‍সুযোগ থাকতে দেশে গাড়ি উৎপাদনে এগিয়ে আসুন: এনবিআর চেয়ারম্যান

গাড়ি শিল্পসহ বেশ কিছু শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ২০৩০ সাল পর্যন্ত শর্ত সাপেক্ষে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত উৎপাদন সুবিধা দিয়ে রেখেছে সরকার।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Feb 2023, 04:09 PM
Updated : 28 Feb 2023, 04:09 PM

স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দেশে গাড়ি নির্মাণ শিল্প স্থাপনে `অন্তত দুই চারজন’ ব্যবসায়ীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মু. রহমাতুল মুনিম।

মঙ্গলবার গাড়ি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বারবিডার সঙ্গে ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় তার এই আহ্বান আসে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে চলে গেলে বিশাল চ্যালেঞ্জে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে দেশের অর্থনীতি যে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে, তার চেয়েও সেটা কঠিন হতে পারে।

“আমদানি কমিয়ে রপ্তানি বাড়িয়ে সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। তাই এলডিসি থেকে বের হওয়ার পরের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আমরা ইতিমধ্যেই মেইড ইন বাংলাদেশ ব্র্যান্ড শক্তিশালী করার জন্য নানা রকম সুযোগ সুবিধা দিয়েছি।”

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২১ সালে ১০ বছরের জন্য, অর্থাৎ ২০৩০ সাল পর্যন্ত গাড়ি শিল্পসহ বেশ কিছু শিল্পায়নের ক্ষেত্রে শর্ত সাপেক্ষে সম্পূর্ণ শুল্কমুক্ত উৎপাদন সুবিধা ঘোষণা করে।

সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে বারবিডার প্রেসিডেন্ট হাবিবুল্লাহ ডনের নেতৃত্বে বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধি দলেকে উদ্দেশ করে মুনিম বলেন, “আপনারা শুধু বিদেশ থেকে পুরনো ও রিকন্ডিশন্ড গাড়ি আমদানির জন্য শুল্ক সুবিধা চাচ্ছেন। আমরা কি শুধু বিদেশ থেকে গাড়ি আমদানি করতে থাকব?

“আমরা যদি অ্যাসেম্বলিং শিল্প নিয়ে বসে থাকি, তাহলে আমরা গ্র্যাজুয়েশন (উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত) কীভাবে করব?”

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “দেশে টেলিভিশন আনতে আনতে দেশে তৈরি শুরু হয়েছে, সিনথেটিক আনতে আনতে দেশে উৎপাদন হচ্ছে। আপনারা গাড়ি আনতে আনতে উৎপাদন শুরু করবেন কবে?”

গাড়ি আমদানিকারকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “অন্তত দুই চারজন ব্যবসায়ী এগিয়ে আসেন, দেশে গাড়ি বানান, আমরা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব।”

এই সুবিধা পাওয়ার সময় যে কমে আসছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে মুনিম বলেন, “এটা সর্বোচ্চ ২০৩০ সাল পর্যযন্ত দেওয়া যেতে পারে। এই সুযোগ নিয়ে দেশে গাড়ি নির্মাণে এগিয়ে আসতে আমি আপনাদের আহ্বান জানাচ্ছি।“

তিনি জানান, স্থানীয় শিল্পের জন্য ঘোষিত এই সুবিধার কারণে ওয়ার্ল্ড কাস্টম অর্গানাইজেশন ‘নানা রকম চাপ’ দেওয়ার চেষ্টা করছে। তাই সময় থাকতে ব্যবসায়ীদের উচিত সেই সুযোগ নেওয়া।

রাজধানীর আগারগাঁয়ে এনবিআর ভবন সম্মেলন কক্ষে এই সভায় বারবিডার প্রেসিডেন্ট মো. হাবিব উল্লাহ ডন রিকন্ডিশনড গাড়ি আমদানিতে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত অবচয় সুবিধা দেওয়ার অনুরোধ জানান।

বারবিডার প্রস্তাব- এক থেকে দুই বছর পর্যন্ত ব্যবহৃত গাড়ির ক্ষেত্রে ১০ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ; দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত ২০ শতাংশের পরিবর্তে ২৫ শতাংশ; তিন থেকে চার বছর পর্যন্ত ৩০ শতাংশের পরিবর্তে ৩৫ শতাংশ; চার থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ৩৫ শতাংশের পরিবর্তে ৪৫ শতাংশ এবং পঞ্চম বছর ৫০ শতাংশ অবচয় সুবিধা দেওয়া হোক।

হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, বর্তমানে ১৮০১ সিসি সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি পর্যন্ত গাড়ি আমদানিতে ২০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক রয়েছে। হাইব্রিড গাড়ি আমদানি উৎসাহিত করতে এটা ২০০০ সিসি সিলিন্ডার ক্যাপাসিটি পর্যন্ত করা উচিত।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) প্রতিনিধিরাও এদিন এই প্রাক বাজেট আলোচনায় অংশ নেয়। সংগঠনের সহসভাপতি সোহেল রানা আগামী বাজেটে নতুন ফ্ল্যাট কেনার ক্ষেত্রে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানান।

তিনি বলেন, “আবাসন খাতের চলমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় ৫-১০ বছরের জন্য গৃহায়ন খাতে অপ্রদর্শিত অর্থ ফ্ল্যাট, প্লট, বাণিজ্যিক ভবন, বিপনী বিতানে বিনিয়োগের জন্য বিনা প্রশ্নে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়যোগের সুবিধা বহাল রাখা প্রয়োজন।”

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আপনার প্রতিবছর এই দাবি করে আসছেন। অপ্রদর্শিত অর্থ দিয়ে বাড়ি কেনার জন্য এই সুযোগ দিতে হবে কেন? আপনাদেরও প্রতিবছর একই দাবি করা যাবে না।”