ফেইসবুকে লোভনীয় বিনিয়োগের ‘ফাঁদ’

সামাজিক যোগাযোগের এ মাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে ভালো মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে বিনিয়োগ চাওয়া হচ্ছে, যার আইনি বৈধতা নেই।

ওয়াসেক বিল্লাহবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Feb 2023, 07:27 PM
Updated : 25 Feb 2023, 07:27 PM

‘নূর’স কিচেন’ নামে একটি ফেইসবুক পাতায় কদিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি বিনিয়োগের প্রস্তাব। বলা হচ্ছে, তারা ঢাকার একটি বড় সরকারি হাসপাতালে খাবার সরবরাহের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর তার বিপরীতে প্রতি মাসে দেওয়া হবে মুনাফা।

সেই পোস্ট দেখে যে কেউ আকৃষ্ট হতে পারেন। সেখানে উত্তরায় করপোরেট অফিসের ঠিকানা, ফোন নম্বর সবই দেওয়া আছে।

কিন্তু বাস্তবতা হল, সেই ঠিকানায় আসলে ‘নূর’স কিচেনের কথিত সেই করপোরেট অফিস নেই।

বিনিয়োগের বিপরীতে নূর’স কিচেন কত টাকা দেবে, সেটি পোস্টে নেই। তবে সেখানে থাকা নম্বরে যোগাযোগ করলে জানানো হয়, মাসে প্রতি একশ টাকায় ৬ থেকে ৭ টাকা হারে মুনাফা মিলবে।

ফেইসবুকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে ‘গ্রিন ওভেন’ নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের এমন ‘লোভনীয় অফার’, যাতে প্রতি মাসে সঞ্চয়পত্রের চেয়ে দ্বিগুণ হারে মুনাফা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে।

ফেইসবুক পেইজে এরকম পোস্ট দেখে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা তার একজন সহকর্মীকে ‘নূর’স কিচেনের কথিত সেই করপোরেট অফিসে পাঠান। কিন্তু সেই পুলিশ কর্মকর্তা গিয়ে কিছু খুঁজে পাননি।

সেই পোস্টে দেওয়া ফোন নম্বরে কল করার পর যেসব তথ্য তাকে দেওয়া হয়েছে, সেগুলো যাচাই করে কোনো সত্যতা মেলেনি।

‘নূরস কিচেনের’ প্রলোভন ও ভুয়া ঠিকানা

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ‘নূর’স কিচেন’ এর ফেইসবুক পেইজে আসে বিনিয়োগের প্রস্তাবটি। সেখানে লেখা হয়, “ঢাকার প্রথম সারির একটি সরকারি হাসপাতালে খাবার সরবরাহের প্রজেক্টের টেন্ডারে ‘নূর’স কিচেন’ জয়ী হয়ে খাবার সরবরাহের জন্য বিবেচিত হয়েছে। এর জন্য আমাদের প্রয়োজন প্রচুর বিনিয়োগ।

বিস্তারিত তথ্যের জন্য মোবাইল ফোন বা হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরও দেওয়া হয়। সেই সঙ্গে দেওয়া হয় কথিত ‘করপোরেট অফিসের’ ঠিকানা। সেটা ‘উত্তরা ৩ নম্বর সেক্টরের ১, জসিমউদ্দিন অ্যাভিনিউয়ের লেভেল ফোরে।’

এ ‘বিনিয়োগ প্রস্তাব’ পোস্ট করার পরদিন সেই ‘ঠিকানায়’ গিয়ে কথিত ‘করপোরেট’ অফিসের সন্ধান মেলেনি। সেখানে অন্য এক প্রতিষ্ঠান আছে। সেখানকার অভ্যর্থনায় থাকা এক কর্মী উপরের ফ্লোরে খোঁজ নেওয়ার পরামর্শ দেন।

পরে লেভেল ফাইভে গিয়ে ‘ওয়ার্ক স্টেশন’ নামে একটি অফিস খুঁজে পাওয়া যায়। সেখানকার এক কর্মীর কাছে ‘নূর’স কিচেন’ এর কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ নামে কোনো অফিস এখানে আছে কি না, তা তিনি জানেন না।

এরপর সেই পোস্টে থাকা নম্বরে কল করা হলে নারীকণ্ঠে একজন কিছুটা ‘কর্কশ কণ্ঠে’ জানতে চান, ফোন করার কারণ কী?

