সাদিক কায়েমকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে।
Published : 22 Sep 2024, 12:16 AM
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের দলীয় রাজনীতি থাকবে কি না, এই প্রশ্নে ছাত্র সংগঠনগুলোর সঙ্গে উপাচার্যের বৈঠকে আলোচনা ছাপিয়ে গেল জামায়াতের ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির পরিচয় প্রকাশ নিয়ে।
শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংগঠনগুলোর নেতারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে দুই দফায় আলোচনা করে। বেলা ১১টায় প্রথম দফায় আলোচনা হয়।
এই আলোচনায় গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের আহ্বায়ক কমিটির সাজেদুল ইসলাম ও প্রজ্ঞা চৌধুরী, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলনের পক্ষ থেকে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের আতিক চৌধুরী, নৃবিজ্ঞানের নাইম উদ্দিন, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের আদনান আজিজের পাশাপাশি ছিলেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদিক কায়েম ও সাহিত্য সম্পাদক রেজাউল করিম শাকিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের কেউ এই প্রথম নিজের পরিচয় প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং সাদিক কায়েম নিজেই তার রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করেন, যিনি এতদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নানা কর্মসূচিতে সামনের সারিতে থাকতেন।
গত ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসকে বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতাদের সঙ্গে তিনিও যান। এরপর অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দেন। একাধিক উপদেষ্টার পাশেও দেখা গেছে তাকে।
নিয়াজ আহমেদ খান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হওয়ার পরেও তার পাশেও দেখা গেছে সাদিককে।
এই বৈঠকের পরে সাদিক নিজের ফেইসবুক পাতায় ছাত্র রাজনীতি নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরে একটি পোস্ট দেন, সেখানেও তিনি তার রাজনৈতিক পরিচয় তুলে ধরেন।
তার পরিচয় প্রকাশ তুমুল আলোচনা তৈরি করেছে।
সাদিক বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৬-১৭ সেশনের ছাত্র। তিনি মাস্টার্স পাস করেছেন, থাকতেন মাস্টারদা সূর্যসেন হলে।
উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনা শেষে সাদিক বলেন, “আমরা শুধু আলোচনা করেছি। এখানে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমাদের প্রস্তাব ছিল আমরা রাজনীতি বন্ধ চাই না, আমরা রাজনীতির সংস্কার চাই।
“আমরা মেধার ভিত্তিতে ছাত্র রাজনীতি চাই। ছাত্ররা দেশ গড়বে। বিশ্ববিদ্যালয় আরেকটু স্থিতিশীল হলেই দ্রুত ডাকসু নির্বাচন দেওয়ার বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।”
সাদিক কায়েমের রাজনৈতিক পরিচয়ের সত্যতা নিশ্চিত করে ইসলামি ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি মঞ্জুরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা উনি নিজেই পরিচয় দিয়েছেন। আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিংয়ে উনি ছাত্রশিবিরের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন।”
দ্বিতীয় দফায় আলোচনা হয় দুপুর ২টায়। এতে অংশ নেন ছাত্রদলের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সরকার সাহস ও সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন।
শিপন বলেন, “ছাত্রলীগের যে দীর্ঘদিনের রাজনীতির নামে হল দখল, ‘সন্ত্রাসী’ কর্মকাণ্ড ছিল, এগুলোই শিক্ষার্থীদের কাছে ছাত্র রাজনীতি মনে হয়েছে। আলোচনায় আমাদের দাবি ছিল ছাত্র রাজনীতিকে বন্ধ না করে ছাত্র রাজনীতির একটি যৌক্তিক সংস্কার করে শিক্ষার্থীবান্ধব একটি রাজনীতি ক্যাম্পাসে চালু থাকবে। এ ক্ষেত্রে একটি কমিশন গঠন করে ছাত্র রাজনীতির যৌক্তিক সংস্কারের ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।“
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে ছাত্র রাজনীতি বন্ধে কোনো আনুষ্ঠানিক বিজ্ঞপ্তি আসেনি মন্তব্য তুলে ধরে তিনি বলেন, “ছাত্র রাজনীতি বন্ধের ঘোষণা ইচ্ছাকৃতভাবে ছড়ানো এবং মিডিয়ার ভুল উপস্থাপনা।"
উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, “ছাত্র রাজনীতি থাকবে কি না সে বিষয়ে আমাদের একটি অফিসিয়াল বক্তব্য আমাদের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মামুন আহমেদের মাধ্যমে যাবে। আমাদের প্রধান চিন্তা এখন দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা। শ্রেণি কার্যক্রম চালু করা। এ জন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। তাই সবাইকে ডেকে আলোচনা করলাম।”
দ্বিতীয় পর্বের আলোচনায় অংশ নেন ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি ইয়াছিন আরাফাত ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক খায়রুল আহসান মারজান, বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রীর ঢাবি শাখার সভাপতি নূজিয়া হাসিন রাশা ও সাধারণ সম্পাদক সামি আব্দুল্লাহ, ছাত্র ফেডারেশনের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার আহ্বায়ক আরমানুল হক, ছাত্র ইউনিয়নের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহমেদ, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (মার্ক্সবাদী) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক ও সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের (বাসদ) বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সুহাইল আহমেদ শুভও।
প্রবল গণ আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সমর্থক ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সরকার পতনের আগে থেকেই ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত। তাদেরকে এই আলোচনায় আমন্ত্রণও জানানো হয়নি।