“ছুটির দিন অনুযায়ী আজকে বিক্রি একটু কম; সব ছুটি হয়ে গেছে তো, যারা ঢাকার বাইরে থাকে তারা মেবি চলে গেছে,” বলেন এক বিক্রয়কর্মী।
Published : 06 Apr 2024, 09:37 PM
রোজার শুরুর দিকের ছুটির দিনগুলোতে রাজধানীর বিপণিবিতানে যে ক্রেতা সমাগম ছিল- ধীরে ধীরে তা কমতে শুরু করেছে।
বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতাদের একটা বড় অংশ রোজার শুরুতেই তাদের কেনাকাটা শেষ করেছেন। যাদের কেনাকাটা এখনো শেষ হয়নি, তারাই আসছেন এখন। আর যারা ঢাকায় ঈদ করবেন, তাদেরও কেউ কেউ আসছেন।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি শুরু হয়েছে ইতোমধ্যেই। ফলে তখন থেকেই বাড়ি ফেরা শুরু হয়েছে। সে কারণে ক্রেতার চাপ কমেছে বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা।
শনিবার দুপুরে বসুন্ধরা শপিং মলে গিয়ে দেখা যায়, দলবেঁধে ক্রেতারা বিভিন্ন দোকানে দোকানে গিয়ে পোশাক পছন্দ করছেন; তবে রোজার প্রথম ছুটিতে যে স্রোতের মতো ভিড় ছিল তা চোখে পড়েনি।
জেন্টাল পার্কে নিজের জন্য পাঞ্জাবি পছন্দ করতে দেখা গেল আহসান যোবায়েরকে।
তিনি বলেন, “এতদিন কেনার সুযোগ পাইনি। ঈদ চলে আসতেছে, বাড়ি যেতে হবে- তাই তাড়াহুড়ো করে কিনতে এলাম।”
জেন্টাল পার্কের বিক্রয়কর্মী শাহরিয়ার আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ছুটির দিনে যে ভিড় তাদের এখানে ছিল তা এখন আর নেই।
“বিক্রি ভালো ছিল, সকাল থেকেই অনেকে আসছে ছিল৷ তবে আগের শুক্রবারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে৷ কেউ বাড়ি চলে গেছে, অনেকের কেনাকাটা আগেই শেষ; তাই আজকে একটু ভিড় কম৷”
মাইক্লোতে পাওয়া যাচ্ছে ছেলেদের প্যান্ট, শার্ট, পাঞ্জাবি আর মেয়েদের কামিজ ও টিউনিক।
দোকানটির বিক্রয়কর্মী বর্না আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ছুটির দিন অনুযায়ী আজকে বিক্রি একটু কম। সব ছুটি হয়ে গেছে তো, যারা ঢাকার বাইরে থাকে তারা মেবি চলে গেছে৷”
ইয়োলোর বিক্রয়কর্মী তামিম আহমেদ বলেন, “বিক্রি চলছে, তবে শুরুর দিকের ভিড়টা এখন আর নেই।
“আগে এর চেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে৷ এতদিনে হয়ত সবার কেনাকাটাও হয়েছে৷ যাদের হয়নি তারা আসতেছে৷”
কেনাকাটা শেষে বাড়ি ফিরছিলেন মৌসুমি আক্তার।
তিনি বলেন, “ছুটিতে ছুটিতে কেনাকাটাগুলো শেষ করতেছি। এতদিন বাচ্চা আর আত্মীয়দের কেনাকাটা শেষ করলাম, আজকে নিজেরটা কিনতে আসলাম।”
শিশুদের পোশাকের দোকান ‘দাদা স্টাইল’ একেবারেই ক্রেতাশূন্য দেখা গেল।
দোকানটির বিক্রয়কর্মী কামরুজ্জামান শাহেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বেবি প্রোডাক্ট আগে আগে বিক্রি হয়। এখন তো রোজা শেষের দিকে।
“যাদের প্রয়োজন, তারাই আসছেন। সন্ধ্যার পরে ইফতার করে অনেক কাস্টমার আসে। এখন একটু কম।”
বসুন্ধরাতেও ক্রেতা টানতে হাঁকডাক
বসুন্ধরা সিটির লেভেল-৩ এর সার্ক বাজার দোকানটির বিক্রেতাদেরও অলস সময় পার করতে দেখা গেল।
বিক্রয়কর্মী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের দোকানে পার্টি গাউনের সংগ্রহ বেশি।
“ঈদে এই প্রোডাক্টের চাহিদা কিছুটা কম। দেখেন না অন্যান্য দোকানে কাস্টমার আছে, আর আমরা বসে গল্প করতেছি।”
বসুন্ধরা শপিং কমপ্লেক্সের শাড়ির দোকানগুলোর বিক্রয়কর্মীদেরও দোকানের বাইরে থেকে ক্রেতাদের ডাকতে দেখা যায়। মোটামুটি ক্রেতাশূন্য ছিল শাড়ি, জুয়েলারির দোকানগুলো।
আধুনিকা শাড়িজের বিক্রয়কর্মী শরীফ আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, ঈদে শাড়ি খুব কম বিক্রি হচ্ছে।
“মুরুব্বি আর গিফটের জন্য শাড়ি নিচ্ছে মানুষ। কিন্তু ঈদে পরার জন্য শাড়ি কিনছে না বললেই চলে।”