‘করপোরেট অফিস’ যে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না, সে কথা জানানোর পর তিনি বলেন, “আমি তো এখন সেখানে নাই।”

অন্য কেউ কথা বলতে পারবে কি না, সেই প্রশ্নে বক্তব্য পাল্টে যায় তার। বলেন, “আসলে সেখানে অফিস ছিল কিছুদিন। এখন উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টরে।”

“১২ নম্বরেই আসব, অফিসের ঠিকানা দেন”- এ কথা বলার পর সেই নারী দেবেন বলে আর দেননি। 

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যা পেয়েছে

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার কাছে তার অধস্তন কর্মকর্তার দেওয়া রিপোর্টটি দেখেছে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সেখানে লেখা হয়েছে, “উক্ত ঠিকানায় উত্তরায় জসীমউদ্দীন রোডে উত্তরা টাওয়ারে লেভেল ফোরে এই নামের (নূর’স কিচেন) কোনো প্রতিষ্ঠানের অফিস উক্ত ভবনে ছিল না। পরবর্তীতে একই ভবনে লেভেল ফাইভে এ গেলে ‘ওয়ার্ক স্টেশন’ নামে একটি অফিস খুঁজে পেলে উক্ত অফিসে কথা বলে নূর’স কিচেন সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা তাৎক্ষণিক কিছু বলতে চাননি। পরবর্তীতে ভিন্ন কৌশলে জানতে চাইলে তারা স্বীকার করেন। একই ভবনের লেভেল ফোরে তাদের অবস্থান ছিল স্বল্প সময়ের জন্য।”

‘ওয়ার্ক স্টেশন’ এর সেই কর্মীর কাছে ‘নূর’স কিচেনের নতুন অফিসের ঠিকানা চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই কর্মকর্তাকেও শুরুতে দিতে চাননি তিনি। পরে নতুন একটি ফোন নম্বর দেন তিনি। জানান সেই নম্বরটি মারিয়া ফারহিন নামে একজনের। তিনিই নাকি প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার। পাশাপাশি একটি ঠিকানাও দেওয়া হয়।

এরপর সেই কর্মকর্তা ‘নূর’স কিচেনের ‘নতুন ঠিকানা’ “বাসা: ৪৩, সড়ক: ৪, সেক্টর- ১২ তে যান। সেখানে গিয়ে তিনি নিজেকে ‘বিনিয়োগকারী’ হিসেবে পরিচয় দেন।

তখন সেখান থেকে বলা হয়, ‘নূর’স কিচেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে টেন্ডারের মাধ্যমে রোগীদের খাবার সংগ্রহের কাজ পেয়েছে। সেজন্যে প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম আরও গতিশীলতা আনার লক্ষ্যে তারা বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়াতে চাচ্ছেন।

এরপর সেই ‘মারিয়া ফারহিন’ এর নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সর্বনিম্ন ৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।

এরপর ‘নূর’স চিকেন’ এর অন্য একটি নম্বরে ফোন করেন সেই কর্মকর্তা। ‘মুনির’ পরিচয়ে ফোন ধরেন একজন। প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার ‘মারিয়া ফারহিন’ কি না- জানতে চাইলে তিনি তা অস্বীকার করেন। জানান প্রতিষ্ঠানটির নামকরণ করা হয়েছে ‘নূর সাহেব’ এর নামে।

দরপত্রের মাধ্যমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে খাবার সংগ্রহের কাজ পেয়েছেন কি না- জানতে চাইলে তিনি তাও অস্বীকার করেন।

অথচ সেই কর্মকর্তা এর আগে ‘নূর’স কিচেনের’ অফিসে কথা বলার সময় নিজেকে ‘মুনির’ পরিচয় দেওয়া সেই ব্যক্তি দাবি করেন, তারা ঢাকা মেডিকেলে খাবার সংগ্রহের কাজ পেয়েছেন।

পরে সেই কর্মকর্তা ঢাকা মেডিকেল কলেজে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সেখানে খাবার সরবরাহকারীর তালিকায় ‘নূর’স কিচেন’ নামে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই।

ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে দেওয়া তার প্রতিবেদনে পরে এক বাক্যে লেখা হয়, “উক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীদের এই ধরনের আচরণ অবশ্যই নেতিবাচক বার্তা বহন করে।”

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সেই কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা তো স্পষ্ট প্রতারণার চেষ্টা তা বোঝা যাচ্ছে। মাঠ পর্যায় থেকে প্রতিবেদন আসার পর বিষয়টি নিয়ে একটি ইউনিটকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এভাবে যেন টাকা তুলতে না পারে, সেদিকেও সতর্ক দৃষ্টি রাখা হচ্ছে।”

জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (গোয়েন্দা-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ-উত্তর) মহিদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ জানালে তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

