শিক্ষার্থীদের নিয়ে ভিসির বাড়ির সামনে ‘গণরুমের নেতা’ সৈকত

বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে ‘গণরুম সমস্যার’ সমাধান না হওয়ায় একদল শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়েছেন ডাকসু সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Oct 2019, 06:18 AM
Updated : 29 Oct 2019, 06:18 AM

কর্তৃপক্ষ সোমবারের মধ্যে উদ্যোগ না নিলে মঙ্গলবার গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বাসভবনে ওঠার ঘোষণা দিয়ে রেখেছিলেন তিনি। 

সে অনুযায়ী ১৯ জন শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে সৈকত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় ভিসি বাংলোর ফটকের বাইরে রাস্তার ওপর অবস্থান নেন।

‘প্রথম বর্ষে বৈধ সিটের অধিকার চাই’, ‘হলের সংখ্যা বৃদ্ধি কর, অতপর ছাত্র ভর্তি কর’, থাকার জন্য জায়গা চাই, গণরুমে ঠাঁই নাই’, ‘আমরা এখন চুপসে গেছি, জ্ঞানশূন্য কালোমাছি’- ইত্যাদি স্লোগান লেখা ফেস্টুন দেখা যায় তাদের হাতে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ও ভবনের নিরাপত্তাকর্মীদের এ সময় শিক্ষার্থীদের পেছনে গেইটের সামনে সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। 

ছাত্রলীগের গত কমিটির কেন্দ্রীয় সদস্য সৈকত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের পূর্বঘোষিত ঘোষণা অনুযায়ী সকালে ভিসি স্যারের বাসভবনে ঢুকতে গেলে প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যরা এবং গেটম্যানরা বাধা দেয়। এরপর আমরা রাস্তায় অবস্থান নিয়েছি। গণরুম সংকটের সমাধানে দৃশ্যমান কিছু না করা পর্যন্ত আমরা এখানেই অবস্থান করব, খাব, ঘুমাব।”

ঘটনাস্থলে উপস্থিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবদুর রহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা তাদের সাথে আলোচনা করছি। এটা তাদের গণতান্ত্রিক দাবি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের পরিকল্পনাতেও এটা আছে। কিন্তু এটা তো সময়সাপেক্ষ একটি বিষয়। আমরা আশা করি তারা আমাদের আহ্বান অনুযায়ী সরে যাবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭টি হলে শিক্ষার্থী আছেন ধারণক্ষমতার দ্বিগুণেরও বেশি। আবাসন সঙ্কটের কারণে প্রতিটি হলেই সৃষ্টি হয়েছে ‘গণরুমের’, যেখানে মেঝেতে টানা বিছানা পেতে প্রথম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীদের গাদাগাদি করে থাকতে হয়। কারা এসব কক্ষে থাকবে তার নিয়ন্ত্রণ থাকে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের নেতাদের হাতে। 

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের লেখাপড়া শেষ হয়ে যাওয়ার পরও অনেক শিক্ষার্থী দীর্ঘদিন হলে থেকে চাকরি খোঁজেন। ফলে কাগজে কলমে তাদের সিট না থাকলেও বাস্তবে আসন খালি হয় না।

গণরুম সঙ্কটের সমাধানের দাবিতে গত ১ সেপ্টেম্বর কবি জসীমউদ্দীন হলের ২০৮ নম্বর কক্ষের গণরুমে গিয়ে ওঠেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান সৈকত।

১ অক্টোবর বিভিন্ন হলের গণরুমের প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে রাজু ভাস্কর্যের সামনে এক সমাবেশ থেকে তিনি ঘোষণা দেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান করার ব্যবস্থা না নিলে গণরুমের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি উপাচার্যের বাসায় গিয়ে উঠবেন।

সেই সময়সীমার কথা মনে করিয়ে দিতে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডাকসু সদস্য সৈকত।

সেদিন তিনি বলেন, “এই সমস্যার সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে দেওয়া ১৫ কার্যদিবসের সময়সীমা আগামী সোমবার শেষ হবে। আগামী মঙ্গলবার উপাচার্য মহোদয়ের সাথে সকালের নাস্তা করার মধ্য দিয়ে আমরা উপাচার্য ভবনে থাকার শুরু করব।”

এদিকে গণরুমের দুর্দশা লাঘবের প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে গত ১০ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কমিটির সভায় সিদ্ধান্ত হয়, মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হবে। এর পরে কোনোভাবেই হলে থাকা চলবে না।

পাশাপাশি আবাসন সঙ্কট মেটাতে হলে ‘বাংক বেড’ স্থাপনের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য একটি কমিটি করা হয় ওই সভায়।

ছাত্রদের দুরবস্থা নিজের চোখে দেখতে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান গত রোববার কবি জসিম উদদীন হল এবং মাস্টারদা সূর্যসেন হলের গণরুম হিসেবে পরিচিত কয়েকটি কক্ষ ঘুরে দেখেন।

সেখানে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোতে দীর্ঘদিনের পুঞ্জীভূত সমস্যা সমাধানে পরিকল্পিত কর্মকৌশল গ্রহণের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। এছাড়া হলগুলো থেকে অছাত্রদের উৎখাতে হল প্রশাসনের পাশাপাশি হল সংসদগুলোকেও সম্পৃক্ত করতে হবে।