“যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন, তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করা বা এগুলোর গণতন্ত্রায়ন করা সম্ভব না,” বলা হয় বিবৃতিতে।
Published : 13 Aug 2024, 06:03 PM
ক্ষমতার পালাবদলে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রশাসনিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে- সেখানে সৎ, বিদ্বান ও দল নিরপেক্ষ প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্ক।
তাদের ভাষ্য, কেবল দলনিরপেক্ষ নামি একাডেমিকই নয়, রুগ্ন বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে যারা বরাবরই ভাবেন এবং সেই পরিবর্তনগুলো আনতেও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ- এমন প্রশাসক নির্বাচন করতে হবে।
মঙ্গলবার বিকালে ‘বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কেমন প্রশাসক চাই?’ শীর্ষক এক বিবৃতিতে এ দাবি জানায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের এই মোর্চা। শিক্ষক নেটওয়ার্কের পক্ষে বিবৃতিটি পাঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরীন।
বিবৃতিতে বলা হয়, “আমরা লক্ষ্য করি যে- ঢাকা, রাজশাহী, জাহাঙ্গীরনগর ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসকরা একযোগে পদত্যাগ করা শুরু করেছেন। …এ শূন্যতার মধ্যে বিভিন্ন দলীয় শিক্ষকদের সেই পদ পূরণে প্রচুর দৌড়ঝাঁপ করতে দেখা যাচ্ছে।
“অথচ তাদের অনেকেরই শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের পক্ষে থাকার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে, বিগত সরকারের ফ্যাসীবাদী উন্নয়ন রেটোরিকের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান থাকার নজির নেই।”
শিক্ষক ও ছাত্ররাজনীতির যে অগ্রহণযোগ্য পুরোনো ধরন, পুরো জাতিই তার বদল চায় মন্তব্য করে বিবৃতিতে বলা হয়, “আর কোনো দলীয় ব্যক্তিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শীর্ষ পদে নিয়োগ না দেওয়াই হতে পারে তার অন্যতম পূর্বশর্ত। ব্যক্তিগত ও দলীয় স্বার্থে কাজ করা ব্যক্তিদের পুনঃনিয়ন্ত্রণে যাওয়া- বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পুরোনো কাঠামো রূপান্তরের জন্য সঠিক পদক্ষেপ নয়।”
বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সৎ, বিদ্বান ও দল নিরপেক্ষ প্রশাসক নিয়োগের দাবি জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, “তারা যদি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা হন এবং সে স্বপ্নকে বাস্তবায়নের কর্মপন্থা নিরূপণ করতে পারেন, তবে বিশ্ববিদ্যালয় বদলানো তাদের পক্ষে সম্ভব হবে। দেশের ক্ষমতায় যাবার রাজনীতিতে যুযুধান রাজনৈতিক দলের লেজুড় হিসেবে যারা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে নিজ দলের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন, তাদের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বৈশ্বিক মানে উন্নীত করা বা এগুলোর গণতন্ত্রায়ন করা সম্ভব না।
“এজন্য প্রয়োজন এমন শিক্ষকদের- যারা সৎ, গুণী, ন্যায়-নীতিবান; যাদের আছে দীর্ঘ শিক্ষাদান এবং মানসম্পন্ন গবেষণার প্রমাণ, যাদের দলীয় লেজুড়বৃত্তির রাজনীতি করার নয় বরং শিক্ষার্থীবান্ধব, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকার প্রশ্নে উচ্চকণ্ঠ ও প্রতিবাদী হবার নজির আছে।”
কোন ধরনের শিক্ষকদের মূল্যায়ন প্রয়োজন বলে মনে করে শিক্ষক নেটওয়ার্ক তাও তুলে ধরা হয়েছে বিবৃতিতে।
“দলীয় শিক্ষক রাজনীতির বাইরে, অনেক শিক্ষক স্বাধীনভাবে গত দেড় দশক ধরে বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে ভাবছেন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ অনিয়ম ও যথেচ্ছাচারের প্রতিরোধ করতে দমন-পীড়ন সব তুচ্ছ করে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অধিকারের প্রশ্নে সবসময় হাজির থেকেছেন কিংবা চুপ করে ক্ষমতাসীনদের পক্ষাবলম্বন বা ছায়া হিসেবে সুবিধা ভোগ করেননি।”
পুরো শিক্ষা ব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন এবং শিক্ষা কমিশন গঠন করাও জরুরি বলে মন্তব্য করা হয় বিবৃতিতে। এতে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকারকে মনোযোগী ও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।