেছিলেন তারা। এবার না পারলে আর কখনও সুযোগ আসত কি না, কে জানে!
অবশেষে এবার তারা পারলেন। তিনি পারলেন। প্রতিপক্ষের মুঠো থেকে জয় বের করে এনে নিজেদের রাঙালেন নেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের আলোয়। ম্যাচ শেষে ভারতীয় অধিনায়ক বললেন, এই শিরোপা তাদের প্রাপ্যই ছিল।
“আমি বিশ্বাস করি, যা (ভাগ্যে) লেখা আছেই, তা হবেই। আমার মনে হয়, এটা লেখা হয়েই ছিল। তবে অবশ্যই, ম্যাচ শেষ হওয়ার আগে তো আর জানা যায় না যে, এটাই আছে লেখা। খেলাটাই এমন। নইলে তো আমরা অনায়াসেই এসে বলতে পারি যে, এটা ভাগ্যেই ছিল।”
“আমার মনে হয়, সবকিছু এরকম হওয়ারই কথা ছিল। একটা পর্যায়ে, আমরা কতটা পেছনে ছিলাম! উইকেট খুব ভালো আচরণ করছিল, ওরা ভালো ব্যাটিং করছিল। বিকল্প যা ছিল, ব্যবহার করতেই হতো আমাকে। বুমরাহর ওভারটি ১৮তম ওভারে শেষ করতেই হতো। সবকিছুই তাই পরিকল্পনামতো এগোতেই হতো।”
ম্যাচ শেষে হাঁটু গেড়ে বসেছিলেন আর শুয়ে ছিলেন, নিজের সঙ্গে কথোপকথন চলছিল, সেই ভাবনাগুলো তিনি প্রকাশ্যে বলতে চাইলেন না। তবে আকাঙ্ক্ষার তীব্রতা তুলে ধরলেন ঠিকই।
“আমি খোলাসা করতে চাই না কী ভাবছিলাম এবং আমার ভেতর কী চলছিল। তবে ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য খুব আবেগময় মুহূর্ত ছিল। ওই মুহূর্তটি যদি নিজে ধারণ করতে পারতাম, খুব ভালো লাগত। সেটা তো আর সম্ভব নয়! তবে মুহূর্তটি আমি সবসময়ই মনে রাখব।”
“এই ধরনের মুহূর্তের অপেক্ষাই সবার থাকে। এসব পরিকল্পনা করে হয় না। এটা স্রেফ হয়ে যায়, জীবনে কোনো কিছুর জন্য যখন এতটা মরিয়া থাকেন। জীবনে এটি পেতে তীব্র আকাঙ্ক্ষা ছিল আমার এবং খুবই খুশি যে, শেষ পর্যন্ত পেরেছি।”
ক্যারিয়ারের শুরুতেই তিনি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০১১ ওয়ানডে বিশ্বকাপ জয়ের অংশ হতে পারেননি। তবে ২০১৩ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের স্বাদ পেয়েছেন। দুটি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল খেলেছেন, গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপের ফাইনালও। ব্যক্তিগত অর্জন-রেকর্ডের তো অভাব নেই। তবে তার নিজের কাছে ক্যারিয়ারের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত এটিই।
“আমি বলতেই পারি, সবচেয়ে সেরা মুহূর্ত এটিই…। একমাত্র কারণ, কতটা মরিয়া হয়ে এটা জিততে চাইছিলাম। এত এত রান, এত বছর ধরে এত রান যা করেছি, সেসবেরও মূল্য আছে। তবে পরিসংখ্যান ও এসব নিয়ে আমার ভাবনা খুব বেশি নেই। ভারতের হয়ে ম্যাচ জয়, দেশের হয়ে ট্রফি জয়ের দিকেই সবসময় তাকিয়ে থাকি।”
“ এবং এই মুহূর্তে, আমার পাশে এই ট্রফিটি থাকা… জানি না, সত্যি বলতে, এটিই সবচেয়ে সেরা কি না… সেরাগুলোর একটি তো বটেই।”