“সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও জগন্নাথ হলের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে,” বলেন উপাচার্য।
Published : 02 Dec 2024, 01:29 AM
জগন্নাথ হল ঘিরে ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করার চেষ্টা’ চলছে– এমন তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়ে ছাত্রনেতাদের সঙ্গে জরুরি সভা করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
রোববার বিকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, শনিবার রাতে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নিয়াজ আহমদ খানের সভাপতিত্বে ওই ভার্চুয়াল সভা হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা, প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ ও প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির আহ্বায়ক আব্দুলাহ-আল-মামুন সভায় অংশ নেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার ছিলেন সভায়।
এছাড়া জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিল, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র অধিকার পরিষদ, স্বাধীন বাংলাদেশ ছাত্র সংসদ, পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদ, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন এবং সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) নেতারাও ভার্চুয়াল ওই সভায় যুক্ত ছিলেন।
সভায় ‘ধর্মীয় উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড’ প্রতিরোধ, সামাজিক ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ সংক্রান্ত ‘অপপ্রচার’ রোধ করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপপ্রচার হতে পারে। সেটাকে কেন্দ্র করে আমরা তাদের সঙ্গে বসেছি। সার্বিকভাবে অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ তৈরি করতে এবং সম্প্রীতি বজায় রাখতে তাদের পরামর্শ নেওয়া হয়েছে।
“যখনই আমাদের মনে হবে, কোনো বিষয়ে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে হবে, তখনই আমরা তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।"
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সভায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখা ও জগন্নাথ হলের নিরাপত্তার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।”
সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা নিজেদের পরামর্শ প্রশাসনের কাছে তুলে ধরেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সারা দেশে ধর্মীয় বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা চলছে। তারই অংশ হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় জগন্নাথ হল বা অন্যান্য যে ধর্মীয় উপাসনালয়গুলো আছে, সেগুলো ঘিরে নানা রকম ষড়যন্ত্র হতে পারে বলে তথ্য পাওয়া যাচ্ছে।
"অনাকাঙ্ক্ষিত এসব ঘটনা না যেন না ঘটে, সে বিষয়ে আমরাও নিজেদের জায়গা থেকে সহযোগিতা করছি।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান ছাত্রদলের নেতা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি আবু সাদিক কায়েম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সভায় তাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বেশ কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
"আমরা বলেছি, সোশ্যাল মিডিয়ায় যেসব প্রচার হচ্ছে, সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ফ্যাক্ট চেক করার জন্য একটি সেল থাকা প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের সেশন আয়োজন করা যেতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় আন্তঃধর্মীয় সম্প্রীতি সপ্তাহ করতে পারে। এ বিষয়ে বিভিন্ন কনফারেন্স হতে পারে। মসজিদের ইমামরা খুতবায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিষয়ে আলোচনা করতে পারেন।”
সাদিক কায়েম বলেন, "ইসলামিক ছাত্র শিবিরের পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সম্প্রীতি রক্ষা করার জন্য তারা যেন সবসময় সতর্ক থাকে। কোনো অস্বাভাবিক বিষয় পরিলক্ষিত হলে তারা যেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সেটি জানায়। আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা প্রশাসনের সঙ্গে এ বিষয়ে কাজ করব, সেটা আমরা নিশ্চিত করেছি।"
বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, "আমরা প্রথমেই স্পষ্ট করেছি, ধর্মীয় ও জাতিগত বিভাজনের রাজনীতি গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। দেশকে অস্থিতিশীল করার জন্য এ ধরনের নানা উসকানি দিয়ে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
"প্রক্টর স্যার এবং ভিসি স্যার আমাদের জানিয়েছেন, বিশ্বস্ত গোয়েন্দা সংস্থা থেকে জানা গেছে জগন্নাথ হলের দুটি মূর্তি আছে, যেগুলো ইস্কনের পৃষ্ঠপোষকতায় তৈরি করা, সেগুলোর উপর হামলা হতে পারে।"