ফাহাদ বলেন, “শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির অজুহাত দিয়ে তারা আমাকে জানালেন সার্টিফিকেট হাতে পেতে সময় লাগবে। অথচ সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্র আমার রোববারেই লাগবে। কি যে হবে বুঝতেছি না।”
Published : 10 Jul 2024, 04:32 PM
সর্বজনীন পেনশনের ‘প্রত্যয় স্কিম’ বাতিল দাবিতে শিক্ষক এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের চলমান আন্দোলন গড়িয়েছে নবম দিনে। এ পরস্থিতিতে উচ্চশিক্ষার জন্য ক্যাম্পাসের অফিস থেকে জরুরি কাগজপত্র তুলতে গিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন অনেক শিক্ষার্থী।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সানাউল্লাহ আল ফাহাদ উচ্চশিক্ষার প্রয়োজনে স্নাতকের সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্র চেয়ে আবেদন করেছেন। কিন্তু ওই আন্দোলনের কারণে তিনি সেসব হাতে পাচ্ছেন না।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে ফাহাদ বলেন, “স্নাতকের সার্টিফিকেট তুলতে গত মঙ্গলবার আমি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণক অফিসে যাই। নিয়ম অনুযায়ী আমি সমস্ত ফি পরিশোধ করি। কিন্তু শিক্ষকদের চলমান কর্মবিরতির অজুহাত দিয়ে তারা আমাকে জানালেন সার্টিফিকেট হাতে পেতে সময় লাগবে। অথচ সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্র আমার রোববারই লাগবে। কি যে হবে বুঝতেছি না।”
গত মার্চ মাসে সর্বজনীন পেনশনের আগের চারটি স্কিমের সঙ্গে ‘প্রত্যয় স্কিম’ নামের একটি প্যাকেজ চালু করে অর্থ মন্ত্রণালয়। তাতে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন সব ধরনের স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত, রাষ্ট্রায়ত্ত, সংবিধিবদ্ধ বা সমজাতীয় সংস্থা এবং তাদের অধীনস্থ অঙ্গ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ২০২৪ সালের ১ জুলাইয়ের পর যোগ দেওয়া কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
শিক্ষক সমিতির অভিযোগ, এ স্কিম ‘বৈষম্যমূলক’। এর অন্তর্ভুক্ত হলে ১ জুলাই এবং এর পরে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষকরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
এই স্কিম বাতিলের দাবিতে গত ১ জুলাই থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতিতে নামেন। শিক্ষকদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে বুধবারও সকাল-দুপুর কর্মবিরতি পালন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা, কর্মচারী ও সহায়ক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ।
বুধবার দুপুর ২টার দিকে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসে যাওয়ার পর সার্টিফিকেট ও নম্বরপত্র নিয়ে কাজ করেন এমন দায়িত্বরত কোনো কর্মকর্তাকে চেয়ারে দেখা যায়নি। জরুরি কাজে আসা শিক্ষার্থীদের একে একে ফিরে যেতে দেখা যায়।
কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর একজন নারী কর্মকর্তা এলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, 'আমরা জরুরি কাগজপত্রের কাজ করছি, তবে তা সীমিত পরিসরে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সবাই কর্মবিরতিতে থাকার কারণে ওই সময় আমাদের কার্যক্রম চলে না। দুপুরের পরে বিশ্ববিদ্যালয় ছুটির আগে পর্যন্ত এক ঘণ্টা আমরা এসব কাজে শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা করি।”
বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা সমিতির সভাপতি মো. আব্দুল কাদের বলেন, “সর্বজনীন পেনশন স্কিম থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বাদ দিতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের দাবি না মানা হবে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম থেকে নিজেদের বিরত রাখব।'
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মাশরিক হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের কোন শিক্ষক ক্লাসে যাবেন না, কোনো পরীক্ষা নিবেন না।'
অধ্যাপক মাশরিক শিক্ষকদের দাবি মেনে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতে সরকারের দায়িত্বশীলদের প্রতি অনুরোধ জানান। দাবি আদায়ের পর অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হবে বলেও তিনি আশ্বাস দেন।
এদিকে সরকারি চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে নেমেছেন। বুধবার সকাল-সন্ধ্যা ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি অনুযায়ী ‘বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ ব্যানারে গুলিস্তানের জিপিও মোড় অবরোধ করেন তারা।
কোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩৪টি বিভাগের ১১৮টি ব্যাচ ক্লাস পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়ে রেখেছে আন্দোলনকারীর।