টিকা নিয়ে কাটলো ভয়, মিললো চকোলেট

ঢাকাসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 August 2022, 06:21 AM
Updated : 25 August 2022, 06:21 AM

কিছুটা উদ্বেগ নিয়ে মিরপুরের সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে টিকা নিতে এসেছিল নার্সারীর শিক্ষার্থী কায়নাত। শুরুর সেই ভয় কেটে যায় টিকা নেওয়ার সময়ই, মায়ের সঙ্গে হাসিমুখে স্কুল ছাড়তে দেখা যায় তাকে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে কায়নাত জানালো, প্রথমে ভয় পেলেও পরে ভালো লেগেছে। টিকা নিয়ে স্কুল থেকে চকোলেট পাওয়ায় আরও ভালো লেগেছে তার।

আর কায়নাতের মা মানোয়ারা আক্তার বলেলেন, টিকা দেওয়ায় করোনাভাইরাস থেকে সন্তানের সুরক্ষা নিয়ে দুশ্চিন্তা দূর হয়েছে তার।

মিরপুর ৭ নম্বর সেকশনের এই বাসিন্দা বলেন, “এখন কোভিড থেকে সে সুরক্ষিত থাকবে আশা করি। আমরাও দিয়েছি। ও একটু ভয় পেলেও পরে উৎসাহ বোধ করেছে। আবার টিকা দিলে তখনও সে দেবে বলছে।”

ঢাকাসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনে ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায়। তাদের দেওয়া হচ্ছে বাচ্চাদের জন্য ফাইজারের তৈরি বিশেষ কোভিড টিকা। শিশুদের এই টিকাদান কর্মসূচি চলবে ১৪ দিন।

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ২১টি স্কুল কেন্দ্রে চলছে এই টিকাদান কার্যক্রম। সকালে নীলক্ষেত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে টিকাদান কর্মসূচির উদ্বোধন করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন।

সিটি করপোরেশন এলাকায় এখন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিশুদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। পরে স্কুলের বাইরে থাকা শিশুদের জন্য আলাদা কর্মসূচির পরিকল্পনা রয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের।

৫ থেকে ১১ বছরের সব শিশুকে টিকা দেওয়া হবে জানিয়ে গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী বলেন, “সিটি করপোরেশনের পর জেলা-উপজেলা পর্যায়ে দেওয়া হবে। সমস্ত শিশুকে আমরা দেব।”

গত ১১ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে শিশুদের জন্য পরীক্ষামূলক টিকা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সেদিন শেরে বাংলা নগর আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ থেকে ১১ বছর বয়সী ১৭ শিশুকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়।

বৃহস্পতিবার ১২টি সিটি করপোরেশন এলাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুদের জন্য টিকাদান কর্মসূচি শুরু হলেও চট্টগ্রামে বুধবার ৩০০ শিশু টিকা নিয়েছে।

বৃহস্পতিবার সকালে ঢাকার নির্ধারিত স্কুলের টিকাকেন্দ্রগুলোতে বাচ্চাদের নিয়ে উপস্থিত হন অভিভাবকরা।

মিরপুর ১০ নম্বরের সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন শ্রেণির শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে স্কুলে ভিড় করেছে। টিকা দেওয়া শুরু হয় নার্সারির শিশুদের দিয়ে।

টিকাদান কক্ষে ঢোকার সময় প্রায় সবারই চোখেমুখে ছিল কিছুটা ভয়ের ছাপ। তাদের উৎসাহ দিতে চকোলেট বিতরণ করতে দেখা যায় শিক্ষকদের।

নার্সারীর শিক্ষার্থী তাসকিন আহমেদের মা শাহীনা বেগম জানালেন, পরিবারের সবাই টিকা নেওয়ার পর ছেলের টিকার জন্য অপেক্ষায় ছিলেন তারা।

শিশুদেরও টিকার আওতায় আনায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনের এই বাসিন্দা বলেন, “আমরা তিনজন আগেই টিকা নিয়েছি। ও বাকি ছিল, আমরা চিন্তায় ছিলাম ওদের টিকা দেবে কিনা। এখন ভালো লাগছে।”

সেনপাড়া পর্বতা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মুস্তাফিজুর রহমান জানান, এ কেন্দ্রে ৩০০ শিক্ষার্থীকে প্রথম দিন টিকা দেওয়া হচ্ছে।

“সবাই আগ্রহ নিয়ে আসছে। যারা ছোটো শিশু, তারা কিছুটা ভয় পাচ্ছে। কিন্তু টিকা নেওয়ার পর সেটা কেটে যাচ্ছে।”

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ষাটোর্ধ্বদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। পরে বয়সসীমা কমিয়ে গত বছর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের টিকার আওতায় আনা হয়।

৫ থেকে ১১ বছর বয়সী শিশুদের জন্য গত ৩০ জুলাই কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফাইজারের ১৫ লাখ ২ হাজার ৪০০ ডোজ বিশেষ টিকা দেশে আসে।

সবশেষ মঙ্গলবার বাংলাদেশকে ফাইজারের তৈরি আরও ১ কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।