যুগ্মসচিব শারমিনা নাসরীন বলেন, “গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সোমবারের চিঠিতে ভাষাগত পরিবর্তনটা সরকারের অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ।”
Published : 27 Jan 2025, 11:31 PM
তিন দফা ‘অনুরোধ’ জানানোর পর এবার গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়ে যাওয়া ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়া যাওয়ার উদ্যোগের মধ্যেই এ নির্দেশ দিয়ে উপাচার্যদের ‘কড়া ভাষায়’ চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
বিভাগের যুগ্মসচিব শারমিনা নাসরীন সোমবার রাতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম কঠোরভাবে মেনে চলার ব্যবস্থা নিতে গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পুনরায় নির্দেশ দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে।”
গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় বেরিয়ে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে গত ডিসেম্বর মাসে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি চালাতে উপাচার্যদের তিন বার ‘অনুরোধ’ জানিয়েছিল শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এবার তাদের গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হল।
সোমবার শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে উপাচার্যদের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘স্বার্থ ও দাবি’ বিবেচনা করে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ‘কঠোরভাবে’ মেনে চলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘নির্দেশ’ দেওয়া হল।
যুগ্মসচিব শারমিনা নাসরীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গুচ্ছভুক্ত ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের দাবি জানাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। সোমবারের চিঠিতে ভাষাগত পরিবর্তনটা সরকারের অবস্থানের বহিঃপ্রকাশ।”
মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে আরও বলা হয়, গত ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম পরিচালনা করে। সাম্প্রতিক সময়ে ‘লক্ষ্য করা যাচ্ছে’, গুচ্ছভুক্ত কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পুনঃপুন অনুরোধ ‘অগ্রাহ্য করে’ নিজস্ব উদ্যোগে পৃথকভাবে ভর্তি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
“বর্তমান পরিস্থিতিতে গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে ভর্তি পরীক্ষার উদ্যোগ গ্রহণ করলে শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের জন্য তা বাড়তি আর্থিক-মানসিক চাপ ও বিভ্রান্তির সৃষ্টি করবে। এছাড়া উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা কঠিন হয়ে পড়বে।”
ইতোমধ্যে অভিভাবক ও ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতি বহাল রাখার পক্ষে একাধিক স্মারকলিপি পাওয়ার কথা জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “অতিসম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু সাধারণ শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় গুচ্ছ পদ্ধতি বহাল রাখার জোরালো দাবি জানায়।
“২০২৪- ২০২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তিচ্ছু প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর পক্ষে আবেদনকারীরা তাদের আর্থিক-মানসিক কষ্ট লাঘব ও সময় সাশ্রয়সহ বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ার অভিপ্রায়ে গুচ্ছ পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত মেনে না নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন।”
শিক্ষার্থীদের দাবির সঙ্গে ‘মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ‘একমত’ জানিয়ে চিঠিতে বলা হয়, “গুচ্ছ পদ্ধতির মাধ্যমে মেধাভিত্তিক ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সময় ও অর্থ সাশ্রয়সহ নানাবিধ কষ্ট লাঘব হবে। তবে, গুচ্ছ পরীক্ষা পদ্ধতির বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে, তা মোকাবেলা করে কীভাবে এ পদ্ধতি সবার কাছে আরও গ্রহণযোগ্য, ত্রুটিমুক্ত ও গতিশীল করা যায়, সে বিষয়ে এ বিভাগ থেকে সব পক্ষের সঙ্গে বসে যথাযথ পর্যালোচনাপূর্বক এ পদ্ধতি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।”
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। গত শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালায়। তবে নতুন (২০২৪-২৫) শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
এর মধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্যদের চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। চিঠিতে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।”
শিক্ষা উপদেষ্টার পর গত ১০ ডিসেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একই অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”
সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গুচ্ছে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপচার্যদের চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, “উপাচার্যদের নেতৃত্বে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”