‘প্রাইস গান’ মিললে পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র বন্ধ: ভোক্তা অধিদপ্তর

“আমাদেরকে জিজ্ঞেস করে, ভাই এক নম্বরটা নিবেন, নাকি দুই নম্বরটা নিবেন? দুই নম্বর বিক্রি করার সুযোগই তো নাই এখানে,” বলেন মহাপরিচালক সফিকুজ্জামান।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 March 2023, 01:16 PM
Updated : 30 March 2023, 01:16 PM

ঈদ বাজারে কোনো পোশাক বিক্রয়কেন্দ্রে যদি দামের লেবেল মুদ্রণকারী যন্ত্র বা প্রাইস গান পাওয়া যায়, তাহলে ওই বিক্রয়কেন্দ্র ১০ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়ার হুঁশিয়ার দিয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। 

সংস্থার পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেছেন, “দেখা গেছে যে একই শার্টের মাঝে ২-৩টা স্টিকার। ভোক্তা হিসেবে এটা মারাত্মক প্রতারণা। তাই এবার আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার আউটলেটে ‘প্রাইস গান’ পাওয়া গেলে সেই আউটলেট বন্ধ থাকবে ১০ দিনের জন্য।” 

বৃহস্পতিবার জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ে তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি এ হুঁশিয়ার উচ্চারণ করেন।

কাপড়ের দাম কারখানা থেকেই নির্ধারণ হয়ে আসবে মন্তব্য করে শাহরিয়ার বলেন, “ঈদের আগে আপনাদের আউটলেট যদি একদিনও বন্ধ থাকে, তাহলে চিন্তা করেন যে সেটা আপনার ব্যবসার জন্য কত ক্ষতিকর। সবচেয়ে বড় ক্ষতি হবে আপনার ব্র্যান্ড ইমেজের।”

ভোক্তা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, “কেউ চাইলেই নিজের মন মত দাম বাড়াতে পারে না এবং বাংলাদেশি কাপড়ের ব্র্যান্ডগুলো এখন বিশ্ব বাজারে ছড়িয়ে পড়ার সময় হয়েছে।  

“বিভিন্ন ব্র্যান্ডের কাপড়ের গুণগত মান যেন ভালো থাকে এবং বিদেশি যারা আসে, তারা যেন কাপড়ের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে। কাপড়ের প্রাইস ট্যাগ যেন ফ্যাক্টরিতে লাগানো হয়, শোরুম পর্যায়ে যেন প্রাইস ট্যাগ লাগানো না হয়। এর ব্যত্যয় হলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।“

শাহরিয়ার বলেন, “একটা কথা আছে যে- স্টাইল ব্যক্তিক, ফ্যাশন সার্বজনীন। মানুষ যখন ফ্যাশনেবল হতে চায়, তখন ব্র্যান্ডের একটা গুরুত্ব আছে। তাই আমরা চাইব না- আমার দেশের একটা ব্র্যান্ড ধসে যাক।”

অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ এইচ এম সফিকুজ্জামান অনুষ্ঠানে বলেন, “পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে কোনো এথিকস কাজ করে না। এখানে বার্গেনিংয়ের মাত্রা এত বেশি যে একজন ভোক্তা কত টাকা বলবে, সেটাই একটা লজ্জার বিষয় হয়ে যায়। ভোক্তা ভাবে- একটা পোশাকের দাম ৫০০০ টাকা চাচ্ছে, এখন সে ১৫০০ টাকা কীভাবে বলবে?”

ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদেরকে ‘মানসিক চাপের’ মাঝে রাখে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “এরা একটা সাইকোলজিক্যাল চাপ সৃষ্টি করে। কেউ দাম জিজ্ঞেস করল, দোকানদার বলল ৫০০০ টাকা। 

“তারপর ক্রেতাকে একটা দাম বলতেই হবে। দাম বলা ছাড়া সে ওখান থেকে যেতে পারবে না। এটা কী ধরনের কথা? কেন দাম বলতে বাধ্য করা হবে?”

বিভিন্ন পোশাক ব্র্যান্ডের ‘নৈতিকতার’ নিতে প্রশ্ন তুলে সফিকুজ্জামান বলেন, “ব্র্যান্ডের ধস নামতে কতক্ষণ লাগে? আমাদের কাছে তথ্য আছে যে- ফিক্সড প্রাইসের দোকানে ‘স্টিকার’ হয়ে যায়। 

“সকালে যেটার দাম ১২০০ টাকা, বিকাল বেলা তা ১৬০০ টাকা, রাতে হয়ে গেল ২৪০০ টাকা। এত বিক্রি হচ্ছে যে স্টিকার চেঞ্জেরও সময় নাই।”

ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, “আমরা বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। আমাদের পোশাক ইউরোপ-আমেরিকার মার্কেটগুলোতে যায়। 

“অথচ আমরা যখন এখানে মার্কেটে যাই, আমাদেরকে প্রথমেই জিজ্ঞেস করে, ভাই এক নম্বরটা নিবেন, নাকি দুই নম্বরটা নিবেন? দুই নম্বর বিক্রি করার সুযোগই তো নাই এখানে।”

ঈদ ঘিরে আরেক ধরনের তৎপরতা দেখার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, “পাকিস্তান বা পাশের দেশ থেকে মহিলারা লাগেজে করে কাপড় নিয়ে আসেন এবং একটা হোটেল ভাড়া নেন। তারপর সেগুলো ভেতরে ভেতরে টার্গেটেড কাস্টমারের কাছে বিক্রি করেন। এখানে তারা মোবাইলে মোবাইলে যোগাযোগ করেন।”

এ ধরনের কার্যক্রম দেশীয় ফ্যাশন হাউজকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে মন্তব্য করে সফিকুজ্জামান বলেন, “এ ধরনের তথ্য অধিদপ্তরের কাছে দেওয়া হলে অধিদপ্তর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এছাড়া ঈদ কেনাকাটায় শপিংমলগুলোতে অনিয়ম পেলে মার্কেট কমিটিকে দায়ী করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

আমদানি করা পোশাকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বিদেশি পোশাক ও কসমেটিকসের ক্ষেত্রে আমদানিকারকের নাম ও সিল থাকতে হবে এবং এমআরপি আমদানিকারক কর্তৃক প্রদেয় হতে হবে। নয়ত অভিযান পরিচালনা করে উপরে উল্লিখিত কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ভোক্তা অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা ছাড়াও ডিজিএফআই, এনএসআই, বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। আর ব্যবসায়ীদের তরফে আড়ং, আর্টিসান, অঞ্জন’স, টপ টেন, লুবনান, নগরদোলা, রং বাংলাদেশসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের প্রতিনিধি ও খাত সংশ্লিষ্টরা সভায় আলোচনায় অংশ নেন।