দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির প্রভাব দলে পড়তে দেননি সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটাররা, জানালেন স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ।
Published : 15 Aug 2024, 08:10 PM
পিসিবির আমন্ত্রণে আগেভাগে পাকিস্তানে যাওয়ার পর বাংলাদেশ দলের মনোযোগের কেন্দ্রে এখন শুধুই ক্রিকেট। স্পিন কোচ মুশতাক আহমেদ বললেন, দেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি দূরে ঠেলে মাঠে নামতে উন্মুখ সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমরা।
গত মার্চে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সবশেষ টেস্ট সিরিজ হারের পর প্রস্তুতির অভাবকে কাঠগড়ায় তোলেন ক্রিকেটাররা। তাই পাকিস্তান সফরের আগে লম্বা প্রস্তুতি পর্বের আয়োজন করা হয়। গত মাসে চট্টগ্রামে শুরু হয় সেটি। তবে কারফিউ ও বৈরী আবহাওয়ায় বেশিরভাগ দিন হোটেলেই কাটে ক্রিকেটারদের।
এরপর ঢাকায় ফিরে আরেক অনিশ্চয়তায় পড়ে অনুশীলন পর্ব। সরকার পতনের দাবিতে গণ আন্দোলনের তীব্রতা বেড়ে গেলে চলতি মাসের শুরুতে মাঠে নামতে পারেননি ক্রিকেটাররা। পরে ব্যক্তিগত উদ্যোগে মিরপুর শের-ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তাদের প্রস্তুতি শুরু হলেও নিরাপত্তা শঙ্কায় যোগ দেননি কোনো কোচ।
এই অবস্থায় পিসিবির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে পূর্ব নির্ধারিত সূচির ৪ দিন আগেই পাকিস্তানে চলে যায় বাংলাদেশ। এখন লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে চলছে অনুশীলন। বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের অনুশীলন শেষে সংবাদ সম্মেলনে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে দলের সার্বিক অবস্থার কথা জানান মুশতাক।
“আমার মতে, ছেলেরা সবাই অনেক পরিণত। রাওয়ালপিন্ডিতে প্রথম টেস্ট ম্যাচটি খেলার জন্য তারা উন্মুখ হয়ে আছে। (বাংলাদেশের সাম্প্রতিক) পরিস্থিতির বিষয়টা তারা দূরে সরিয়ে রেখেছে। এখানে ম্যানেজমেন্টকে কৃতিত্ব দিতে হবে। ক্রিকেটারদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক দারুণ।”
“এছাড়া ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আছে, তরুণদের মাঝে দারুণ ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। মুশফিক আছে, শান্ত আছে, তাসকিন আছে। সিনিয়র ক্রিকেটার হিসেবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে। আর আপনি যখন সিরিজ খেলতে আসেন, ক্রিকেটের ওপরই সব মনোযোগ থাকে। তারাও সেটাই করছে। সব কিছু ঠিক আছে।”
রাওয়ালপিন্ডি স্টেডিয়ামে আগামী ২১ অগাস্ট শুরু হবে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্ট। ওই মাঠে বরাবরই থাকে ব্যাটিং সহায়ক উইকেট। আর পাকিস্তান দলেও আছেন বাবর আজম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, শান মাসুদের মতো পরীক্ষিত ব্যাটসম্যানরা। তাদের সামাল দেওয়ার জন্য স্পিন আক্রমণে ভরসা রাখতে চান মুশতাক।
“স্পিনাররা টেস্ট ম্যাচে সবসময়ই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু উইকেট নেওয়ার জন্য নয়। আপনাকে তো পেসারদের বিশ্রামও দিতে হয়। টেস্টে এটাই পরিকল্পনা থাকে, একপ্রান্তে রান আটকে রেখে মূল বোলারকে বিশ্রাম দিতে হয়।”
