পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশিই নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
Published : 30 Oct 2023, 06:36 PM
গার্মেন্ট কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি কত নির্ধারণ করা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি জানিয়ে শ্রমিকদের আশ্বস্ত করেছেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী মন্নুজান সুফিয়ান।
তিনি বলেছেন, “গুজবে কান দেবেন না। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকার বেশি নির্ধারণ করা হবে।”
গত কয়েক দিন ধরে গাজীপুরের বেশ কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন শ্রম প্রতিমন্ত্রী।
এদিন গাজীপুরে বিক্ষোভের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছেন একজন শ্রমিক। ঢাকার সাভার ও আশুলিয়াতেও পোশাক শ্রমিকদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। তাতে শ্রমিক ও পুলিশসহ অন্তত ৩০ জনের আহত হওয়ার খবর মিলেছে।
গার্মেন্ট শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণের ‘গুজব’ ছড়ানোয় শ্রমিকরা আন্দোলন করছে জানিয়ে তিনি বলেন, এ আন্দোলনের পেছনে বিএনপি-জামায়াতের রাজনৈতিক সুরসুরি আছে।
ন্যূনতম মজুরি কত হওয়া উচিত, সেই প্রশ্নে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, “আপনি যে প্রশ্ন করলেন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া কি সম্ভব? আমি যেখানে বসে আছি এখান থেকে আমি এর উত্তর দিতে পারব না। ন্যূনতম মজুরি বোর্ড এটা নির্ধারণ করবে।
শ্রম প্রতিমন্ত্রী জানান, শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ করতে বোর্ড গঠন করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ৫ বছরের জন্য নতুন মজুরি নির্ধারণ করা হয়। আগামী ৩০ নভেম্বর এর মেয়াদ শেষ হবে।
মালিক ও শ্রমিক পক্ষকে নিয়ে মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান সভা করেছেন জানিয়ে মন্নুজান সুফিয়ান বলেন, মালিক পক্ষ ও শ্রমিক পক্ষ উভয়েই ন্যূনতম মজুরি প্রস্তাব করেছেন।
“মালিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। আর শ্রমিকপক্ষ প্রস্তাব দিয়েছে ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। শ্রমিকদের মধ্যে কে বা কারা বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে যে মজুরি ১০ হাজার ৪০০ টাকা নির্ধারণ হয়ে গেছে। তারা এই বিভ্রান্তিতে ভুগছেন।
“মজুরি নির্ধারণের জন্য এখনও এক মাস বাকি আছে। ১ নভেম্বর মজুরি বোর্ডের সভা আছে। কারও কথায় বিভ্রান্ত না হয়ে কাজে ফিরে ফ্যাক্টরির নিরাপত্তা বিধান করবেন- আমি শ্রমকিদের প্রতি এই আহ্বান জানাই। কারও ফাঁদে যেন তারা পা না দেন।”
পোশাক কারখানার মালিক পক্ষ ন্যূনতম মজুরির যে প্রস্তাব রেখেছে, তার চাইতে ‘অবশ্যই’ বেশি মজুর ঠিক করা হবে উল্লেখ করে শ্রম প্রতিমন্ত্রী বলেন, মজুরি বোর্ড বসে আলাপ-আলোচনা করে এটা নির্ধারণ করবে।
সংবাদ সম্মেলনে গার্মেন্টস শ্রমিক সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, গাজীপুরসহ কয়েক জায়গায় গত কয়েক দিন ধরে অসন্তোষ সৃষ্টি হয়েছে, এর ব্যাপ্তি বাড়ছে। যারা বিভ্রান্তি ছড়ালেন, কী উদ্দেশ্যে ছড়ালেন?
“মজুরি বোর্ড চারটি সভা করছে, এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি। অনেকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। শ্রমিকদের খেপিয়ে তোলার জন্য মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তিন দিন আগে একটি বিবৃতি দিলেন শ্রমিকদের ২১ হাজার টাকা মজুরি দিতে হবে।”
১৯৮৪ সালে প্রথমবারের মতো পোশাক শ্রমিকদের জন্য ন্যূনতম মজুরি ঠিক করা হয় জানিয়ে শাহাজান খান বলেন, ১৯৯৪ সালে বিএনপি ক্ষমতায় থাকার সময় মজুরি ৫৭০ থেকে ৯৩০ টাকা করা হয়। ২০০৬ সালে বিএনপির আমলে মজুরি ১ হাজার ৬৬২ টাকা করা হয়।
“শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে ২০১০ সালে ন্যূনতম মজুরি ৩ হাজার টাকা করে দেন। ২০১৩ সালে করেন ৫ হাজার ৩০০ টাকা, ২০১৮ সালে এসে ৮ হাজার টাকা করে দেন শেখ হাসিনা। বিএনপি রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য এই কাজটি করেছে, বিভ্রান্তি ও অসন্তোষ সৃষ্টি করার জন্য ফখরুল ইসলাম এই বিবৃতি দিয়েছেন।”
প্রধানমন্ত্রী একটি গ্রহণযোগ্য মজুরির ব্যবস্থা করবেন মন্তব্য করে এই সংসদ সদস্য বলেন, “এখনও মজুরি নির্ধারণ হয়নি, এখনও হাতে অনেক সময় আছে। বিভ্রান্ত হওয়ার কোনো কারণ নেই, প্রধানমন্ত্রীর ওপর আস্থা রাখেন।”
শাজাহান খান বলেন, “মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকপক্ষ দুটি প্রস্তাব দেবে। তারপর দুই পক্ষ বার্গেইনিং করবে। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডের চেয়ারম্যান একটি জায়গায় সুপারিশ করবে। এরপর মন্ত্রণালয়ে আসে, সেখানে প্রধানমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করেন, উনি বাড়িয়ে দেন। এই পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে।”
গাজীপুরে শ্রমিক বিক্ষোভ, গুলিতে একজনের মৃত্যু