রিচম্যানের ব্যবস্থাপক মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২৬ মার্চের ছুটিতে সবচেয়ে বেশি ক্রেতা সমাগম হয়েছিল।
“সকাল থেকে কেনাবেচা ভালোই হয়েছে৷ তবে সেদিন এক্সট্রা একটা ছুটি, সেটাকে মানুষ কাজে লাগিয়েছে। সে তুলনায় আজকে একটু কম হচ্ছে।”
কিউরিয়াসে বিক্রি হচ্ছে ওয়ান পিস, টুপিস, থ্রিপিস, পাঞ্জাবি, পাজামা, শার্ট, প্যান্ট, টি-শার্ট, পশ্চিমা পোশাক ও শিশুদের জামা।
দোকানটির ব্যবস্থাপক আহসানুর রহমান মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে লোকজন কম আসতেছে। যদিও ছুটির দিন হিসেবে তেমন বিক্রি নেই৷ তবে যেমন লোক আসছে সে তুলনায় ভালো বিক্রি হচ্ছে৷
“স্কুল ছুটি হয়ে গেছে, অনেকে বাড়ি চলে গেছে৷ শপিং যাদের বাকি আর যারা ঢাকাবাসী তারাই আসতেছে এখন৷ ঈদের ভিড় পেয়েছিলাম আমরা ২৬ মার্চে।”
অভিজাত এলাকাতেও মিলছে না ক্রেতা
এদিকে বনানীর নীহারিকা কনকর্ড টাওয়ারের বিক্রেতারাও বলছেন, ঈদের বিক্রি কমে এসেছে তাদের এখানেও।
ভিভার শোরুমে কিছু ক্রেতাকে পোশাক পছন্দ করতে দেখা গেল।
তাদের একজন তাসনুভা ইসলাম বলেন, “শেষ মুহূর্তের মতো একটু কেনাকাটা করতে আসলাম আজকে। বাড়ি যাওয়ার সময়ও হয়ে গেছে, এতদিন অন্য মার্কেটগুলো ঘুরে কিনেছি।”
দোকানটিতে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের ওয়ানপিস ও থ্রি পিস।
ভিভার বিক্রয়কর্মী সেতু আক্তার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেষের দিক তো তাই বিক্রির পরিমাণ এখন কম। সবাই আগেই কেনাকাটা করে ফেলেছে৷”
ফ্ল্যাগশিপ ওয়ান থ্রি এইটে গিয়ে দেখা গেল, ক্রেতা শূন্য দোকানে কর্মীরা নিজেদের মধ্যে গল্প করছেন। এখানে ছেলেদের শার্ট, প্যান্ট, পাঞ্জাবি ও মেয়েদের- থ্রিপিস, ওয়েস্টার্ন এবং ওয়ান পিস বিক্রি হচ্ছে।
ফ্ল্যাগশিপের ব্যবস্থাপক এনামুল হক রাকিব বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিক্রি এখন ডাউন৷ কাস্টমার সব গ্রামের দিকে চলে গেছে৷ ছুটির দিনগুলোতে ভালো চাপ ছিল, তখন ক্রেতা সামলানো আমাদের জন্য কঠিন ছিল৷ এখন খুব কম ক্রেতা আসছে৷”
ইউএই মৈত্রী শপিং কমপ্লেক্স, যেটি লাল মার্কেট বা দুবাই মার্কেট হিসেবেও পরিচিত- সেখানকার বিক্রেতারা বলছেন, রোজার শুরু থেকেই জমে উঠেনি তাদের বিক্রি।
মৌসাম’র ব্যবস্থাপক ইমরান শরীফ হিমু বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, কোভিড মহামারীর আগে এটি অভিজাতদের ভরসার মার্কেট হলেও এরপর থেকে তেমন ক্রেতা আর পাচ্ছেন না তারা।
“আগে ভালো বিক্রি হতো৷ কিন্তু গত বছর লস গেছে, এবার তো আরো লস যাবে৷ বাইরে থেকে মনে হবে এই মার্কেটে অনেক কাস্টমার৷ কিন্তু তারা এখানে গাড়ি পার্কিং করে পাশের বিল্ডিংয়ে চলে যায়, এখানে আসে না। এই মার্কেটটার অবস্থাই এমন৷ সন্ধ্যার পর মোটামুটি কাস্টমার আসলেও দিনে তেমন কেউই আসে না৷ কেন চলছে না বুঝতেছি না৷”
ডিএনসিসি বনানী সুপার মার্কেটে মোটামুটি ক্রেতা দেখা গেলেও এখানকার বিক্রেতারা বলছেন, এবার ঈদে বিক্রি জমে ওঠেনি তাদেরও।
সারা ফ্যাশনে বিক্রি হচ্ছে মেয়েদের শার্ট ও ওয়ানপিস।
বিক্রেতা জয়নুল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এখন যেমন দেখতেছেন, সারা রোজায় তেমনই চলছে। ঈদের বিক্রি নাই।”
ওয়েস্টার্ন আর্থ’র বিক্রয়কর্মী রুবেল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মোটামুটি বিক্রি হচ্ছে৷ পুরা সিজনটাই খারাপ গেল৷ এই মুহূর্তে ভালো হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু খারাপই আছে।”
নিকেতনের বাসিন্দা রাবেয়া ইসলাম বনানী সুপার মার্কেটে তার ভাইয়ের মেয়ের জন্য পোশাক কিনতে এসেছেন।
তিনি বলেন, “আমাদের কেনাকাটা মোটামুটি শেষ। এখন ভাইয়ের মেয়ের জন্য ড্রেস কিনতে আসলাম। আর আমার কিছু কসমেটিকসও কিনব।”