“স্পিনাররা তাই সবসময় টেস্ট ম্যাচে খুব জরুরি। তারা ইনিংসে ২-৩ উইকেট বা ম্যাচে ৫-৬ উইকেটও নিয়ে নেয়। তারা বড় ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই আমি বলব যদি কোনো ম্যাচ জেতানোর মতো স্পিনার দলে থাকে, অবশ্যই তাকে সমর্থন দিয়ে যেতে হবে।”
গত এপ্রিল থেকে বাংলাদেশের দলের সঙ্গে আছেন মুশতাক। ঘরের মাঠে জিম্বাবুয়ে সিরিজ ও টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পর এবারই প্রথম টেস্ট সিরিজে কাজ করছেন তিনি। লাল বলে বাংলাদেশের দুই মূল স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজের অভিজ্ঞতায় আস্থা পাকিস্তানের কিংবদন্তি লেগ স্পিনারের।
“তারা (স্পিনাররা) পরিণত, খুব ভালো স্পিনার। আমার কাজ টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্যাল বিষয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলা। টেকনিক্যাল বিষয় ম্যাচের সময় চলতে থাকে। কৌশলগত দিক থেকে স্পিনারদের অ্যাঙ্গেলের ব্যাপার বুঝিয়ে দেওয়া, পিচ কীভাবে পড়তে হবে, বলের গতি কেমন হবে, কোন ব্যাটারের বিপক্ষে কেমন ফিল্ড সাজাতে হবে- এসব নিয়ে কথা হয়। কেউ যত অভিজ্ঞই হোক না কেন, এসব ব্যাপার সবসময় মনে করিয়ে দেওয়া ভালো।”
“বাংলাদেশের স্পিনারদের মধ্যে তাইজুল, মিরাজ আছে অভিজ্ঞ। তারা খুব ভালো, ম্যাচ জেতানোর মতো বোলার। বাংলাদেশকে অনেক ম্যাচ জিতিয়েছে। তাদের সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জন্য সম্মানের। দারুণ ছেলেদের নিয়ে গড়া দল এটি। সব কথা ভালোভাবে শোনে তারা। আমার এখানে দারুণ অভিজ্ঞতা হচ্ছে। আমি আশা করি, নিজের অভিজ্ঞতা দিয়ে এখানে পার্থক্য গড়ে দিতে পারব।”
প্রথাগতভাবে স্পিন নির্ভর দল হলেও গত কয়েক বছরে পেস বিভাগেও দারুণ উন্নতি করেছে বাংলাদেশ। এখন নিয়মিতই যে কোনো সিরিজের দলে দেখা যায় পাঁচ পেসার। ব্যতিক্রম নয় পাকিস্তান সফরের দলও। তাসকিন আহমেদের সঙ্গে দলে আছেন শরিফুল ইসলাম, সৈয়দ খালেদ আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানা।
তাই নিজে স্পিন বিভাগ সামাল দেওয়ার দায়িত্বে থাকলেও দলের পেস বিভাগের সামর্থ্যেও আশাবাদী মুশতাক।
“আমার মতে, বাংলাদেশের একটি ভালো ব্যাপার হচ্ছে তাদের দলে এখন বেশ ভালো পেসার রয়েছে। অনুশীলনে আপনারা দেখবেন তাদের ভালো ৪-৫ জন পেসার রয়েছে। ফলে আমি মনে করি তারা ঠিক দিকেই এগোচ্ছে। হয়তো কিছুটা সময় লাগবে। আমি আশা করছি তারা যদি শিখতে থাকে এবং নিজেদের ওপর বিশ্বাস রাখে তারা পার্থক্য গড়ে দিতে পারবে এবং বিদেশের মাটিতেও ম্যাচ জিততে পারবে।”
এসময় মুশতাকের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়, উইকেট যদি পেস সহায়ক হলে লড়াই করতে পারবে বাংলাদেশ? উত্তরে পেস বিভাগের ওপর পূর্ণ বিশ্বাসের কথা বলেন তিনি।
“এখানে কন্ডিশনের উপর নির্ভর করছে সবকিছু। কন্ডিশন যেরকম হবে সেভাবে প্রস্তুত হয়েই আমরা মাঠে নামব। যদি গ্রিন টপ উইকেট থাকে আমরা চার পেসার নামিয়ে দেব আমাদের বেশ ভালো পেসার রয়েছে। এখানে কোনো সমস্যা নেই।”