ঢাকা মেডিকেলে খাদ্য সরবরাহের কাজ পায়নি নূর’স কিচেন

ঢাকার সবচেয়ে বড় সরকারি হাসপাতালটির পরিচালক মো. নাজমুল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে নিশ্চিত করেছেন যে, তারা কোনো প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে খাবার সরবরাহের দায়িত্ব দেননি। এ বিষয়ে একটি আবেদন চাওয়া হয়েছে শুধু, তবে এখনও দরপত্র প্রক্রিয়ায় অগ্রগতি নেই।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তিনি বলেন, “আজকে টেন্ডার ওপেনিংয়ের লাস্ট ডেট ছিল। কারা পারটিসিপেট করেছে, সেটা কাগজ না দেখে বলতে পারব না। আর গতবার এই নামে কেউ অংশ নিয়েছে বলে আমার মনে পড়ে না।”

বিনিয়োগ নিয়ে দুই রকম কথা

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে খোঁজখবর নেওয়ার পর বক্তব্য পাল্টেছে ‘নূর’স কিচেন। এখনও সেই বিনিয়োগ প্রস্তাবের পোস্টটি আছে পেইজে। তবে যেসব কমেন্ট পড়েছিল, তার সবাই মুছে দেওয়া হয়েছে।

ফোন করা হলে নিজের নাম না জানিয়ে নারীকণ্ঠে একজন বলেন, “ওই বিজ্ঞাপনটি তো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখন আর বিনিয়োগ নিচ্ছি না।”

অফিসে এসে কথা বলা যাবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা এখন আর ওই বিনিয়োগ নিচ্ছি না। আপনি মালিকের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে নম্বর দিচ্ছি।”

পরে আনিস নামে এক ব্যক্তি কলব্যাক করে নিজেকে নূর কিচেনের কর্মী বলে পরিচয় দেন। তিনি বলেন, “আমাদের তো দুই কোটি টাকা ইনভেস্টের দরকার। আমরা একটা টেন্ডার পেয়েছি। বিজ্ঞাপনটাতে তো আমি তিন কোটি লিখেছি। দুই কোটি কি পারবেন?”

কয়েকজন মিলে কোটি টাকা ইনভেস্ট করা যাবে কি না জানতে চাইলে বলেন, “হ্যাঁ, তা করা যাবে। কিন্তু আমার দুই কোটি দরকার। সামনাসামনি এসে কথা বলা যাবে। তবে শনিবারে আসতে হবে। আমি আপনাকে ফোন করব।”

গ্রিন ওভেনের ‘কথার চড়চড়’

‘নূর’ কিচেনের’ তুলনায় ‘গ্রিনওভেন’ নামে ফেইসবুক পেজে বিনিয়োগের তুলনায় রিটার্ন কম দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে। তবে সেটিও দেশের সবচেয়ে বেশি মুনাফা দেওয়া সঞ্চয়পত্রের সর্বোচ্চ হারের দ্বিগুণেরও বেশি।

গ্রিনওভেনের পোস্টে দেওয়া নম্বরে কল করা হলে ফোন ধরে নিজেকে ‘মেহেদী মহসিন’ নামে পরিচয় দেন একজন। জানান, তিনি সেই প্রতিষ্ঠানের বিপণন বিভাগের ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করেন।

সেই পোস্টে অফিসের যে ঠিকানা দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে তার বক্তব্য মেলে না। পোস্টে গ্রিনওভেনের অফিস হিসেবে জানানো হয়, “বাসা: ৯১, ব্লক: এ, রোড: ২, বসুন্ধরা (আবাসিক/এলাকা), ঢাকা।”

তবে সেটি ‘বিসট্রো’ নামে একটি ফাস্টফুডের দোকান বলে জানান মেহেদী।

ঠিকানায় গোলমাল কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আসলে এটা গ্রিন ওভেনের আরেকটি প্রতিষ্ঠান। আমাদের কোম্পানির নাম ‘গ্রিন ওভেন লিমিটেড’। আমাদের দুটি উদ্যোগ আছে। মেইন কোম্পানি ‘গ্রিনওভেন’। একটি প্রতিষ্ঠান, ‘বিসট্রো ফাস্টফুড’, অপরটি ‘সেন্ট্রাল কিচেন’।

মেহেদী মহসিনের দেওয়া তথ্য মতে এ প্রতিষ্ঠানের মালিক দুই জন। চেয়ারম্যান হলেন ‘আনোয়ার আফজাল’ এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ‘আবির আফজাল’। তারা দুই ভাই।

এই পুরো কথোপকথনটা চলে বিনিয়োগকারী পরিচয় দিয়ে।

মেহেদী মহসিন জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আগে যেখানে অ্যাপোলো হাসপাতাল ছিল, তার পাশে সোলমাইদ নামে এলাকায় তাদের সেই ‘সেন্ট্রাল কিচেন’ অবস্থিত। সেখানে রান্না করা খাবার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হয়। ‘বিসট্রো’তেও আনা হয়।

