‘জরিমানা’ দিয়ে হলেও এসব গাড়ি ছাড়ের অনুমোদন পেতে গাড়ি আমদানিকারকরা রাজি আছেন বলে বাংলাদেশ ব্যাংককে জানিয়েছে বারভিডা।
Published : 12 Dec 2022, 11:57 PM
বিলাসি পণ্য আমদানিতে কড়াকড়ির অংশ হিসেবে এলসিতে শতভাগ মার্জিন সংরক্ষণের বিধিনিষেধের মধ্যে বন্দরে এসেছে জাহাজভর্তি গাড়ির চালান; যেগুলো আনতে বাংলাদেশের ব্যাংকে কোনো ঋণপত্রই খোলা হয়নি।
নিয়ম ভেঙে আমদানি হওয়া এসব গাড়ি এখন ‘জরিমানা দিয়ে’ হলেও খালাসে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিশেষ সুযোগ চেয়েছে রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানিকারকদের সংগঠন বারভিডা।
সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের বৈঠকে এলসি (ঋণপত্র) ছাড়াই শতাধিক গাড়ির এমন এক চালান খুলনার মোংলা বন্দরে ভেড়ার কথা জানান এ সংগঠনের সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন।
ডলার সংকটের মধ্যে আমদানির ক্ষেত্রে এলসি খোলার প্রচলিত নিয়ম ভেঙে আনা এসব গাড়ি ছাড় করতে বৈঠকে ডলারের যোগান দিয়ে ব্যাংকগুলো যাতে দ্রুত এলসি খোলে সেজন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা চান তিনি।
নামমাত্র ‘জরিমানা’ দিয়ে হলেও এসব গাড়ি ছাড়ের অনুমোদন পেতেও গাড়ি আমদানিকারকরা রাজি আছেন বলে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের জানান বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি ডন, যিনি ও এফবিসিসিআইয়ের সহসভাপতিও।
সোমবার ঢাকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে এ বৈঠকে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন।
বারভিডা সভাপতি বলেন, ‘‘যে গাড়িগুলো এসেছে তা আমদানিকারকরা আগেই কিনে রেখেছিলেন। রপ্তানিকারকরা জানতেন এগুলোর এলসি চলে আসবে।
‘‘তাই রপ্তানিকারকরা শিপমেন্ট করে গাড়িগুলো পাঠিয়ে দিয়েছেন। এখানে আমদানি নীতিমালা লঙ্ঘন হয়েছে, কিন্তু আমরা নিষিদ্ধ কোনো পণ্য আমদানি করিনি।’’
গাড়িগুলো নামার পরও কিছু এলসি খোলা হয়েছে দাবি করে ডন বলেন, ‘‘ব্যাংকগুলো ডলার সংকটে এলসি খুলতে দেরি করেছে। ব্যাংকগুলো এলসি দিতে দেরি করায় গাড়িগুলো আগেই চলে এসেছে। আমি গভর্নরকে অনুরোধ করে জানতে চেয়েছি, কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ব্যাংকগুলো ডলার দিতে পারবে।’’
জানুয়ারি নাগাদ ডলার সংকট কেটে সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
একটি ‘টোকেন ফি’তে জরিমানা আদায় করতে পারে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানিয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এনবিআরের সঙ্গে কথা হয়েছে।
‘‘যে গাড়িগুলো নেমে গিয়েছে তাতে এনবিআর জরিমানা করবে আমদানি আইন অনুযায়ী। আর বাকি গাড়ির বিষয়ে এলসি খোলা শুরু হয়েছে, সেগুলো তো আর এলসির বাহিরে থাকছে না।’’
ব্যাংকগুলো যেন ডলার সংগ্রহ করে এলসি খোলে, এজন্য ব্যবস্থা নিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করার কথা জানান তিনি।
দেশে ডলার সংকট দেখা দিলে মুদ্রা ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় অধিকতর সুসংহত রাখার কথা জানিয়ে ‘‘মোটরকার (সেডানকার, এসইউভি,এমপিভি ইত্যাদি) অ্যালকোহল জাতীয় পানীয়, তামাক, তামাকজাত বা এর বিকল্প পণ্যসহ বিলাসজাতীয় পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের ক্ষেত্রে ১০০ শতাংশ নগদ মার্জিন সংরক্ষণ করার’ নির্দেশনা দিয়ে রেখেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
এছাড়াও পণ্যের আমদানি ঋণপত্র স্থাপনের বিপরীতে প্রয়োজনীয় মার্জিন গ্রাহকের নিজস্ব উৎস হতে গ্রহণ করতে হবে। অর্থাৎ এসব পণ্য আমদানিতে ব্যাংক কোনো প্রকার অর্থায়ন করতে পারবে না এমন নিষেধাজ্ঞাও দেওয়া রয়েছে।
গাড়ি জাতীয় পণ্য নগদ অর্থে এলসি খোলার বাধ্যবাধকতা আরোপের শর্ত পালন করে আমদানি করতে চাইলেও ব্যাংকগুলো গত দুই মাস ধরে প্রয়োজনীয় ডলারের যোগান দিতে পারছে না বলে দাবি করেন বারভিডা সভাপতি।
আমদানি নীতি অনুযায়ী, এলসি ছাড়া কোনো পণ্য আমদানি করা সম্ভব নয়। সেক্ষেত্রে এলসির আগে কোনো পণ্য বন্দরে আসলে তা ছাড় করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন হয়। অনুমতি মিললে জরিমানা দিয়ে পণ্য ছাড়ের সুযোগ রয়েছে।
এছাড়াও পণ্য আসার পর এলসি খোলা হলেও আমদানি নীতি লঙ্ঘন করায় জরিমানা করতে পারে কাস্টমস কৃর্তপক্ষ। এর কোনোটিই না হলে আমদানি করা পণ্য ফেরত যাবে রপ্তানিকারকের ঠিকানায়।
গাড়ি আমদানির এমন ঘটনার বিষয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাহ উদ্দিন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, এ বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।