এটিই প্রথম বড় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়, যা তার নীতি পরিবর্তনের প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করল।
Published : 15 Apr 2025, 11:43 AM
হোয়াইট হাউজের কয়েকটি দাবির তালিকা প্রত্যাখ্যান করার পর হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শতাধিক কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল আটকে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ডনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন।
শিক্ষা বিভাগ এক বিবৃতিতে বলেছে, “হার্ভার্ডের আজকের বিবৃতি আমাদের দেশের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোর অধিকার নিয়ে প্রচলিত উদ্বিগ্ন মানসিকতাকেই আবার প্রকাশ করেছে।”
হোয়াইট হাউজ গত সপ্তাহে হার্ভার্ডের কাছে দাবি সংবলিত একটি তালিকা পাঠায়। বলা হয়, ক্যাম্পাসে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য এটা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে প্রশাসন, নিয়োগ ও ভর্তি পদ্ধতিতে পরিবর্তনের বিষয় ছিল।
এসব দাবি প্রত্যাখ্যান করে হার্ভার্ড সোমবার বলেছে, হোয়াইট হাউস তার কমিউনিটিকে ‘নিয়ন্ত্রণের’ চেষ্টা করছে।
বিবিসি লিখেছে, এটাই প্রথম বড় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়, যা তার নীতি পরিবর্তনের প্রশ্নে ট্রাম্প প্রশাসনের চাপ উপেক্ষা করল।
হোয়াইট হাউজ যে ব্যাপক পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছিল, তাতে হার্ভার্ডের কার্যক্রম বদলে যেত এবং সরকারের বড় ধরনের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা হত।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, গাজা যুদ্ধ ও ইসরায়েলের প্রতি মার্কিন সমর্থনের বিরুদ্ধে গতবছর যখন যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ক্যাম্পাসগুলো বিক্ষোভ উত্তাল হয়ে ওঠে, তখন শীর্ষ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
হার্ভার্ড কমিউনিটির কাছে লেখা এক চিঠিতে এ প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট অ্যালান গার্বার বলেন, হোয়াইট হাউজ শুক্রবার একটি ‘হালনাগাদ ও সম্প্রসারিত দাবির তালিকা’ পাঠিয়েছে এবং সরকারের সঙ্গে ‘আর্থিক সম্পর্ক’ বজায় রাখতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘অবশ্যই সেসব দাবি মানতে হবে’ বলে সতর্ক করেছে।
তিনি লেখেন, “আমরা আমাদের আইনজীবীর মাধ্যমে প্রশাসনকে জানিয়েছি, আমরা তাদের প্রস্তাব গ্রহণ করব না। বিশ্ববিদ্যালয় তার স্বাধীনতা বিসর্জন দেবে না বা সাংবিধানিক অধিকার ত্যাগ করবে না।”
গার্বার বলেন, ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের বাধ্যবাধকতাকে বিশ্ববিদ্যালয় ‘হালকাভাবে নেয়নি’, তবে সরকার বাড়াবাড়ি করছে।
“যদিও সরকার বর্ণিত কিছু দাবিতে ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা রয়েছে, তবে বেশিরভাগই হার্ভার্ডের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক কর্মকাণ্ডের’ ওপর সরাসরি সরকারি নিয়ন্ত্রণের প্রতিনিধিত্ব করে।”
তার চিঠি পাঠানোর পরপরই শিক্ষা বিভাগ জানায়, তারা হার্ভার্ডের ২২০ কোটি ডলারের অনুদান এবং ৬ কোটি ডলারের চুক্তি স্থগিত করছে।
এতে বলা হয়, “সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার যে ব্যাঘাত ঘটেছে তা অগ্রহণযোগ্য।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “ইহুদি শিক্ষার্থীদের হয়রানি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। সমস্যাটিকে এখন অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়ার সময় এসেছে এবং করদাতাদের সহায়তা অব্যাহত রাখতে চাইলে অর্থবহ পরিবর্তনে প্রতিশ্রুতিশীল হওয়া দরকার।”
হোয়াইট হাউজ শুক্রবার এক চিঠিতে বলেছে, ফেডারেল বিনিয়োগকে ন্যায্যতা দেয়-এমন বুদ্ধিবৃত্তিক এবং নাগরিক অধিকার রক্ষায় সাম্প্রতিক বছরগুলোতে হার্ভার্ড ব্যর্থ হয়েছে।
