ভয়কে জয় করে টিকা নিল ছোট্ট নিধি

শিশুদের টিকার আওতায় আনার পর শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে আর কোনো বাধা থাকবে না, বলেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 August 2022, 09:58 AM
Updated : 11 August 2022, 10:31 AM

লাইনে দাঁড়নো প্রথম দুজন ভয় পেয়ে পিছিয়ে যাওয়ার পর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ুয়া নিধি সাহস করে এগিয়ে গিয়েছিল; কোভিড টিকা নেওয়ার পর সে জানালো, ভয় না পেলেও অল্প একটু ব্যথা তার লেগেছে।

দেশের পাঁচ থেকে এগার বছর বয়সী শিশুদের করোনাভাইরাসের পরীক্ষামূলক টিকাদান শুরুর দিন যে ১৭ জন ফাইজারের টিকার প্রথম ডোজ পেয়েছে, ঢাকার শেরে বাংলা নগর আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নিধি নন্দিনী কুণ্ডু তাদের একজন।

নিধির বাবা শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা নন্দ গোপাল কুণ্ডু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমি তিন ডোজ টিকা নিয়েছি। বাচ্চাদের টিকা দেওয়ার খবর শুনে আগ্রহী হয়েছি তাদেরও টিকা দিয়ে রাখতে। স্কুলে টিকার জন্য বাচ্চাদের নির্বাচন করা হচ্ছে শুনে মেয়ের নাম দিয়েছি। তারা সুরক্ষিত থাকুক।”

পরীক্ষামূলক টিকাদান কার্যক্রমের জন্য আবুল বাশার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্বাচিত ১৬ শিক্ষার্থীকে সকালেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়। টিকা দেওয়ার জন্য তাদের সারি বেঁধে দাঁড় করান স্বাস্থ্য কর্মীরা

সে সময় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা এবং সাংবাদিক এবং পুলিশের ভিড় দেখে শিশুরা কিছুটা ‘ভড়কে’ যায়।

সারিতে প্রথমে ছিল তৃতীয় শ্রেণির রূপা আক্তার। এরপর দ্বিতীয় শ্রেণির সৌম্য দ্বীপ দাসের পালা ছিল। তবে তারা পিছিয়ে যাওয়ায় প্রথম টিকা দেওয়া হয় নিধি নন্দিনী কুণ্ডুকে।

পরে অবশ্য সব শিশুকেই পর্যায়ক্রমে টিকা দেওয়া হয়। টিকাদান শেষে শিশুদের সবার হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় রঙিন বেলুন।

সারাদেশে ২ কোটি ২০ লাখ শিশুকে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে শুরু হওয়া এই টিকাদান কার্যক্রম উদ্বোধন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, “আজ আমরা পরীক্ষামূলকভাবে টিকা দিচ্ছি। আগামী ২৫ অগাস্ট ঢাকার বিভিন্ন কেন্দ্রে শিশুদের টিকা দেব। প্রথমে সিটি করপোরেশন এলাকায় তারপর পর্যায়ক্রমে আমরা সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিশুদের টিকা দেওয়া হবে।”

তিনি জানান শিশুদের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ৩০ লাখ ডোজ পাওয়া গেছে। বাকি টিকার জন্যও যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ‘প্রতিশ্রুতি’ মিলেছে।

শিক্ষামন্ত্রী দীপুমনি বলেন, ১২ থেকে ১৮ বছরের ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থীকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে ৮৩ শতাংশ।

“কোভিড মহামারীর কারণে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ ছিল। এখন এই শিশুদের টিকা দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সুরক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে। তাদের টিকা দেওয়ার পর শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে আর কোনো বাধা থাকবে না।”

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর ২০২১ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি সারাদেশে ষাটোর্ধ্বদের টিকা দেওয়া শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে টিকা পাওয়ার নির্ধারিত বয়সসীমা কমিয়ে আনা হয় ১৮ বছরে।

এরপর ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনাভাইরাসের টিকার আওতায় আনা শুরু হয় গত বছর। পরে বুস্টার বা তৃতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয় বয়স্কদের মধ্যে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক এবিএম খুরশীদ আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব ড. মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, স্বাস্থ্যশিক্ষা বিভাগের সচিব মো.সাইফুল হাসান বাদল, মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বক্তব্য দেন।

পুরনো খবর:

Also Read: শিশুদের কোভিড টিকা: প্রথম দিন পাবে ১৬ জন

Also Read: ঢাকায় শিশুদের কোভিড টিকাদান শুরু ১১ অগাস্ট

Also Read: শিশুদের কোভিড টিকা এল দেশে

Also Read: শিশুদের কোভিড টিকা জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহে