‘ঝুঁকিপূর্ণ’ সলিমুল্লাহ হল নিয়ে নতুন ভাবনা ঢাবি কর্তৃপক্ষের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় শতবর্ষী সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের বারান্দাসহ বেশ কয়েক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় এবার নতুন শিক্ষাবর্ষের কোনো শিক্ষার্থীকে সেখানে দেওয়া হবে না।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Sept 2021, 03:12 PM
Updated : 30 Sept 2021, 03:13 PM

ব্রিটিশ আমলে তৈরি এই হলে পর্যায়ক্রমে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা কমিয়ে এনে ‘বিশেষায়িত হল’ ঘোষণার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

ফাটল দেখা দেওয়ায় বৃহস্পতিবার বিকালে হল পরিদর্শন শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান সাংবাদিকদের এ পরিকল্পনার কথা জানান।

সেখানে উপাচার্যের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রব্বানী ও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক নিজামুল হক ভূঁইয়াও উপস্থিত ছিলেন।

উপাচার্য বলেন, “হলটি বড় আকারের ঝুঁকিতে আছে। আমরা শিগগিরিই সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছি, এখানে নতুন করে আর শিক্ষার্থী দেব না। যারা থাকবে, তারা কেউ বারান্দায় থাকতে পারবে না, নির্ধারিত কক্ষেও ঠাসাঠাসি করে থাকতে পারবে না। হলটিকে দ্রুত হালকা করতে হবে। নচেৎ বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকবে।”

পাশ্চাত্য ও মুঘল স্থাপত্যশৈলীর আদলে ১৯৩১ সালের ১১ অগাস্ট গড়ে উঠে দ্বিতলবিশিষ্ট সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। ঢাকার নবাব স্যার সলিমুল্লাহর নামে হলটির নামকরণ হয়।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে রয়েছে ১৮০টি কক্ষ, যার মধ্যে ১৫২টি ছাত্রদের থাকার জন্য।

শুরুতে ১৭৮ জন শিক্ষার্থী নিয়ে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে হলের আবাসিক ছাত্র সংখ্যা সাত শতাধিক। আবাসিক-অনাবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৮৯১ জন।

শয্যা সঙ্কটের কারণে হলের দ্বিতীয় তলার দক্ষিণ পাশে প্রশস্ত বারান্দায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী সারি সারি বিছানা পেতে কষ্ট করে থাকছিল।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে হল বন্ধ থাকাকালে সম্প্রতি হলের বারান্দাসহ একাধিক জায়গায় ফাটল দেখা দেওয়ায় তা পর্যবেক্ষণে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমানকে আহ্বায়ক করে একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন প্রকৌশলী ও বুয়েটের তিনজন বিশেষজ্ঞ রয়েছেন।

আগামী ৭ অক্টোবরের মধ্যে বারান্দা থেকে খাট, বিছানাসহ ভারী জিনিসপত্র সরিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের নির্দেশ দিয়েছে হল কর্তৃপক্ষ।

সলিমুল্লাহ হলে দেখা দিয়েছে ফাটল।

 

বিশেষজ্ঞ কমিটি হলটিকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ উল্লেখ করে রিপোর্ট দিয়েছে জানিয়ে উপাচার্য আখতারুজ্জামান বলেন, “প্রতিবেদন আমরা পেয়েছি। আজকে এখানে লক্ষ করলাম হলটি খুব ঝুঁকিতে আছে। কোনো ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যাতে না ঘটে, সেজন্য আমাদের সকল ধরনের প্রয়াস থাকবে।”

এর আগে ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের একটি হলরুমের ছাদ ধসে পড়ে মারা গিয়েছিল ৪০ শিক্ষার্থী।

প্রায় দেড় বছর বন্ধ থাকার পর আগামী ৫ অক্টোবর থেকে অগ্রাধিকারভিত্তিতে স্নাতক চতুর্থ বর্ষ ও স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থীর জন্য খোলা হচ্ছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলো। টিকা গ্রহণ সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে স্নাতক প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীদের জন্যও আবাসিক হল খুলে দেওয়া হবে।

এছাড়া চলতি অক্টোবরে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির ভর্তি পরীক্ষা শেষে নতুন শিক্ষার্থীরা আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ে।

সলিমুল্লাহ হলের বারান্দায় এভাবে থাকছিল শিক্ষার্থীরা।

সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে কমিয়ে আনা হবে জানিয়ে উপাচার্য বলেন, “হল প্রশাসন ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে, হলের বারান্দায় বা অন্যত্র কোনো শিক্ষার্থী থাকবে না। এই বারান্দায় যাতে শিক্ষার্থীদের না রাখতে হয়, সে জন্য এ বছর থেকেই হলে শিক্ষার্থী অ্যালোটমেন্ট দেওয়া হবে না। একইসঙ্গে ক্রমান্বয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমিয়ে আনতে হবে, এটিই বিশেষজ্ঞদের মতামত।”

হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক মো. মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা একটা ঐতিহ্যবাহী হল, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হলে অ্যালটমেন্ট পেয়েছিলেন। হলটি ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে বিশেষায়িত করার কথা ভাবছে বিশ্ববিদ্যালয়।”