“প্রান্তিক নারীদের কথা আমাদের গবেষণায় আরো বেশি করে উঠিয়ে আনতে হবে,” বলেন অধ্যাপক আশফাক।
Published : 08 Dec 2023, 12:09 AM
মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী হলেও ইতিহাসে তারা তেমন স্বীকৃতি পায়নি বলে মনে করেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির।
তিনি বলেছেন, “মুক্তিযুদ্ধে নারীরা সবচেয়ে বেশি ত্যাগ স্বীকার করেছেন। কিন্তু তাদের সেই ত্যাগের কথা কখনো স্বীকৃতি পায়নি। কেননা আমাদের ইতিহাস সবসময় পুরুষতান্ত্রিক।”
বৃহস্পতিবার বিকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি একথা বলেন।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও জেনোসাইড বক্তৃতামালার প্রথম পর্বে আলোচনা বিষয় ছিল ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে নারীর অবদান'।
শাহরিয়ার কবির বলেন , “পাকিস্থানিরা ধর্ষণকে গণহত্যার অনুষজ্ঞ হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে শতকরা ৯৯ ভাগ শহীদ পরিবার প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর। শতকরা ৯৯ ভাগ নির্যাতিত নারী প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর।
“১৯৯২ সালে গণ আদালতে কুষ্টিয়া থেকে তিনজন বীরাঙ্গনা নারী এসেছেন। যুদ্ধকালীন নির্যাতনের বর্ণনা দিতে এসেছেন তারা। পরবর্তীতে তাদের স্বপক্ষে কয়েকটি পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে গ্রামে তাদের একঘরে করে রাখা হয়৷"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চতর কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক ও ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক আশফাক হোসেন বলেন, “প্রান্তিক নারীদের কথা আমাদের গবেষণায় সেরকম করে আসেনি। পাকিস্থানিরা যতটা আমাদের সমাজের উচ্চ শ্রেণীর নারীদের উপর অত্যাচার করেছে তার চেয়ে তীব্র গতিতে প্রান্তিক নারীদের উপর আক্রমণ করেছে।
“প্রান্তিক নারীদের কথা আমাদের গবেষণায় আরো বেশি করে উঠিয়ে আনতে হবে। তাদের কথাগুলো তুলে আনতে হবে। এই কাজটা আমাদের অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে।"
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গবেষণা ও গ্রন্থাগার বিভাগের ব্যবস্থাপক ড. রেজিনা বেগম বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে বেদনা এবং গর্বের সাথে উচ্চারিত হয় ত্রিশ লাখ শহীদের কথা। শহীদ শব্দটিও নারীবাচক হিসেবে প্রতিফলিত হয় না। তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় সরাসরি পাকিস্থানি বাহিনীর হাতে শহীদ নারীরা ইতিহাসে চর্চিত নন।
“আমরা জানি জেলাভিত্তিক শহীদদের নামের তালিকা তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন জেলায় শহীদদের নামের তালিকা সম্বলিত স্মৃতিস্মম্ভ তৈরি হয়েছে, কিন্তু এই তালিকায় কোনো নারী শহীদের নাম নেই।"
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের পরিচালক অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন প্রজন্ম একাত্তরের প্রতিষ্ঠাতা সাংস্কৃতিক সম্পাদক শহীদ কন্যা ডা. নুজহাত চৌধুরী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক পারভীন জলী।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেন্টার ফর জেনোসাইড স্টাডিজের সিনিয়র রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট জিএম আরিফুজ্জামান।