“কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে”, বলেন কৃষিমন্ত্রী
Published : 30 Oct 2023, 04:08 PM
আলুর বাজার দর নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে আমদানিতেই সমাধান দেখা সরকার চাইছে আমদানির প্রক্রিয়া হোক দ্রুত। এ কারণে আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়ার দিনই অনুমোদনপত্র দেওয়া শুরু করার কথা জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক।
কেজিপ্রতি সর্বোচ্চ খুচরা দর ৩৬ টাকা বেঁধে দেওয়ার দেড় মাস পর প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেলে সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আমদানিতেই সমাধান দেখে। পরে কৃষি মন্ত্রণালয় তাদের অনুরোধে সায় দেয়।
এই সিদ্ধান্ত হওয়ার পর কৃষিমন্ত্রী সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আন্তর্জাতিক বাজারে আলুর দাম কম। তবুও তারা আলু আনতে চাচ্ছে, আমরা সম্মতি দিয়েছি। আজকে থেকেই আইপিও (আমদানি নীতি আদেশ) ইস্যু করা শুরু হবে।”
যেভাবে দাম বেড়েছে, তার কোনো যুক্তি দেখেন না বলেও জানিয়ে তিনি বলেন, “এভাবে দাম বেড়ে যাওয়া কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য না। এতে নিম্ন আয়ের মানুষের অনেক কষ্ট হচ্ছে। গত দুদিনে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।
“গত বছরও আমরা আলু রপ্তানির চেষ্টা করেছি, কিছু রপ্তানি হয়েছে। এ বছরও রপ্তানি হয়েছে। কিন্তু যতটুকু রপ্তানি হয়েছে, তাতে দাম এত অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ার কথা না।”
আমদানির অনুমতি দেওয়ার বিষয়ে রাজ্জাক বলেন, “আজ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে অনুরোধ করা হয়েছে, এই পরিস্থিতি আলু আমদানি করতে চায় তারা। আমরাও সার্বিক দিক বিবেচনা করে দেখেছি, এত দাম দিয়ে মানুষ আলু কিনতে পারছে না।”
আমদানি হলে দাম কমে আসবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এতে মানুষ কিছুটা স্বস্তি পাবে।”
চলতি বছর আলু উঠার পর ঢাকায় ১৩ টাকা কেজি দরেও আলু পাওয়া যায়। গত রোজার পর থেকেই চড়তে থাকে দাম। কেজিপ্রতি ৪০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর ১৪ সেপ্টেম্বর সরকার এর সর্বোচ্চ খুরচা মূল্য ৩৬ টাকা নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এই দরে হিমাগার থেকেই আলু ছাড়তে রাজি ছিলেন না ব্যবসায়ীরা।
পরে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর দেশের বিভিন্ন হিমাগারে অভিযানে যায়, কিন্তু সুফল মেলেনি। এক পর্যায়ে দাম ৬০ টাকা ছাড়িয়ে যায়।
গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির ‘মহাসমাবেশ’কে কেন্দ্র করে হাঙ্গামার পর দলটি হরতাল ডাকলে ঢাকায় কোথাও কোথাও ৭০ টাকা কেজিতেও আলু বিক্রির তথ্য পাওয়া যায়।
হরতাল শেষে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো মঙ্গলবার থেকে ৭২ ঘণ্টার অবরোধের ডাক দেয়। কর্মসূচি শুরুর আগের দিনই বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আলু আমদানিরও অনুমতি দেওয়ার কথাও জানানো হয়।
এর আগে পেঁয়াজ আমদানির পর দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আসে।
কয়েক মাস আগে পেঁয়াজের দাম চট করে বেড়ে কেজিপ্রতি একশ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়ার পর কৃষি মন্ত্রণালয় রান্নার উপকরণটি আমদানির অনুরোধে সায় দেয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসতে থাকলে দাম অনেকটা কমেও যায়। কিন্তু পরে ভারত শুল্ক বাড়িয়ে দেওয়ার পর এখন আলু ও পেঁয়াজ সমানতালে দৌড়াচ্ছে।
তবে অনুমোদন দেওয়ার পর প্রায় দেড় মাস পেরিয়ে গেলেও আসেনি কোনো ডিম। গত ১৭ সেপ্টেম্বর থেকে কয়েক ধাপে ১৫টি প্রতিষ্ঠানকে ১৫ কোটি ডিম আমদানির অনুমতি দেওয়া হলেও দেশে আসেনি কোনো ডিম।
‘দাম বাড়িয়েছে হিমাগার মালিকদের সিন্ডিকেট’
আলুর দাম বৃদ্ধি নিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “আমরা বলি আলু উদ্বৃত্ত থাকে। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত জাত প্রবর্তনের কারণে উৎপাদন বেড়েছে। আবহাওয়াও আলু উৎপাদনের অনুকূল। কোল্ড স্টোরেজেও আলু আছে। তাহলে দাম এত বাড়বে কেন?
“আমরা যে দাম স্থির করে দিয়েছিলাম, তাতেও তাদের লাভ হওয়ার কথা। কিন্তু সেই দামের ধারে কাছেও তারা থাকছে না। কোল্ডস্টোরেজ মালিকরা একটি সিন্ডিকেট করে দাম বাড়াচ্ছে।”
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নানা চেষ্টার কথা তুলে ধরে কৃষিমন্ত্রী বলেন, “পরিস্থিতি এমন যে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা আলু বের করেন না, তারা আলু লুকিয়ে রাখেন।”
গত বছর আলুর দাম অনেক কম থাকায় চাষি ও হিমাগার মালিকদের লোকসান হয়েছে জানিয়ে আবদুর রাজ্জাক বলেন, “এবার কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা তাদের সেই লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ হিসেবে দেখছেন। তারা সর্বাত্মক আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে দাম বাড়িয়ে যাচ্ছেন।”