মাস্টারদা সূর্যসেন হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নের কক্ষ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করার দাবি করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
Published : 17 Jul 2024, 03:10 PM
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষ ও প্রাণহানির পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ নেতাদের বের করে দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের না পেয়ে বুধবার ভোর রাতে শিক্ষার্থীরা তাদের কক্ষে ভাঙচুর চালায়। পাশাপাশি বিশ্বিবদ্যালয়ের অন্তত ১৪টি হলে 'ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ' মর্মে অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষর আদায় করে তারা।
মঙ্গলবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকা বিনতে হোসাইনসহ নয় নেত্রীকে হল থেকে মারধর করে বের করে দেওয়া হয়। একইভাবে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের বের করে দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অধিকাংশ হলের নিয়ন্ত্রণ নেন।
কবি জসীম উদ্দিন হলের ফটকে একটি কাগজ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়, সেখানে লেখা ‘ছাত্রলীগ ও টোকাইমুক্ত কবি জসীম উদ্দিন হল’।
স্যার এ এফ রহমান হলে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন, বিজয় একাত্তর হলর সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনান, মাস্টার দা সূর্যসেন হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন, কবি জসীম উদ্দিন হলে সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকতসহ সংগঠনের অনেক নেতার কক্ষ ভাঙচুর করা হয়।
সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সূর্যসেন হলে মাজহারুল কবির শয়নের ৩৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে একটি অস্ত্র উদ্ধার করার দাবি করেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।পরে ওই কক্ষে ভাঙচুর চালানো হয়।
হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাকির হোসেন ভূইয়া বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিক্ষার্থীরা একটি অস্ত্র উদ্ধার করে হল অফিসে জমা দিয়ে গেছে।”
ওই অস্ত্রের বিষয়ে কথা বলতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়নকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংঘাত এড়ানোর আমরা নিজেরাই হল থেকে বেরিয়ে গেছি। আমরা কোনো সংঘাত চাই না। কিন্তু তারা সাধারণ শিক্ষার্থীর নামে হলগুলোতে তাণ্ডব চালিয়েছে, ভাঙচুর করেছে।
“যারা ছাত্রদের আবেগকে বিক্রি করে এধরনের তাণ্ডব চালিয়েছে, অচিরেই তাদের মুখোশ উন্মোচিত হবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদেরকে উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনতে হবে।”
সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ তছনছ করে জিনিসপত্র ফেলে দেওয়া হয়েছে হলের আঙিনায়
ছাত্রলীগ নেতাদের কক্ষ ভাঙচুরের বিষয়ে প্রশ্ন করলে কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের কারো কক্ষ ভাঙচুরের নির্দেশ দেইনি। সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে তাদেরকে হল থেকে বের করে দিয়েছে। কেননা তারা অছাত্র এবং হলে থেকে শিক্ষার্থীদের উপর দীর্ঘদিন নিপীড়ন ও নিষ্পেষণ করেছে। শিক্ষার্থীরা তার উপযুক্ত জবাব দিয়েছে।”
এদিকে ডজনখানেক হলে 'ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ' ঘোষণার অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের স্বাক্ষরের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মো. ইকবাল রউফ মামুন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রভোস্টরা হলের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে পারে না। এটার জন্য সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। কিন্তু শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে বিভিন্ন হলে প্রভোস্টরা বাধ্য হয়ে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর করছেন।
“আমরা শিক্ষার্থীদের বলেছি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ ছাড়া তাদের সব দাবি মেনে নেব। কেননা এগুলো তাদের নিরাপত্তার সাথে জড়িত। কিন্তু তারা তা মানেনি। তাই বাধ্য হয়ে প্রভোস্টরা স্বাক্ষর করেছেন। তবে বিষয়টি পরে বিবেচনা করা হবে।"
ছাত্র রাজনীতি ‘নিষিদ্ধ’ ঘোষণার পাশাপাশি এসব অঙ্গীকারনামায় শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন ধরনের ‘সিদ্ধান্তের’ কথাও বলা হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি।
এদিকে ক্যাম্পাসে ঢোকার পথ মঙ্গলবার রাত থেকেই বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ। প্রবেশ পথগুলোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসের একজন করে কর্মচারীকেও অবস্থান করতে দেখা গেছে। ক্যাম্পাসে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি।
সকাল থেকে এ পর্যন্তও ক্যাম্পাসে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেয়নি পুলিশ। তবে শিক্ষার্থীদের বের হতে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী এদিন দুপুরে সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সেই সঙ্গে বুধবার সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “পরবর্তীতে হল খোলার পর মেধার ভিত্তিতে সিট বরাদ্দ করে শিক্ষার্থীদের হলে ওঠানো হবে। বহিরাগত কাউকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ ও অবস্থান না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হল।”
পুরনো খবর
ছাত্র রাজনীতি ‘নিষিদ্ধের' অঙ্গীকারনামায় প্রাধ্যক্ষদের সই নিয়েছে ঢাবির হলের শিক্ষার্থীরা