চিঠিতে প্রস্তাবিত পরিবর্তনের জন্য ১০টি ক্যাটাগরি রাখা ছিল। হোয়াইট হাউজ বলছে, ‘ফেডারেল সরকারের সঙ্গে আর্থিক সম্পর্ক’ বজায় রাখতে এসব হার্ভার্ডের জন্য প্রয়োজনীয়।
কিছু পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে- আমেরিকান মূল্যবোধের প্রতি ‘বৈরী’- এমন শিক্ষার্থীদের বিষয়ে ফেডারেল সরকারকে অবহিত করা; প্রতিটি একাডেমিক বিভাগে ‘বৈচিত্র্যময় দৃষ্টিভঙ্গি’ নিশ্চিত করা এবং ইহুদি বিদ্বেষমূলক হয়রানিকে সর্বাধিক ইন্ধনদানকারী প্রোগ্রাম ও বিভাগে নিরীক্ষণের জন্য সরকার-অনুমোদিত বহিরাগত নিরীক্ষা দলকে দায়িত্ব দেওয়া।
চিঠিতে গত দুই বছরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভের সময় বিধি ‘লঙ্ঘনের’ ঘটনায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈচিত্র্য, সমতা এবং অন্তর্ভুক্তি নীতি ও কর্মসূচির অবসানও দাবি করা হয়।
বিবিসি লিখেছে, ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইহুদি বিদ্বেষ মোকাবেলা এবং বৈচিত্র্য চর্চার অবসান ঘটাতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন।
ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার দুই মাস বাদে ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শীর্ষস্থানীয় মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রেসিডেন্টরা একটি উত্তেজনাপূর্ণ কংগ্রেশনাল শুনানির মুখোমুখি হয়েছিলেন। সেখানে তাদের বিরুদ্ধে ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
হার্ভার্ডের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ক্লডিন গে পরে শুনানিতে বলেছিলেন, ইহুদিদের হত্যার আহ্বান ঘৃণ্য, তবে এই ধরনের মন্তব্য হার্ভার্ডের আচরণবিধি লঙ্ঘন করে কি না- সেটি বিবেচনার বিষয়।
এই মন্তব্যের পর চৌর্যবৃত্তির অভিযোগের মুখে এক মাস বাদে তিনি পদত্যাগ করেছিলেন।
ট্রাম্প প্রশাসন গেল মার্চে জানিয়েছিল, তারা হার্ভার্ডের প্রায় ২৫৬ মিলিয়ন ডলারের ফেডারেল চুক্তি ও অনুদান এবং ৮৭০ কোটি ডলারের বহু বছরের জন্য প্রতিশ্রুত অনুদান পর্যালোচনা করছে।
এর প্রতিক্রিয়ায় হার্ভার্ড অধ্যাপকরা একটি মামলা করেন। তারা অভিযোগ করেন, সরকার বেআইনিভাবে বাক স্বাধীনতা এবং একাডেমিক স্বাধীনতার উপর আক্রমণ করছে।
হোয়াইট হাউজ এর আগে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৪০ কোটি ডলারের ফেডারেল তহবিল প্রত্যাহার করেছিল। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধেও ইহুদি বিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই এবং ইহুদি শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় ব্যর্থতার অভিযোগ আনা হয়েছিল।
৪০ কোটি ডলারের তহবিল প্রত্যাহারের সময় শিক্ষামন্ত্রী লিন্ডা ম্যাকমাহন বলেছিলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যদি ফেডারেল তহবিল পেতে চায়, তবে তাদের অবশ্যই বৈষম্যবিরোধী সব ফেডারেল আইন মেনে চলতে হবে।”
এর পরপরই প্রশাসনের বেশ কয়েকটি দাবির বিষয়ে সম্মতি দিয়েছিল কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে তখন কিছু শিক্ষার্থী ও শিক্ষক সমালোচনা করেছিল।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনপন্থি বিক্ষোভের এক সংগঠকের আইনজীবী সোমবার জানান, মার্কিন নাগরিকত্বের আবেদনের অংশ হিসেবে একটি সাক্ষাৎকারে অংশ নেওয়ার সময় তার মক্কেলকে গ্রেপ্তার করেছে অভিবাসন কর্মকর্তারা।
গ্রিন কার্ডধারী মোহসেন মাহদাওয়িকে সোমবার ভারমন্টের কোলচেস্টার থেকে আটক করা হয়। আগামী মাসে তার গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কথা।
কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মাহমুদ খলিল, টাফ্টস বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমেইসা ওজতুর্কসহ ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে অংশ নেওয়া অন্যরা সম্প্রতি আটক হয়েছেন।