২০১৭ সালে এই গ্রিন ওভেনের জন্ম বলেও দাবি তার।

ছয় বছর বয়সী একটি প্রতিষ্ঠান কেন এভাবে টাকা তুলবে- জানতে চাইলে মেহেদী মহসিন দাবি করেন, কুড়িল ‘৩০০ ফুট এলাকায়’ একটি স্কুলে তারা তিন বছরের জন্য খাবার সরবরাহের অনুমোদন পেয়েছেন। এ জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন।

ওই স্কুলের সঙ্গে গ্রিনওভেনের চুক্তির দাবিটি নিয়ে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের পক্ষ থেকে স্বাধীনভাবে অনুসন্ধান করা সম্ভব হয়নি।

এর ফাঁকে মেহেদী মহসিন আরও দাবি করেন, তারা একটি মোবাইল অপারেটরের অফিসের ক্যান্টিনও পেয়েছেন। সে বিষয়টিও বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম যাচাই করতে পারেনি।

ব্যাংকে যেখানে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পাওয়া যায়, তা না নিয়ে কেন এত বেশি মুনাফা দিয়ে বিনিয়োগ নিচ্ছেন- এমন প্রশ্নে কিছুটা হতচকিত হয়ে যান মেহেদী মহসিন। তিনি বলেন, “ব্যাংকে যেতে চাচ্ছি না। যদি কেউ চায় তো ইনভেস্ট করতে পারে।”

এভাবে বিনিয়োগ নিয়ে বহু প্রতিষ্ঠান তো উধাও হয়ে গেছে। আপনারা যাবেন না, তার নিশ্চয়তা কী?- এই প্রশ্নে তিনি বলেন, “হ্যাঁ, এটা কমন ফেনোমেনন (সাধারণ ঘটনা), আমার মনে হয় কি, একদিন সময় করে ঘুরে যান। সামনাসামনি কথা বললে মনে হয় ভালো হবে।”

এর ফাঁকে তিনিও জানিয়ে রাখেন, বিনিয়োগ করলে তারা চেক দেবেন। এক বছরের চুক্তি করা হবে। কেউ চাইলে তা দুই বা তিন বছর পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। আর মুনাফার টাকা দেওয়া হবে মাসে মাসে।

পরে সেই মেহেদী মহসিনের সঙ্গে আবারও যোগাযোগ করা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে। জানতে চাওয়া হয়, এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিনিয়োগ নেওয়ার আইনি বৈধতা আছে কি না।

জবাবে তিনি বলেন, “কেন যাবে না। আর এটা তো আমরা একা করছি না। বহু মানুষ করছে। এভাবেই অনেক টাকা তোলা হয়।”

আপনারা ব্যাংকে গেলে ৯ শতাংশ সুদে ঋণ পেতে পারেন। সেটা না করে মানুষকে কেন বেশি মুনাফা দেবেন, এই প্রশ্নে জবাব আসে, “আমরা ব্যাংক থেকে নিতে চাচ্ছি না, সেটা আমাদের বিষয়। আমরা সেটা বলতেও চাচ্ছি না। এখন আপনার ইচ্ছা হলে দেবেন। কেউ তো জোর করে আপনার কাছ থেকে বিনিয়োগ চাইছে না।”

এভাবে টাকা তোলা যায়?

বিনিয়োগের বিপরীতে মুনাফার কথা বলে টাকা তোলার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মেজবাউল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আইনে এই ধরনের আমানত গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি আমানত গ্রহণ করে, তাহলে সেটা ব্যাংকিং হয়। আর সেটা আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।”

কিন্তু বিষয়গুলো তো ক্রমাগত ঘটছে- এমন মন্তব্যের জবাবে তিনি বলেন, “বিষয়গুলো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে রিপোর্ট করতে হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে কোনো উদ্যোগ নেবে কি না- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “আমাদের দায়িত্ব কেবল লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে। লাইসেন্স ছাড়া যদি কেউ টাকা তুলে থাকে, তাহলে সেটা দেখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

“আমরা বারবার বলেছি এ ধরনের প্রতারণায় যেন কেউ ফাঁদে পা না দেয়। এর আগে বিভিন্ন জায়গায় এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে। হুন্ডি কাজলসহ আরও নানা ঘটনা পত্রিকায় এসেছে। টাকা হারিয়েছে জনগণ। এরপর নানাভাবে জনগণকে বলা হয়েছে তারা যেন এ ধরনের ফাঁদে পা না দেয়। এ বিষয়ে আসলে তাদেরকেই সতর্ক থাকতে হবে।”